সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে সহিংসতায় বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তার নাম মারুফ হোসেন অন্তিক।
সোমবার রাতে সাভারের আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে সহিংসতা হয়। এতে বিজিবি সদস্য নায়েক রুবেল হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় ৩০ নভেম্বর ৯৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করে কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন প্রিসাইডিং অফিসার। মামলাটির ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি মারুফ হোসেন ওরফে অন্তিককে গ্রেফতার করে।
তিনি জানান, গ্রেফতার মারুফের বাবা মোসাদ্দেক হোসেন গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ১৯ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে মারা গেলে উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান হন মারুফ। এবারও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। র্যাবের দাবি, গ্রেফতারকৃত মারুফ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাকে এবার জিততে গড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রায় সব ভোট প্রয়োজন ছিল। যে কোনো মূল্যে এই কেন্দ্রের প্রায় সব ভোট তিনি কেটে নিতে চেয়েছিলেন। এজন্য দলবল নিয়ে তিনি পেশিশক্তি ব্যবহার করবেন বলে পরিকল্পনা করেন।
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটের দিন দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন আনুমানিক বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ২০ থেকে ৩০ জন সমর্থক নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জোর করে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করার চেষ্টা করে মারুফ। এ সময় ভোট কেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিতে চেষ্টা করলে তারা তাকে গালিগালাজসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরবর্তীতে প্রিসাইডিং অফিসার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বিষয়টি মোবাইলে জানালে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গণনা শুরু করা হয়। কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৯৭১ ভোটের মধ্যে গ্রেফতারকৃত প্রার্থীর পক্ষে ২ হাজার ৩৩৬ ভোট এবং অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা যথাক্রমে- ৭০টি ও ৬টি ভোট পায়। তবে অন্য আটটি কেন্দ্রের ফলাফলে মারুফের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জোনাব আলী বিজয়ী হন।’
র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, হেরে গিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মারুফ হোসেন। নিজের পক্ষে ফল আনার জন্য তিনি দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সম্পূর্ণ ভোট তার পক্ষে প্রদানের জন্য প্রিসাইডিং অফিসারকে আটকে রেখে চাপ দিতে থাকেন। প্রিসাইডিং অফিসার অপারগতা প্রকাশ করলে মারুফসহ তার প্রায় শতাধিক সমর্থক বিভিন্ন ধারাল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার, অন্যান্য নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ও কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করেন। এতে অনেকেই আহত হয়। এ সময় নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত সরকারি যানবাহন ও নির্বাচন কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ওই দিন আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিজিবি টহল দল সেখানে উপস্থিত হলে গ্রেফতারকৃত মারুফ হোসেন অন্তিক ও তার সমর্থকরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। বিজিবি সদস্য রুবেলকে তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধরক মারধর করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নায়েক রুবেল ঘটনাস্থলেই মারা যান। আরও অনেকেই গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর প্রধান আসামি মারুফ হোসেন নীলফামারী জেলার জলঢাকায় কিছুদিন পলাতক ছিলেন। এরপর তিনি গত ৩০ নভেম্বর ঢাকায় আসেন। ঢাকার আশুলিয়ায় এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মঈন।
সূত্র : যুগান্তর