5.6 C
Toronto
সোমবার, মার্চ ২৪, ২০২৫

বিপ্লব কখনো মরে না

বিপ্লব কখনো মরে না - the Bengali Times
আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানে দেশের জন্য জীবন দেয়া হাজারো সন্তান হারানোর কষ্ট বাংলাদেশ কখনও ভুলবে না যতদিন বাংলাদেশের ইতিহাস থাকবে ওঁরা বেঁচে থাকবে

বিপ্লব যেমন মুখ খুলতে জানে, তেমনি মুখ বন্ধ রাখতেও জানে।

সন্তানের মৃত্যুর পর সময়ের সাথে মা-বাবার শান্ত হয়ে আসার অর্থ এই না যে তারা কষ্ট ভুলে গেছে। জীবনটা ঠিকই চলতে থাকে, বুকে কষ্ট নিয়েই সমাজে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।

- Advertisement -

আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানে দেশের জন্য জীবন দেয়া হাজারো সন্তান হারানোর কষ্ট বাংলাদেশ কখনও ভুলবে না; যতদিন বাংলাদেশের ইতিহাস থাকবে, ওঁরা বেঁচে থাকবে। তাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে বাংলাদেশের কোটি মানুষকে শুধু নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্নই দেখায়নি, স্বপ্ন বাস্তবয়নের পথ সুগম করে গেছে।

পরাজিত শক্তি বিপ্লবীদের রাজাকার বলুক, বা যা খুশি বলুক; তাতে কিছু যায় আসে না। অপবাদ দেয়া তাদের  ধর্ম। শাখামৃগরা মগডালে বসেই শুধু চিল্লাবে। নিচে নেমে ফাইট দেবার মতো সাহস কিংবা শক্তি তারা একাত্তরের পর আজ অবধি অর্জন করতে শেখেনি।

মনে রাখতে হবে, ইউনূসকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না।

আগে যারা হাসিনার অপকর্ম নিয়ে মোটেই চিন্তিত ছিল না, মুখ ফুটে প্রতিবাদ তো দূরে থাক, তোষামোদীতে ব্যস্ত ছিল; তারা এখন সামান্য এদিক ওদিক হতে দেখলেই বলে- “ইন্টারেস্টিং”! আরও ইন্টারেস্টিং  ব্যাপার হলো তারা আগে যাদেরকে গুম বা হত্যা করতো; সেই ভিক্টিমদেরকেও তোষামোদি করে কমেন্ট করে- “সহমত”।

তাই সাবধান!

ষোলো বছর অনৈতিকভাবে খাই-দাই করেও যাদের লোভ মেটে না, তাদের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব। আর ভাই-বোনেরা; আপনারা যারা মনে করেন পতিত শক্তিকে সুযোগ দেয়া উচিত, তারা ভালো হয়ে যাবে; আপনাদের এই সহজ সরল অদূরদর্শী চিন্তা-ভাবনাকে প্রশ্রয় দেয়ার অর্থ তাদের আবার পূণর্বাসন করা। বিপ্লবে মধ্যমপন্থীদের কোনো স্থান নেই।

“সবার রাজনীতি করবার অধিকার আছে”- কথাটা ভুল। খুনি-ডাকাতদের রাজনীতি করবার কোনো অধিকার নেই। নিষ্ঠুরতম মানুষ হচ্ছে যারা নিজের দোষ স্বীকার করে না। ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা। এদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি ডেভেলপ্ড না। তারা এখনও তীর্থের কাকের মতো, বুক ভরা আশা নিয়ে ভারতের দিকে চেয়ে আছে; হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় বসাতে।

হায় দূষিত স্বপ্ন!

মনে রাখতে হবে- ড. ইউনূস জাদুর লাঠি হাতে আসেননি। তিনি চেষ্টা করছেন, করেও যাবেন। ভুল-ভ্রান্তি হচ্ছে, হবে; শুধরে নিতে হবে। তিনি অন্ততঃ হাল ধরে দেশটাকে কান্ডারীবিহীন জাহাজকে অথৈ সাগরে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। ছয় মাসেই যদি দেশ ঠিক করা যেত, তবে পাঁচ বছরের জন্য ভোট দিয়ে সরকার গঠন করা লাগতো না; ছয় মাস পরপর নির্বাচন দেয়া লাগতো।

আমাদের দেশটা ছিল হাইজ্যাকড হওয়া যাত্রীবাহী জাহাজ। হাইজ্যাকাররা নিয়ন্ত্রণ করেছিল ষোলোটা বছর। কেউ প্রতিবাদ করলেই হতে হতো গুম, নয়তো  স্হান হতো আয়নাঘরে।

তারপর, সুপ্ত আগ্নেয়গিরি জীবন্ত হয়ে উঠে!

বছরের পর বছর মনের মধ্যে জমানো ক্ষোভের লাভার  উদগীরণ শুরু হয়। বিপ্লবী যাত্রীরা এক হয়ে হাইজ্যাকরদের পাকড়াও করে ফেলে।

শুরু হলো আরেক যন্ত্রণা।

হাইজ্যাকারদের রেখে যাওয়া চাটুকার বংশধরেরা উপহাস-ঠাট্টা শুরু করে দিলো। সেই দূর্বল ইন্জিন চালিত জাহাজ মধ্য সাগর থেকে ফিরতে লাগবে কমপক্ষে এক মাস। অথচ হাইজ্যাকার বংশধরেরা কয়েকঘন্টা পর থেকেই বলা শুরু করতে থাকে- “তীর কই? ঘাটে ভিড়ছে না কেন জাহাজ? নতুন ক্যাপ্টেন কিচ্ছু পারে না, কিচ্ছু পারে না..”

আমরা বর্তমান ক্যাপ্টেনের ওপর পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপণ করি। সরকারের মধ্যে পলাতক হাসিনার এজেন্ট গিজগিজ করছে। এতসব দেখেও যদি তারা প্রশ্ন তোলে ইউনূস কেন পুরোপুরি কন্ট্রোল করতে পারছে না, তাহলে তাদের বুদ্ধির দৌড় সম্পর্কে বিরাট সন্দেহের অবকাশ আছে।

মনে রাখতে হবে- তারা ড. ইউনূসকে ২০২৪ এর অগাস্ট থেকে না, সেই কুড়ি বছর আগ থেকেই দুচোখে দেখতে পারে না; নোবেল পাবার পর থেকে..

বিপ্লব কখনো মরে না। মাঝেমধ্যে চুপ থাকে।

যখন জাগে, স্বৈরাচারের শেকড় উপড়ে তবে ছাড়ে!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles