7.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

ক্যানাডাতে এ সময়ে তুষার না পড়াটাই অস্বাভাবিক

ক্যানাডাতে এ সময়ে তুষার না পড়াটাই অস্বাভাবিক - the Bengali Times

আব্বু কোই যাও?
– হাঁটতে
– কালকে যাও? স্টোর্ম হচ্ছে!
– ধুর বোকা, সামান্য একটু হাঁটতে গেলেও তুই এতো টেনশন করিস কেন? তাছাড়া তোর মায়ের ওষুধ আনতে হবে
– কতক্ষণ লাগবে?
– এই ধর যাওয়া-আসা মোট বিশ মিনিট, আর আর ওষুধ নিতে পনেরো মিনিট; টোটাল প্রায় চল্লিশ মিনিট
– তারমানে এক ঘন্টারও বেশি (পাশ থেকে ছেলেটা হেসে বলে উঠলো)

- Advertisement -

মেয়েটা আমাকে একদম বাইরে যেতে দিতে চায় না।
বের হবার সময় বরাবরের মতো আমাকে বুকে জড়িয়ে চুমু খেলো। ভাবসাব ঠিক যেন কয়েকদিনের জন্য বিদায় দিচ্ছে বাবাকে।

আর আমরা ছোটকালে করতাম ঠিক উল্টোটা। বাড়ির সামনে আব্বার মোটরসাইকেলের আওয়াজ পেলে সবাই চুপচাপ। আমরা ঠিক নাকি আব্বাদের প্রজন্মই ঠিক ছিল; এসব কখনোই যুক্তি দিয়ে বিচার করা যাবে না। এর সাথে মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ, সামাজিক পরিস্থিতি, সময়ের প্রয়োজন জড়িত। মা-বাবার সাথে সন্তানের, মানুষে-মানুষে ভালোবাসার প্রকাশও সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল।

বাইরে বের হয়ে মনটা খুশি হয়ে উঠলো।
স্নো পড়া শুরু হয়েছে অনেকদিন পর। জিরো ডিগ্রির মতো; তাই রাস্তা প্যাচপ্যাচে কাদার মত। বেশ পিছলা। অফিসের ওয়ার্কিং সু পরে এসেছি বিধায় সমস্যা হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে প্রকৃতির ভিন্নতা ভালো লাগে। এদেশের মানুষের আলোচনার সাবজেক্ট কম। তাই প্রকৃতি গরম বা ঠান্ডা; এ নিয়ে স্মুদি বা কফিতে চমুক মেরে আড্ডা বেশ জমে উঠে।

রেক্সল ফার্মেসিতে ঢুকে কাউন্টারে গিয়ে বললাম- আমার গিন্নির ওষুধ শেষ, কয়েকদিনের জন্য রিফিল দিতে পারবা? আমরা শীঘ্রই আবার ডাক্তার দেখাবে টরন্টো গিয়ে, অটোয়ায় ফ্যামিলি ডাক্তার এখনো পাইনি। তখন নতুন প্রেসক্রিপশন আনবো
– এক সপ্তাহেরটা দিচ্ছি
– পারলে দু-সপ্তাহের দাও। আর আমার প্রেসারের ওষুধও প্রায় শেষ
– আজ নিবা না কাল?
– আজই দিও পারলে
– পনের মিনিট লাগবে।

এই পনেরো মিনিট কাটাতে দোকানে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলাম। ডাক্তারের করা বেশিরভাগ প্রেসক্রিপশন মেডিসিন শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে ওষুধ নিতে হয়। তবে রিকোয়েস্ট করলে টেম্পোরারিলি কিছুদিন চালানোর মতো ওষুধ দিবে। আজকের চাইনিজ ভদ্রমহিলা খুব সাবধানী; ওষুধ শেষ হয়ে গেছে শুনে নেক্সট কবে ডাক্তার দেখাবো সেটা কনফার্মড হয়ে গুনে গুনে শুধু সেই কয়দিনের ওষুধ দিলো।
সাবধান হওয়া ভালো।

