2.9 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা

নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা

নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষা শেষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনস্থল থেকে ঘোষণা করা হতে পারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কা থাকলে পরে ঘোষণা করা হবে।

- Advertisement -

এবার ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৫৪ জন। তাদের মধ্যে ৯৬ জন সভাপতি ও ১৫৮ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনে থাকতে পারে একাধিক চমক। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ভালো, ত্যাগী, ক্লিন ইমেজ এবং যাদের পরিবারের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তারাই আগামীর নেতৃত্বে আসবে। এ ছাড়াও যারা শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এবং মানবিক কাজ করে আলোচনায় আসতে পেরেছেন, এমন ছাত্রনেতারাও এগিয়ে আছেন।

ছাত্রলীগের বিগত কমিটিগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভাগভিত্তিক রাজনৈতিক বিন্যাসের জন্য এক-এক সময় এক-এক বিভাগ থেকে নেতৃত্ব নিয়ে আসা হয়। তবে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা, চারিত্রিক মাধুর্যতা, শিক্ষার্থীবান্ধব ও আওয়ামী পরিবারের মধ্য থেকেই নেতৃত্বে আনার কথা জানায় দলের নীতিনির্ধারক ফোরাম।

বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগ এবং সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসছে না কেউ। এবার সম্মেলনে চমক হিসেবে থাকতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে শীর্ষ এক পদ। আসতে পারে নারী নেতৃত্বও।

তবে শেষ মুহূর্তেও ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়স বাড়ানো হবে কিনা, সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। আরেকদিকে সম্মেলনস্থলেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণার গুঞ্জন রয়েছে। তবে নেতৃত্ব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই চূড়ান্ত হবে। যদি শেষ পর্যন্ত বয়স বাড়ানো না হয় তা হলে আলোচিত অনেক নেতাই বাদ যাবেন।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাথমিক সদস্য হতে হলে তার ছাত্রত্ব থাকতে হবে এবং বয়স অনূর্ধ্ব ২৭ বছর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২ বছর পরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে অধিকাংশ সময়ই এই নিয়মেরও ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে কোনো কমিটি আড়াই বছর আবার কোনো কমিটি ৩ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত করেছে। নিয়মের এই ব্যত্যয়ের ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সের ব্যাপারেও ছাড় দিতে হয়েছে। তবে ২০০৬ সালের সম্মেলনের পর থেকে এ পর্যন্ত কখনোই ২৯ বছরের বেশি কাউকে শীর্ষ নেতৃত্বে আনার নজির নেই।

গত তিন সম্মেলনে ছাত্রলীগের বয়স গঠনতন্ত্রের বাইরে দুয়েক বছর করে বাড়ানো হয়েছে। ২০১১ সালে সংগঠনটির ২৭তম সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন সভাপতি হিসেবে বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০১১ সালে সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। ওই সময় বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই হিসাবে ৫ বছর পর অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের সম্মেলনে বয়স ধরা হয় ২৯ বছর।

এর ৪ বছর পর ২৮তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসেন। ওই সম্মেলনে বয়স নির্ধারণ করা হয় ২৯ বছর। এরপর সর্বশেষ সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানী। সম্মেলনে তাদের বয়সসীমা ধরা হয় ২৮ বছর। যদিও পরবর্তী সময়ে সেটি আরও ১ বছর বাড়িয়ে ২৯ বছর করা হয়। তবে গত তিন কমিটিতে ২৯ বছর হলেও করোনা মহামারী এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবার আগের মতোই বয়স বাড়িয়ে ২৯ করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। পুরনো প্রচলন অনুযায়ী দুয়েক বছর বাড়বে- এই আশায় অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা যায়।

ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘ছাত্রলীগের সম্মেলনে বরাবরই চমক থাকে। এবারও একটি সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব আগমনের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগে নতুন চমক দেখা যাবে। যে নেতৃত্ব আসছে, সে নেতৃত্বের প্রতি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পূর্ণ আস্থা থাকবে বলে আমরা মনে করি।’

ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের জুলাইয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। পরে নৈতিক স্খলনের দায়ে তাদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে আল নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জয় ও লেখককে ‘ভারমুক্ত’ করা হয়। এর পর থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন জয় ও লেখক। তারা ২ বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে জয়-লেখকের দায়িত্ব পালনের শেষ মুহূর্তে তাদের দেওয়া চিঠি কমিটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ ছিল ৩০টির মতো। এর বিপরীতে চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে বর্ধিত কমিটি হয়েছে, যা শূন্য পদের কয়েকগুণ বেশি। এমনকি কতজনকে সংগঠনের পদ দেওয়া হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই দপ্তরেও। বর্ধিত কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ইস্যু করা চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই সেটিকে এডিট করে নাম বসিয়ে নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। এ রকম অসংখ্য এডিট করা ছবি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। নিজেই নিজের নাম বসিয়ে হয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতা। এ নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা ও হাসিঠাট্টা। যদিও সে চিঠি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নজরে এলে কয়েকজনকে বহিষ্কার করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মার কাছে জানতে তার মোবাইলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

রাজধানীর যেসব সড়ক বন্ধ থাকবে আজ : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে আজ রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলোতে রাস্তা বন্ধ রাখার পাশাপাশি রোড ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক-রমনা বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে যানজট এড়াতে রাজধানীর কাঁটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাবি মেডিক্যাল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাবি ভাস্কর্য ক্রসিং ও উপাচার্য ভবন ক্রসিং এলাকায় সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাফিক ডাইভারশন চলবে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে নগরবাসীকে ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করার অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্র : আমাদের সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles