2.2 C
Toronto
শনিবার, মার্চ ২২, ২০২৫

পরীমণির পায়ে শিকল পরানো হলো: তসলিমা নাসরিন

পরীমণির পায়ে শিকল পরানো হলো: তসলিমা নাসরিন - the Bengali Times
পরীমণি ও তসলিমা নাসরিন

অভিনেত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ঘটনায় এক ব্যবসায়ীর ২০২৪ সালে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়না জারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়ে যান পরীমণি। তবে বিতর্কের রেশ এখানেই থামেনি! তসলিমা নাসরিনের অভিযোগ ‘নারী বলেই পরীকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। তার পায়ে শিকল পরানো হচ্ছে’।’

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গর্জে উঠেছেন তসলিমা নাসরিন। তার পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

- Advertisement -

জিতে গেল হেফাজতে ইসলামি, এলাকার সব মসজিদ মাদ্রাসার পরজীবী মোল্লারা, জিতে গেল নারীবিদ্বেষ। টাঙ্গাইলে পরীমণির যাত্রাভঙ্গ করা ছাড়াও পরীমণির বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরীমণি আওয়ামী লীগের কর্মী নন, তিনি বরং হাসিনা পতনের আন্দোলনে আর সবার মতো সমর্থন জানিয়েছিলেন। ২৪-এর স্বাধীন দেশে তাঁর পায়ে কেন শিকল পরানো হচ্ছে, তাকে কেন মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে? এর একটিই কারণ, তিনি নারী।

জুলাই আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল জামাত-শিবির, সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুত তাহরীর, এবং সমস্ত ইসলামী, জিহাদি, সন্ত্রাসী দল। এরা নিঃসন্দেহে সকলেই ভয়ঙ্কর নারীবিদ্বেষী। তারা, আজ বা কাল নারীর বিরুদ্ধে যাবেই, সে নারী তাদের মিছিলে থাকলেও, হাসিনা সরকারের পতনের জন্য তাদের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিলেও। ইসলামের নীতি আদর্শ জিহাদিরা মাথা পেতে বরণ করেছে। হাসিনাকে তাড়ানোর পেছনে তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, দেশে ইসলাম কায়েম করা, নারী নেতৃত্বের ইতি টানা, নারীকে ঘরবন্দি করা। স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ দূর করা তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল না, কারণ তারা নিজেরাই এখন স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। সারা দেশে খুন ধর্ষণ রাহাজানি, আগুন, লুণ্ঠন, জমি দখল ইত্যাদি অরাজকতা অবাধে চলছেই, সরকার ফিরেও তাকায় না। বরং ইসলামী বহুবিবাহের পক্ষে আইন তৈরি করা হয়েছে, এরপর আইন করে বাল্য বিবাহের অত্যাচারকে বৈধ করা হবে, ইতিমধ্যে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা মুছে ফেলা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকা মানে ধর্মীয় আইন থাকা, ধর্মীয় আইন থাকা মানে পুরুষের আধিপত্য থাকা আর নারীর বিরুদ্ধে বিকট বৈষম্য থাকা।

তিরিশ বছর আগে যখন ইসলামী দলগুলো আমার লেখা পছন্দ হয় না বলে আমার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল, আমার শাস্তি দাবি করেছিল, আমার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল, তখন সরকার গণতন্ত্র বিরোধী, বাকস্বাধীনতাবিরোধী নারীবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে না গিয়ে, আমি, যে আমি মানবতার পক্ষে লিখি, আমার বিরুদ্ধে গিয়েছিল। শরিয়া আইনের অধীনে নারীর কোনও স্বাধীনতা বা অধিকার থাকবে না। এই যে পরীমণির পায়ে আজ প্রকাশ্যে শিকল পরানো হয়ে গেল, এখন আর জনে জনে শিকল পরাতে হবে না। প্রতিটি নারীর পায়ে পরানো হয়ে গিয়েছে অদৃশ্য শিকল। কোথাও আর কিছু উদ্বোধন করতে কোনও নারীকে ডাকতে ভয় পাবে উদ্যোক্তারা। কোনও নারী শিল্পীকে নাচগানের জন্য, যাত্রা-নাটকের জন্য ডাকবে না আয়োজকরা। ডাকলেও হামলার ভয়ে নারী শিল্পীরাও মঞ্চে উঠতে ভয় পাবে। নারীদের পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles