9 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

মনোবাসনা পূরণে আজও সুপরিচিত যে মসজিদ

মনোবাসনা পূরণে আজও সুপরিচিত যে মসজিদ

রাজশাহীতে প্রায় আড়াইশ বছর আগের তিন গম্বুজ শাহী মসজিদ প্রাচীন স্থাপত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। এর অসাধারণ নির্মাণশৈলী আজও নজর কাড়ছে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের।

- Advertisement -

জনশ্রুতি আছে- এই মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে পরম করুণাময়ের কাছে চাইলে পূরণ হয় মুসল্লিদের মনোবাসনা।

আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে অনন্য নজীর এই মসজিদ রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার প্রত্যন্ত গ্রাম বাগধানীতে অবস্থিত। যেখানে জড়িয়ে আছে সময়ের নানান উপাখ্যান। রাজশাহীতে কালের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা হাতে গোনা কয়েকটি মসজিদের মধ্যে এটি একটি ৷

আগের সেই চাকিচিক্য ও জৌলুশ না থাকলেও এটি প্রাচীনকালের নান্দনিক নিদর্শন।

ঐতিহাসিক মসজিদটি সংরক্ষণ করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। দুই শতাব্দী পুরনো ইতিহাস যেনো এখনও লেগে আছে মসজিদের প্রতিটি ইট-পাথরে। এর প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী যে কোনো পর্যটককে খুব সহজেই বিমোহিত করে।

জনশ্রুতি আছে- এক সময় মনবসনা পূরণে নামাজ আদায় করতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেনে এই শাহী মসজিদে। যদিও এখন সেই লৌকিকতা নেই! এর পরও এক চিলতে প্রশান্তির পরশ পেতে শহরের কোলাহল ঠেলে মানুষ ছুটে যান মসজিদটিতে।

মনোবাসনা পূরণে আজও সুপরিচিত যে মসজিদ

নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনের জন্য যারা দেশের আনাচে-কানাচে চষে বেড়ান, নিঃসন্দেহে তাদের পিপাসা মেটাবে এ মসজিদ। চাইলেই তার মাধুর্য উপভোগ করা যাবে। মসজিদটির ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে সদর দুয়ার।

সেখানে ফারসি হরফে লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। যেখানে কালো অক্ষরে লেখা আছে মুন্সি মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ বাংলা ১২০০ সালে নির্মাণ করেছেন এই শাহী মসজিদটি। তিন হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের শাহী মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট। মসজিদটির তিনটি মেহেরাব, তিনটি দরজা, দুইটি জানালা ও একটি মিনার রয়েছে।

মসজিদটির চার কোনায় রয়েছে মনমুগ্ধকর নকশা খচিত গম্বুজ আকৃতির নান্দনিক পিলার। মাথার ওপরে রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য গম্বুজ। যা আকর্ষণ করবে যে কোন পর্যটককেই। এছাড়া শাহী মসজিদের চারপাশের দেয়ালের ভেতর ও বাইরে চিনামাটিতে খচিত মনোরম নকশা রয়েছে। যা এক পলকেই সৌন্দর্য পিপাসুদের ভালো লাগবে।

পবার বাগধানী গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব আশরাফ আলী বলেন, এক সময় মনবাসনা পূরণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা আসতেন। মানুষ বলতো, এখানে নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। সেই আশায় এখনও অনেক মানুষ পুরোনো আমলের এই মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য যান। এজন্য প্রতি শুক্রবার জুম্মার দিন সেখানে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় হয়।

আগে নদী পথই এই গ্রামের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল বলে জানান একই গ্রামের মৎস্যজীবী কাজেম শেখ।

মনোবাসনা পূরণে আজও সুপরিচিত যে মসজিদ

তিনি বলেন, তখন মসজিদ লাগোয়া পবার এই বারনই নদীতে বিশালাকার ঘাট ছিল। নদী তীরের এই ঘাট ঘেঁষে সপ্তাহে দু’দিন হাটও বসতো। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে হাটবারে এখানে আসতেন। কারণ, এটাই ছিল রাজশাহীর উত্তরে থাকা পবা অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো ও বড় হাট। এখন সেই জমজমাট অবস্থা নেই। তবে শুক্র ও মঙ্গলবার এখনও হাট বসে সেখানে।

১৯৯০ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের পাশে অবস্থিত কাচারি ঘরের ধ্বংসাবশেষ এখনও তার সাক্ষ্য বহন করছে। সংস্কার না করায় এরই মধ্যে মসজিদটির অনেক কিছুই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাচীন ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদটি সংস্কারের অভাবে নষ্টই হতে বসেছিল। তবে চার বছর আগে পবা উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম হোসেনের প্রচেষ্টায় ঐতিহাসিক বাগধানী শাহী মসজিদের দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

স্থানীয়দের মতে, এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটির প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিতে পারে।

যেভাবে যাবেন
রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে নওহাটা পৌরসভার বাগধানী শাহী মসজিদটি অবস্থিত। মহানগরীর গৌরহাঙ্গা রেলগেট থেকে তানোর রোডে সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে যাওয়া যাবে সেখানে।

এজন্য জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ২০ টাকা। এছাড়া বাস বা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা এবং নছিমন-করিমনেও বাগধানী মসজিদে যাওয়া যায়। ইচ্ছে করলে রাজশাহী থেকে নওগাঁ অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া যে কোনো বাসে গিয়ে নওহাটা ডিগ্রি কলেজ মোড়ে নামা যাবে। সেখান থেকে ১০ টাকা দিয়ে রিকশা-ভ্যানে যাওয়া যাবে বাগধানী মসজিদে।

সূত্র : বাংলানিউজ

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles