5.4 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

কানাডায় নারীর উদ্যোগে তৈরি প্রথম মসজিদ

কানাডায় নারীর উদ্যোগে তৈরি প্রথম মসজিদ
কানাডায় নারীর উদ্যোগে তৈরি মসজিদ

উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে অবস্থিত দেশ কানাডা। ১০টি প্রদেশ ও তিনটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত দেশটি আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও শীতলতম দেশ। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর এবং উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত দেশটি বিস্মৃত। সিআইএর তথ্য অনুসারে এর আয়তন ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭০ বর্গ কিলোমিটার।

দেশটির মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৭৯ হাজার ৪৩ হাজার ২৩১ জন। এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত ৩.২ শতাংশ। অবশ্য বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৯ শতাংশে পৌঁছেছে। ১৮৬৭ সালে কানাডা প্রতিষ্ঠার চার বছর পর ১৮৭১ সালে জনসংখ্যা জরিপে ১৩ জন ইউরোপীয় মুসলিমকে পাওয়া যায় এবং তাদের প্রথম কানাডার প্রথম মুসলিম হিসেবে মনে করা হয়। উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের আশায় নৌকাযোগে কানাডায় পাড়ি জমান তারা। সময়ের পরিক্রমায় বাড়তে থাকে মুসলমানের সংখ্যা। ১৯৩১ সালে জনশুমারির তথ্যমতে দেশটিতে নিবন্ধিত মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ৬৪৫ জন।

- Advertisement -

কানাডার প্রথম মসজিদের নাম আল-রশিদ মসজিদ। ১৯৩৮ সালে আলবার্টার এডমন্টনে নির্মিত এই মসজিদকে উত্তর আমেরিকার প্রথম মসজিদ মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্বিমাসিক পত্রিকা আরামকো ওয়ার্ল্ড (সাবেক সৌদি আরামকো ওয়ার্ল্ড) সূত্রে জানা যায়, কানাডিয়ান কাউন্সিল অব মুসলিম উইম্যানের প্রতিষ্ঠাতা লিলা ফাহমান বলেছেন, ১৯৩০ সালের দিকে মুসলিম পরিবারগুলো মসজিদ নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করছিল। সেই সময় হালাবি হামদুন নামে এক প্রাণবন্ত লেবানিজ নারী ছিলেন। যিনি অন্যের ওপর সহজেই প্রভাব তৈরি করতে পারেন। সেই নারীর নেতৃত্বে একদল মুসলিম নারী এডমন্টনের মেয়র জন ফ্রাইকে ক্রমবর্ধমান মুসলিমদের জন্য মসজিদ নির্মাণের জন্য একটি জমি দেওয়ার অনুরোধ জানান। তারা মেয়রকে জানান যে এই অঞ্চলের সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয় আছে; তাই নিজস্ব জায়গায় প্রার্থনার স্থান মুসলিমদের প্রাপ্য। মেয়র পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যে রয়্যাল আলেকজান্দ্রা হাসপাতালের পাশের জমি বিক্রির ব্যবস্থা করেন।

নির্ধারিত জমি ক্রয় ও মসজিদ নির্মাণে মুসলিমদের পাশাপাশি স্থানীয় খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। তাতে ইউক্রেনীয়-কানাডিয়ান ঠিকাদার মাইক ড্রেউথ গির্জার শৈলীতে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৯৩৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মসজিদটি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়। ধীরে ধীরে মসজিদটি স্থানীয় মুসলিম পরিবারগুলোর মূলকেন্দ্রে পরিণত হয়। এদিকে কানাডার অন্যান্য শহরের তুলনায় এডমন্টনে মুসলিম পরিবারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এই মসজিদ শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে কানাডার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় মনোভাব তৈরি করে।

১৯৮০ সালে শহরটিতে মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হাজারের বেশিতে পৌঁছে। ফলে ১৯৮২ সালে আল-রশিদ মসজিদে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আরেকটি মসজিদ তৈরি করা হয়। তা শুধু নামাজের স্থান নয়; বরং বিয়ের অনুষ্ঠান, জানাজার নামাজ, আলোচনা অনুষ্ঠানসহ কানাডার অন্যতম ইসলামিক সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানে একসঙ্গে ২০ হাজারের বেশি মুসলিম সমবেত হওয়া যায়। এদিকে রয়্যাল আলেকজান্দ্রা হাসপাতালের সম্প্রসারণ করতে গিয়ে পুরাতন মসজিদ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এভাবে ১০ বছর খালি পড়ে থাকার পর দ্য কানাডিয়ান কাউন্সিল অব মুসলিম উইম্যানের উদ্যোগে মসজিদটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষিত হয়। ১৯৯২ সালের ২৮ মে থেকে তা সব দর্শনার্থীর উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি ফোর্ট এডমন্টন পার্কের অধীনে রয়েছে।

২০১৩ সালে মসজিদ আল-রশিদ পরিদর্শনকালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মুসলিম কমিউনিটির ভূমিকা তুলে ধরেন। কানাডার সংবিধানে স্বাধীনতা ও অধিকারের নীতিতে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ নির্মাণে মুসলিম সমাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles