-0 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

গলব্লাডারে পাথর কেন হয়? জানুন লক্ষণ ও প্রতিকার

গলব্লাডারে পাথর কেন হয়? জানুন লক্ষণ ও প্রতিকার - the Bengali Times
মেয়েদের তুলনায় কম আক্রান্ত হলেও পুরুষরাও এই অসুখের বাইরে নয়

রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে বা বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে পিত্তরস ক্ষরণে বাধা পরে। তখন সেই পিত্তরস পিত্তথলিতে জমে পাথর তৈরি করে।

নারীদের ক্ষেত্রে এই অসুখের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। উপোস করা, অসময়ে খাওয়া, ডায়াবেটিক, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে নেই, মেনোপজের পর হরমোন রিপ্লেসমেন্টে অভ্যস্ত বা এক সময়ে প্রচুর গর্ভনিরোধক বড়ি খেয়েছেন, এমন নারীদের গলব্লাডার স্টোনের আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেকটা। জীবনের নানা পর্যায়ে, এমনকি গর্ভাবস্থাতেও হরমোনের যে ওঠাপড়া হয় সে কারণেও নারীদের গলব্লাডারে পাথর জমার প্রবণতা বাড়ে।

- Advertisement -

মেয়েদের তুলনায় কম আক্রান্ত হলেও পুরুষরাও এই অসুখের বাইরে নয়। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, হরমোনাল অসুখ, কোলেস্টেরলের বাড়াবাড়ি পুরুষদের ক্ষেত্রেও গলব্লাডারে পাথর তৈরি করতে পারে। দু’টি খাবারের মাঝে অনেকক্ষণ বিরতি থাকলেও এই সমস্যা বাড়ে।
গলব্লাডারে পাথর হলে সাধারণত পেটের ওপরের অংশে ডান দিকে ব্যথা হয়। তবে এটি ছাড়াও থাকে আরও কিছু উপসর্গ। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে ওষুধেই এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। নইলে অস্ত্রোপচার করতে হয়।