বের হবার সময় ক্যাশে দাঁড়ানো লোকটা বলল- খুব পিছলে, সাবধানে হাঁটবা। যদিও আমি একটু আগে লবন ছিটিয়েছি এন্ট্রেন্স এর আশপাশে
– অবশ্যই সাবধানে হাঁটবো, ধন্যবাদ
– কে বলবে, শীতকাল শেষ হয়েছে একমাস আগে!
– আমি অবশ্য আজকের ওয়েদার এঞ্জয় করছি। আচ্ছা, ভাল থেকো
– তুমিও। গুডনাইট!
এদেশের লোকজনের সাথে আমি যেচে কথা বলি। ভালো লাগে। ভদ্র, অপরিচিত মানুষ যখন আন্তরিকভাবে কথা বলে, সেই ভালোলাগা অন্যরকম।

বাসায় ফিরতে থাকি।
আসার সময় পয়তাল্লিশ ডিগ্রি এঙ্গেলে তুষার পড়ছিল। এখন পড়ছে প্রায় ত্রিশ ডিগ্রিতে। তারমানে বাতাসের গতি, ঝাপ্টা আরও বেড়েছে। চারিদিক সাদা হতে শুরু করেছে। ঠান্ডাও বেড়ে যাচ্ছে; মাইনাস তিন-চারে নেমে গেছে। পাতলা প্যান্ট, একটা হাফ হাতা গেঞ্জির উপর ফুলহাতা গেঞ্জি, তার ওপরে পাতলা রেইনজ্যাকেটে আর শীত যাচ্ছে না। ভুল হয়েছে, ভারী কিছু পরা লাগতো। ঝড়ের কারণে তুষারের ভারী কণাগুলো তীব্র গতিতে গালে, মুখে সুচালো পিনের মতো বিঁধছে। মুখমন্ডল জ্বালাপোড়া করছে।

এপ্রিল মাসের কেবল শুরু। ক্যানাডাতে এ সময়ে তুষার না পড়াটাই অস্বাভাবিক। ঠান্ডা আর ভাল্লাগে না। আগে লাগতো। বয়সের কারণেই হয়তো। মানুষের যখন কোনো কিছুতে বিতৃষ্ণা চলে আসে তখন সেটা স্বাভাবিক হলেও অসহ্য লাগে, কয়েকগুন বেশি বিরক্তি হয়ে ধরা দেয়।
বায়াসনেস কাজ করে।

বাসার কাছাকাছি আসতেই দেখি এক ঝাঁক খরগোশ লাইটপোস্টের নিচে, মাঠের পাশে লাফালাফি করছে। একটা ভীতু খরগোশ আমাকে দেখে হরিনের মতো লাফিয়ে ছুটে পালাচ্ছে অনেক দূরে। এরা আনন্দে আছে না কষ্টে আছে তা বুঝবার উপায় নাই। খাবারের খোঁজে, নাকি তারাও আনন্দ করতে বের হয়? বাসায় ফিরলে নিশ্চয়ই তাদের বাচ্চাকাচ্চা খুশি হয়? পাখির বাচ্চাদের মতো? খুব অবাক লাগে যখন দেখি মাইনাস বিশেও কাক উড়ে আকাশে। অটোয়ায় কাকের ছড়াছড়ি। মাঝে মধ্যে দেখি হাজার হাজার কাকের ঝাঁক আকাশ কালো করে উড়ছে। তীব্র ঠান্ডায় এরা খায় কী?
নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী যেমন খাদ্যের সন্ধানে বের হয়, মানুষও মুলত ঠিক একই কারনে বাইরে বের হয়। চাকরি, ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য ঐ একটাই।

এখন বাসায় ঢোকামাত্র আমার খরগোশের বাচ্চাটা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকবে কিছুক্ষন। পাগলিটা কি আর বড় হবে না?
আর বাইরে থাকার মতো পরিস্থিতি নাই। বাতাসে মাথার ক্যাপ আর হুডি উড়িয়ে নিয়ে যাবার দশা, সারা শরীর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবার উপক্রম। চল্লিশ মিনিট আগের ভালোলাগা এখন আতংক হয়ে ধরা দিচ্ছে। বাতাস ঠেলে দ্রুত পা চালানোর চেষ্টা করি।
একটু উষ্ণতার জন্য।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles