নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার চৌমুহনীতে মন্দিরে হামলা ও লুণ্ঠনের ঘটনায় মন্দিরের লুণ্ঠিত পূজার সামগ্রীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তারা হলেন- মো. মনির হোসেন ওরফে রুবেল (২৮), জাকের হোসেন ওরফে রাব্বি (২০), মো. রিপন (২১) ও (৪) মো. নজরুল ইসলাম ওরফে সোহাগ (৩৬)।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজার বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করে জনসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার চৌমুহনী এলাকায় কিছু দুষ্কৃতিকারী শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দিরে হামলা ও লুটতরাজ চালায়।
এই ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ঘটনায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। পরে এই ঘটনার হামলা ও লুটকারীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর আভিযানিক দল ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ নভেম্বর রাতে রাজধানীর ডেমরা, নারায়ণগঞ্জের বন্দর এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ হতে চৌমুহনীর মন্দিরে হামলা এবং লুটপাটে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
ওই সময় তাদের নিকট হতে মন্দিরের লুণ্ঠিত পূজার সামগ্রী সাতটি পিতলের তৈরি প্রতিমা/মুর্তি, তিনটি সিদুঁর কৌটা, ২০টি বাতির কৌটা, দুটি দ্রুপতি, পাঁচটি পঞ্চ বাতির দানি, দুটি হাত ঘণ্টা, ১০টি স্ট্যান্ডসহ মুছি বাতি, একটি কুলা, পাঁচটি পঞ্চ পাতার পল্লব, এক টাকা মূল্যের ৫৫০টি বাংলাদেশি মুদ্রার কয়েন, ১১টি গ্লাস, পাঁচটি বাসন, সাতটি ঘটি, চারটি ইমিটিশনের গলার হার ও দুটি মালা, ছয়টি ইমিটিশনের হাতের বালা, ছয় জোড়া ইমিটিশনের কানের দুল, একটি ইমিটিশনের চেইন, ১২টি বিভিন্ন রকমের চুল বাঁধার কাঁকড়া, ছয়টি নেইল পলিশ, এক সেট পিতলের অলংকার, দুটি মঙ্গল সূত্র, একটি আগরবাতি দানি, একটি পিতলের ডাব, একটি ওম, দুটি কাসন, এক সেট আকমন পাত্র, নগদ ৩০৫ টাকা এবং ৪০টি পিতলের তৈরি বিভিন্ন আইটেমের পূজা কার্যে ব্যবহৃত ভাঙ্গা/অসম্পূর্ণ অংশ উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়াও মন্দিরে হামলায় অংশগ্রহণের সময় মো. মনির হোসেন ওরফে রুবেল এর পরিহিত গেঞ্জি ও লুঙ্গি এবং হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত রুবেল, রাব্বী এবং রিপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে হামলায় অংশগ্রহণ করে। হামলা পরবর্তী গ্রেপ্তারকৃতরা দুটি বস্তায় করে মন্দিরের বিভিন্ন পিতলের পূজার সামগ্রীসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।
তারা গ্রেপ্তারকৃত সোহাগের সহযোগিতায় ধাতব আইটেমসমূহ রুপান্তর করে বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল। মন্দিরে মালামাল লুট করার সময় রুবেলের ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মিডিয়াতে ভাইরাল হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রুবেল, রাকিব, রিপন এবং সোহাগ বিভিন্ন পেশায় জড়িত। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত রুবেলের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় চুরি ও ছিনতাই এর একটি মামলা রয়েছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।
সূত্র : আমাদের সময়