আরও পড়ুন: সু চির বিরুদ্ধে জান্তার আরও অভিযোগ

রোগের লক্ষণ:
১. এই অসুখের মূল লক্ষণ পেটের ডান দিকে ব্যথা, যা ছড়িয়ে পড়ে ডান কাঁধ পর্যন্ত। পেটের ওপরের অংশে ডান দিকে ব্যথা হলে সাবধান হন, খেয়াল করুন সেই ব্যথার বিস্তার। ডান কাঁধ পর্যন্ত ছড়ালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
২. এই অসুখে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। পেটে ব্যথার সঙ্গে এমন জ্বর এলে তাই সাবধান।
৩. একটু ভারী খাওয়াদাওয়া, বিশেষ করে মাংস ও তেলজাতীয় কিছু খেলে ব্যথা বাড়ে, সঙ্গে বমি হয় ঘন ঘন।
৪. অনেক সময় এই অসুখে আক্রান্তরা হেপাটাইটিসের শিকার হন। তাই পেটে ব্যথার সঙ্গে হেপাটাইটিস দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যান।
গলব্লাডারে পাথর হলে অপারেশন ছাড়া যেমন গতি নেই, অপারেশন-পরবর্তী জীবনেও খাবারে একটু বিধিনিষেধ থাকে।
জেনে নিন কি কি বিষয় মেনে চলবেন:
১. লো ক্যালোরির সুষম খাবার খান। দরকার হলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
২. খাবারে যেন বৈচিত্র্য থাকে। রোজ এক ধরনের খাবার না খেয়ে সব রকম খাবার মিলিয়ে মিশিয়ে খান।
৩. ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়। যেমন, শাকসবজি, ফল, হোল-গ্রেন তথা ব্রাউন রাইস, আটা–জোয়ার–বাজরা ইত্যাদির রুটি, ব্রাউন ব্রেড, খোসাওলা ডাল ইত্যাদি।
৪. হজম করতে পারলে দিনে ২–৩ সার্ভিং লো ফ্যাট দুধ বা দুধে তৈরি খাবার খান।
এক সার্ভিং–এর মানে হল ২৫০ মিলি দুধ বা এই পরিমাণ দুধে বানানো ছানা, ৫০ গ্রাম চিজ, ১৭৫ মিলি ইয়োগার্ট বা টক দই। ইয়োগার্টে ২ শতাংশের কম ফ্যাট থাকতে হবে। লোয়ার ফ্যাট চিজে দুধের প্রোটিন যেন ২০ শতাংশের কম থাকে। ক্রিম না খাওয়াই ভাল।
৫. দিনে ২–৩ সাভিং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান।
এক সার্ভিং: ৭৫ গ্রাম মাছ–মাংস বা চিকেন, দুটো ডিম, ৩/৪ কাপ বিনস–শুকনো মটরশুঁটি বা মুসুর ডাল, ১৫০ গ্রাম বা ৩/৪ কাপ টোফু, ২ টেবিল চামচ পিনাট বাটার, সিকি কাপ বাদাম।
৬. মাংস বা চিকেনের যে অংশে চর্বি কম থাকে সেই অংশ খান। চিকেনের গায়ের ওপরের পাতলা চামড়া ছাড়িয়ে নেবেন অবশ্যই। মাঝেমধ্যে নিরামিষ প্রোটিনও খাবেন।
৭. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখুন পাতে।
৮. রোজ কিছু না কিছু উপকারি ফ্যাট খান। বাদাম, মাছের তেল, অ্যাভোক্যাডো, অলিভ অয়েল তো খাবেনই, ঘি–মাখন বা অন্য তেলও পুরোপুরি বাদ দেওয়ার দরকার নেই। কারণ ফ্যাট না খেলে গল-স্টোন হয় না- এমন নয়। উপকারী ফ্যাট না খেলে বরং নানা রকম সমস্যা হতে পারে। তবে তা যেন মাত্রা না ছাড়ায়। দিনে ২–৩ টেবিল চামচ বা ৩০–৪৫ মিলি–র বেশি তেল খাবেন না। সিকি চামচ ঘি–মাখন খাবেন সপ্তাহে দু’–তিন বার। সপ্তাহে ৩–৪ বার ২৫ গ্রামের মতো নুনহীন সেঁকা বাদাম খাবেন।
৯. চিনির কোনো উপকার নেই, বরং অপকার আছে বিস্তর। কাজেই সব রকম মিষ্টি স্বাদের খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। ব্যতিক্রম ফল। তবে ফলের রস চলবে না একেবারেই। প্রতি দিন দু’টো ফল খান চিবিয়ে।
১০. ক্যাফিনসমৃদ্ধ খাবার বা পানীয় কম করে খান। দিনে বার তিনেক ২৫০ মিলি কফি খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় তা নেমে আসবে দু’কাপে। চকোলেট বা নরম পানীয়র ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন। চা একটু বেশি খাওয়া যায়। তবে তাও যেন মাত্রা না ছাড়ায়।
জীবনযাপন:
– ওজন যাতে না বাড়ে সে দিকে খেয়াল রাখুন। বেড়ে গেলে রাতারাতি কমানোর চেষ্টা না করে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে সময় নিয়ে কমান।
– লো ক্যালোরির সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন যাতে ওবেসিটি, ডায়াবিটিস ও হাই কোলেস্টেরলের প্রকোপ কম থাকে।
– চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে গর্ভনিরোধক বড়ি খাবেন না। ঋতুবন্ধের পর নিতান্ত প্রয়োজন না হলে হরমোন থেরাপি করানোর দরকার নেই।
– মধ্যবয়সের মানসিক চাপ ও তার হাত ধরে ভুলভাল খাওয়া ও ওজন বৃদ্ধির সমস্যা এড়াতে দরকার রিল্যাক্সেশন থেরাপি। নিয়মিত ব্যায়াম, যোগা, মেডিটেশন ও কোনও ভাল লাগার কাজের চর্চা সে কাজে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করে হলেও মানসিক চাপ এড়ানোর চেষ্টা করবেন।
– ভালো করে ঘুমোতে হবে অবশ্যই।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles