9.6 C
Toronto
সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

‘নাভি বের করা শাড়ি পরা ছবি দে’

‘নাভি বের করা শাড়ি পরা ছবি দে’ - the Bengali Times

পাশ্চাত্যের মি টু আন্দোলনের জোয়ার গত বছরই ভারতের বিনোদন জগতে আছড়ে পড়েছে। বলিউডের পাশাপাশি এবার টালিগঞ্জেও পড়ল সেই ছায়া। গত কয়েক দিন ধরেই মি টু হ্যাশ ট্যাগে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে টালিপাড়া।

- Advertisement -

যৌন নিপীড়নের অভিযোগে উঠে আসছে একের পর এক বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম। সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় এবং খ্যাতনামা বাংলা ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র গায়ক রঞ্জন ঘোষালের ব্যাপারে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের রেশ মিটতে না মিটতেই অভিযোগ উঠল আরেকজন খ্যাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নাট্যজগতে অতি জনপ্রিয় নাম জগন্নাথ বসু তিনি।

গত মঙ্গলবার সংগীতা নামে এক নারী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন বিশিষ্ট ওই শিল্পীর বিরুদ্ধে। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সংগীতা।

ফেসবুকে একটি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় আর রঞ্জন ঘোষালের ভণ্ডামি তো সবাই জানল। জগন্নাথ বসুকে নিয়ে কেউ কিছু বলবে না?

সেই নারীর অভিযোগ, ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল দূরদর্শনের চাকরি এবং নিজের নামের অপব্যবহার করেছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, আরো অনেক মেয়ে ও নারীর সঙ্গে আমি নিজেও ভুক্তভোগী, আমার ২১ বছর বয়সে। দায়িত্ব নিয়ে বলছি।

যদিও খ্যাতনামা এই বাচিক শিল্পীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় দুই ভাগ হয়ে গেছে নেটিজেনরা। কেউ কেউ অবশ্য মেনেও নিতে পারেনি। তবে বাংলা সংস্কৃতিজগতেও যে মি টু আন্দোলনের জোয়ার ক্রমাগত জোরাল হচ্ছে, তা বলাই যায়।

অন্যদিকে সুস্মিতা প্রামাণিক নামে এক তরুণী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘আমি তখন ষোল। স্কুলে পড়ি। সিধেসাধা সহজ টাইপ। জীবনের প্রথম প্রেমও তখন সবে সবে হচ্ছিল প্রায়। ফেসবুক জগতে পা রেখেছি সেই বছরই। বড় বড় মানুষদের সান্নিধ্য পেলে ভাবতাম বর্তে গেলাম বুঝি! সেরকমই এক সময় তাঁর সাথে আলাপ। আমি যাকে বলে গদগদ, আহ্লাদিত, গর্বিত প্রাণ। তিনি আমার প্রশংসা করলেন। নিজে থেকে ফোন করেই দরাজ গলায় গান ধরলেন। আমায় ভালোবেসে নাম দিলেন বাবুই। তাঁর নাম হলো মশাই। সে এক অন্য ব্যাপার। বোঝাতে পারব না। এদিকে তাঁর ফোন দিনেরাতে পেয়ে পেয়ে আমার যাকে বলে মাটিতে পা পড়ছে না। তিনি আমার ছবি চাইছেন বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে, নাভি বের করা শাড়ি পরা ছবি, বাথরুমের ভেতর থেকে ছবি, শর্টস পরা ফুল লেংথ ছবি। কী ভালোবাসার উন্মাদনা বলুন!

‘নাভি বের করা শাড়ি পরা ছবি দে’ - the Bengali Times

আমি বুঝতাম না প্রতিবাদ, তাই ইগনোর করেছিলাম জাস্ট। আমার পরিবার আমায় প্রতিবাদ করতে শেখায়নি। আমি নিজে প্রতিবাদ করতে শিখেছি। আর এই শেখায় আর কারো ক্রেডিট নেই। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মি টু শুরু হয়নি। আমিও ভুলে গেছি। ভুলেই গেছিলাম। আজ নতুন করে মনে করালো কয়েক বন্ধু যাদের বলেছিলাম সবটা। যারা জানত। যারা বলল আমার সবাইকে জানানো উচিত।

রঞ্জন ঘোষাল, মহিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা একজন মলেস্টার। যারা তার বিরুদ্ধে লিখেছেন, তারা বহুদিন আগের কথা লিখেছেন। ভেবেছেন হয়তো উনি বদলে গেছেন। কিন্তু না , উনি বদলাননি। উনি এখনো একটা অমানুষ রয়ে গেছেন। সাথে পিডোফিলও। রঞ্জন ঘোষাল হইতে সাবধান। উনি প্রতিভাবান হতেই পারেন কিন্তু উনি নিঃসন্দেহে একটি খারাপ মানুষ। আর তার মুখোশ এবার খুলে দেওয়া উচিত, নয়তো এ সময় আর আসবে না।

বাকিরা যা লিখেছে তার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ফলে যারা বিশ্বাস করেননি তাদের বলছি, আমার কাছে প্রমাণ রয়েছে। দেখে নিন।

পুনশ্চ- জীবনে সেক্সুয়ালি হ্যারাস বহুবার হয়েছি। ততবার মি টু পোস্ট দিলে হয়তো আলাদা বই হয়ে যাবে। কিন্তু আজ এখন সেসব অপ্রয়োজনীয়। আর ভীষণভাবে স্ক্রিনশট পোস্টেরও বিরোধী। কিন্তু এটার প্রয়োজন ছিল। আমার ফ্রেন্ডলিস্টের বহু মানুষ ওর ফ্যান। তাদের এগুলো দেখতে অনুরোধ করব।’’

এদিকে, আদেশা সরকার নামে এক নারী আজ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের পর রঞ্জন ঘোষাল এবং মলয় মিত্র। (এখুনি জানলাম, জগন্নাথ বসুও।) মলয় মিত্রের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা যথেষ্ট ভয়ংকর। ধর্ষণের মামলা দাঁড়ায়। অভিযোগকারিনী আইনের পথে হাঁটলে তবেই কিছু হবে, যদিও। এই ঘটনাগুলো যদিও টিপ অফ দ্য আইসবার্গ, নিঃসন্দেহে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি সেটা।

বর্তমান পরিস্থিতি বড়ই সঙ্গীন। চারিদিকে আতংকের আবহাওয়া। সকলে নিজ নিজ অতীত হাতড়াতে ব্যস্ত। কোথাও কোনো ‘ফাঁক’ থেকে যায়নি তো? কেউ কেউ তো সেই আতংক ব্যক্তও করে ফেলছেন। ‘মানে… অ্যাতদিন তো এসব ছিল না… কী করে জানব… কখনো কিছু বলেটলে ফেলেছি কিনা…’। আফটার অল, বাঙালির শিল্পসংস্কৃতিতে নারীবিদ্বেষের অপর নাম এস্থেটিক ফ্রিডম। সেই সংস্কৃতির সন্তানদের এ ভয় তো স্বাভাবিকই।

ওয়েল, ওয়েল।

‘স্ত্রী’ ছবিটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার। প্রফেটিক সিনেমা। সাবধানে থাকবেন, জনাব। ধর্ষিতার স্কার্টের ঝুল এতদিন যারা মেপেছেন, তারা তো খুবই সাবধানে থাকুন। বরং বাড়ির দেওয়ালে লিখে রাখুন, ‘ও স্ত্রী, রক্সা করনা’।’’

যদিও এ প্রসঙ্গে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি বাচিক শিল্পী জগন্নাথ বসু।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles