মরজিনা আক্তার মিম (৩২)। তিনি ৫ বছরে বিয়ে করেছেন ১০টি। প্রতিবারই স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে দেনমোহরের টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। দেনমোহরের পরিমাণ প্রায় ৭১ লাখ টাকা বলে জানা গেছে। মোটা অঙ্কের দেনমোহরের টাকা আদায় করতেই মিম বিয়ে করতেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তিনি ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার নসিবগঞ্জ নুহালী এলাকার বাসিন্দা মোজ্জাম্মেল হকের মেয়ে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার মোজাম্মেল হকের ১ম মেয়ে মরজিনা আক্তার মিম একে একে ১০টি বিয়ে করেছেন। প্রথম বিয়ে করেন ২০১৭ সালে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বাকডোকরা গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে ইয়াসিন আলীর সঙ্গে। তাকে ৫ মাস পরই তালাক দিয়ে ৭ লাখ টাকা মোহরানা আদায় করেন।
২০১৮ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কহরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের পুত্র শাহদাত হোসেনকে বিয়ে করেন। ২ মাস পরই তাকে তালাক দিয়ে ১০ লাখ টাকা দেনমোহর আদায় করেন।
২০১৯ সালে রাণীশংকৈল উপজেলার নয়নপুর গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে জমিরুলকে বিয়ে করেন। ১ মাসের মাথায় তালাক দিয়ে ৯ লাখ টাকা দেনমোহর আদায় করেন। আবার ২০১৯ সালে ওই এলাকার পাশের গ্রামের মখলেসুরের পুত্র আফতাবর রহমানকে বিয়ে করেন। ২৫ দিন পরে ১২ লাখ টাকা দেনমোহর নিয়ে তালাক দেয়।
২০২০ সালে দিনাজপুর বালুবাড়ি এলাকার আকতারুজ্জামান বাবুকে বিয়ে করেন। ১ মাস পরেই ৬ লাখ টাকা দেনমোহর নিয়ে তাকেও তালাক দেন। আবারো ২০২০ সালে দিনাজপুর রাণীগঞ্জ এলাকার আব্দুল কাদেরকে বিয়ে করেন। দেড় মাস সংসার করে ৮ লাখ টাকা দেনমোহর নিয়ে তাকেও তালাক দেয়। ২০২০ সালের শেষের দিকে কুড়িগ্রামের মোকলেসুর রহমানকে বিয়ে করে ৪৫ দিন সংসার করে ১১ লাখ টাকা দেনমোহর নিয়ে তাকে তালাক দেন।
অপরদিকে পীরগঞ্জ উপজেলার চাঁদগাঁও গ্রামের রজব আলীর ছেলে রবিউল ইসলামের সঙ্গে ২০২১ সালে ২৭ নভেম্বর বিয়ে হয়। এই বিয়েতে ৮ লাখ ৯ হাজার টাকা দেনমোহর ধরা হয়। অবশেষে এই পাত্রের সঙ্গেও বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য পাত্রের পরিবারকে চাপ দেওয়া শুরু করেছে। মিম বাপের বাড়ি গিয়ে তার স্বামীর পরিবারের সবার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার চাপ দিচ্ছে। না হলে দেনমোহর পরিশোধ করে তালাক দিতে বলছে।
মেয়েটির এ পর্যন্ত সর্বশেষ স্বামী রবিউল ইসলাম জানান, মেয়েটির এতগুলো বিয়ে হয়েছে আমার জানা ছিল না। পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছে। মেয়েকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলাম সেদিনই জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আর দেনমোহরও বেশি টাকা লেখা হয়। বিয়ের প্রথম থেকেই মেয়েটি সমস্যা করছিল। বেশিরভাগ সময় তার বাবার বাসায় থাকতো। ৩ মাস পরেই আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই তালাক দেবে বলে জানায়। পরে আমি খবর নিয়ে দেখি, তার আগেও ১০টা বিয়ে হয়েছে। এখন সে দেনমোহরের টাকার জন্য আর তালাকের জন্য আমাকে ও আমার পরিবারকে চাপ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে মেয়ের বাবাসহ দুই চেয়ারম্যান নিয়ে পীরগঞ্জ থানায় বসলে মেয়ের বাবা বলেন, আমার মেয়ের ১০টা বিয়ে করেছে তাতে তার কি সমস্যা? মেয়ের সঙ্গে সংসার না করলে মোহরানার টাকা দিয়ে আমার মেয়েকে তালাক দেক।
মরজিনা আক্তার মিমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, কোনো ছেলে আমার মনমতো না। সেজন্য কারও সঙ্গেই সংসার টিকে না আমার।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার ৯নং সেনগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান বলেন, একটি সাধারণ মেয়ের এতগুলো বিয়ে আমার জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পরে আমি মেয়ে বাবাকে ডেকেছিলাম। কিন্তু তার কথা বলার ধরন ভালো না। বিষয়গুলো পরে দেখা হবে।
সূত্র : ঢাকাটাইমস