9 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

তবু নদী কথা বলে না

তবু নদী কথা বলে না
ফাইল ছবি

সকাল সাড়ে আটটা, অফিস আওয়ার।

সিটি বাস শাহবাগ মোড়ে রেডলাইটের জ্যামে আটকে গেলো।

- Advertisement -

প্রতিদিনের মতো চোখ চলে গেলো আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে, ফাস্ট ফুড দোকানে মিষ্টির ট্ৰে ধোবার দিকে। ছেলেটা খুব অল্প পানি খরচ করে, কায়দা করে নিখুঁতভাবে ট্রে ধোয়। অনেকে নেমে পড়ছে, বাস কিছুটা খালি হতেই আরাম করে বসার চেষ্টা করি। দাঁড়ানো মানুষের চাপে বামে বেঁকে বসে থাকতে হয়েছিল ঘন্টাখানেক, ঘাড় ব্যাথা করছে। পাশে দাঁড়ানো একজন হঠাৎ ধপ করে বাসের মেঝেতে আছড়ে পড়ে গেলো। কন্ডাক্টর আর আমরা ক’জন মিলে ধরাধরি করে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দোকানের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসানোর চেষ্টা করতে থাকি। তার মাথা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে। কন্ডাক্টর সময় নষ্ট না করে বাসে উঠে ছেড়ে দিল। এক ভদ্রলোক খালি সিএনজি পেয়ে থামিয়ে আমাকে বলল, ভাই একটু ধরতে পারবেন?
আমরা তাকে ধরে ভেতরে বসালাম। উনি আমার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে আবার অনুরোধ করলেন, একটু যেতে পারবেন আমাদের সাথে? কাছেই, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সীতে? নামিয়ে দিলেই হবে।

আমি ইতস্ততঃ করে হঠাৎ পেছনের পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগটা নাই, মোবাইলটাও! আমাকে পাগলের মতো পকেট হাতড়াতে দেখে লোকটা বলল, আপনি চলেন মেডিক্যাল পর্যন্ত। আপনার ভাড়া আমি দিয়ে দিবো, এই সিএনজি নিয়েই অফিসে চলে যাবেন?

বিরাট বিপদে পড়লাম।
একে তো অফিস লেট, ইম্পরট্যান্ট মিটিং ছিল। তার ওপর মানিব্যাগ-মোবাইল দুটোই গেছে। সাথে সাড়ে তিন হাজার ক্যাশ টাকা। দেরি না করে তাদের সাথে আমিও উঠে পড়লাম সিএনজিতে। অজ্ঞান মানুষটাকে নিয়ে উনার একার পক্ষে যাওয়া আসলেই খুব কষ্টকর হতো। সাথে থাকলে মনে বল পাবে। কাল অফিসে কথা দিয়েছিলাম আর লেট করব না। ভদ্রলোকের কাছ থেকে মোবাইলটা চেয়ে নিয়ে আমার ব্যাংকার বন্ধুকে ফোন করে এটিএম, ক্রেডিট কার্ড ব্লক করে দিতে বললাম।

বিশ মিনিটে আমরা হাসপাতাল ইমার্জেন্সীতে পৌঁছে গেলাম। মাথায় ভীষণ চোট লেগেছে। এমনিতেই হাড্ডিসার দেহ, তার ওপর ব্লিডিং হয়ে বেচারা খুব কাহিল।

তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি রোগীর কে?
– কেউ না
– থাকবেন কিছুক্ষন এখানে?
– জি, আপনি এখন চলে যেতে পারেন
– এতো দায়িত্ব নিচ্ছেন যে?
– [ভদ্রলোক হেসে ফেললেন] আপনি কি অফিস যাচ্ছেন আজকে?
– হা
– তাহলে যান। আমাকে রক্ত জোগাড় করতে হবে, তার আত্মীয় স্বজন খুঁজে বাড়িতে খবর পাঠাতে হবে
– রক্তের গ্রূপ কী?
– এ পজিটিভ।

আমার রক্তের গ্রূপও তাই। রক্ত দেব না কি দেব না ভাবছি। কারণ কাল আমাদের অফিসের বাৎসরিক পিকনিক। যমুনা রিজোর্টে বুকিং দেওয়া হয়েছে। গুরু দায়িত্ব এসে পড়েছে, আর অনেক খাটাখাটনির কাজ সামনে। ওদিকে বৌ বাচ্চারা খুব এক্সসাইটেড, সবাই মোটামুটি রেডি কালকের জন্য।
কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করে বসে রক্তের গ্রূপ? না কি উনি আমার চেহারা দেখে কিছুটা আন্দাজ করে ফেলেছেন? ভদ্র বলেই হয়তো আমার গ্রূপ জিজ্ঞেস করছেন না। উনি মানিব্যাগ খুলে টাকা বের করে আমার হাতে দিতে যাবেন, ঠিক এ মুহূর্তে নার্স এসে বলল, রক্ত পেয়েছেন?
– না, খুঁজছি
– ইমিডিয়েটলি দরকার। তা না হলে প্রফেশনালদের ডাকতে হবে। এদের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া রিস্কের। বেশিরভাগ নেশাখোর। উপায় না থাকলে বলবেন, অফিস ক্লার্কের কাছে তাদের ফোন নাম্বার আছে, নিয়েন। পেশেন্টের এমনিতেই মারাত্মক এনিমিয়া। প্রেশার নেমে যাচ্ছে।

আমি বলেই ফেললাম, আমার রক্ত নেন।
রক্ত দিয়ে আমরা দুজন মেডিক্যাল কলেজের মেইন গেটের পাশে বসে থাকলাম। ভদ্রলোক একটা হোটেলে ঢুকে চা-নাস্তা খাওয়ালেন। বললেন, আপনি তাহলে চলে যান। অনেক তো করলেন
– আপনি?
– দেখি। স্বজনদের খোঁজ অবশ্য পুলিশই বের করে ফেলবে। আঙুলের ছাপ থাকার এই সুবিধা। ততক্ষন কেউ না আসা পর্যন্ত থাকবো।
উনি এমনভাবে জোড় গলায় বললেন “থাকবো”, আমি আর কিছু বলার পেলাম না। আমি নিশ্চিত, উনি যেটুকু হেল্প করবেন, আপন ভাইয়ের মতোই করবেন। ঘড়িতে চেয়ে দেখি দুপুর বারোটা বাজে। অফিসে ফোন করে ঘটনা বলে ছুটি নিয়ে নিলাম। মাথা ঝিমঝিম করছে, আরো আধা ঘন্টা থেকেই যাই ভদ্রলোকের সাথে। আমার ব্লাড প্রেসারটা এডজাস্ট হোক।

জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনার নাম?
– গিয়াস
– আমি নজরুল- বলে হাত বাড়ালাম। অচেনা মানুষটাকে এভাবে আপনার হেল্প করা দেখে আসলে আমি খুব অবাক হচ্ছি। কারণটা যদি বলতেন?
ভদ্রলোক বললেন, নজরুল ভাই, আপনি যদি আর পাঁচটা মিনিট এখানে থাকেন, বলতে পারি কেন আমি মানুষটাকে হেল্প করার চেষ্টা করছি। সবসময় অবশ্য করি না, সাধ্যে কুলোলে। আমার মাথায় অনেক বড় ঋণের বোঝা।

ভদ্রলোক বলা শুরু করলেন-
পনেরো বছর আগের ঘটনা। ঈদের আগে ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম, মেহেরপুরে। বাস ভর্তি মানুষে ঠাসা। কুমারখালীতে বাস আসার পর একটা পুলের ওপর আরেক বাসকে সাইড দিতে গিয়ে আমাদের বাস রেলিং ভেঙে সোজা পনেরো ফুট নিচে পানিতে পড়ে যায়। বাসের বেশিরভাগ অংশ পানিতে ডুবে যায়, শুধু পেছনটা পানির উপর সামান্য বের হয়ে ছিল। বেশিরভাগ মানুষ সাঁতরিয়ে উঠে। আমি মারাত্মক আহত হয়ে পানির নিচেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম
– তারপর!
– তারপর হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলে শুনেছিলাম আরেক যাত্রী আমাকে পানি থেকে টেনে তুলে আনে
– বলেন কী!
– আমার বাঁচার কথা ছিল না। চারদিন হাসপাতালে কমায় ছিলাম। ডাক্তাররা প্রথমে ভেবেছিল আমি মারা গেছি। ঐ একসিডেন্টে মোট নয় জন মারা যায়। অধিকাংশ ডুবে
– অবাক করা ব্যাপার!
– এর পর আমি একদম পাল্টিয়ে যাই। আমার তখন ছিল দুই বছরের বিয়ে করা বউ, পেটে ছয় মাসের বাচ্চা। আমাকে যে বাঁচিয়েছিল, তাঁকে আর খুঁজে পাইনি। অনেক খুঁজেছি, পেপার ঘেটেছি। নিজের জীবন বাজি রেখে লোকটা আমাকে বাঁচিয়ে দিলো, খবরের কাগজেও ঘটনা পড়েছি। আমি বসেছিলাম বাসের একদম সামনে। মানুষটার নামটা শুধু জেনেছিলাম আলাউদ্দীন। পরে বাস কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম ভদ্রলোক মেহেরপুর যাচ্ছিলেন। অনেক খুঁজেছি ওই নামে কেউ চেনে কি না, এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। মনে হয় লোকটা মানুষকে বাঁচিয়ে সেটার ক্রেডিট নিতে চান নাই। তবে হাসপাতালের একজন বলেছিলেন, যে লোকটা আমাকে বাঁচিয়েছে, তার একটা আঙ্গুল থেতলে গিয়েছিল, কপালে বেশ কয়েকটা সেলাইও লেগেছিল। পায়ের গোড়ালিও নাকি মারাত্মক জখম হয়েছিল।
তারপর থেকে আলাউদ্দীন নামের কাউকে পেলেই আমি এগিয়ে যাই, কথা বলি।

পুলিশ হাসপাতালে এসে আঙুলের ছাপ নিয়ে জানালেন উনার নামও আলাউদ্দীন ।

ভদ্রলোক এখনও ওয়ার্ডে শোয়া। জ্ঞান ফেরে নাই। কেবিনে সিট পায়নি। সব কেবিন ভরা। আজ রাতে একটা খালি হবার ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে। সেটার জন্য গিয়াস ভাই দৌড়াদৌড়ি করছেন। আমার কাছে এসে ফিসফিসিয়ে, ছলো-ছলো চোখে বলল, নজরুল ভাই! ভদ্রলোকের তর্জনী আঙ্গুলটা অর্ধেক কাটা। পায়ের গোড়ালিতেও মারাত্মক জখমের চিহ্ন। কিন্তু কপালে ব্যান্ডেজ থাকায় পুরানা ক্ষত আছে কি না বোঝা যাচ্ছে না
– বলেন কী! তাহলে কি সেই আলাউদ্দীন?
– সম্ভাবনা আছে। বাড়িও মেহেরপুর। শুধু কপালের দাগটা দেখতে পেলেই শিওর হওয়া যেত। বয়সও ষাটের উপর।

আমরা বারান্দায় বসেছিলাম।
হঠাৎ একজন নার্স দৌড়ে গেলো ডাক্তার ডাকতে। ডাক্তার এসে আলাউদ্দীনের পালস চেক করে সিপিআর দিতে লাগলো। ডাক্তার দুই তালু এক করে রোগীর বুকের মাঝখানে দিয়ে ঠেসে ঠেসে হৃদপিন্ড চালু করার চেষ্টা করলে লাগলো। বাঁচানোর কী প্রচেষ্টা! যেন কোনোমতেই ইহকাল থেকে পরকালের সাঁকো পার হতে দেবেন না। ডাক্তারের ধৈর্য্য দেখে আমি অবাক, প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে অবিরাম সিপিআর দিয়েই যাচ্ছে। আশপাশে আর কোনো ডাক্তার নাই? থাকলে ভদ্রলোক একটু ব্রেক পেতেন।
.
ওদিকে গিয়াস ভাই এরই মধ্যে আসরের নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন। নামাজ শেষ করে দু হাত তুলে কেঁপে কেঁপে কাঁদতে লাগলেন। উনার বডি লেঙ্গুয়েজই বলে দিচ্ছে, কী পরিমান আশা দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দু হাত পেতেছেন। একজন অপিরিচিত মানুষের প্রাণ ভিক্ষা চাইছেন!

হঠাৎ ডাক্তার পালস চেক করে, ঘাড়ের রগ চেক করে পাশে রাখা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে হাঁপাতে লাগলেন। কপালে হাত রেখে, চোখ ঢেকে কনুইটা চেয়ারের হাতলে ঠেস দিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকলেন। ডাক্তারের বয়স খুব অল্প, কাঁদছেন কিনা বোঝা যাচ্ছে না। কাঁদার কথাও না, এসবে তারা অভ্যস্ত। একজন নার্স সাদা বিছানার চাদরে ঢেকে দিলো মাথা। সব শেষ।
ডাক্তার হেরে গেলো, আমরাও হেরে গেলাম।
.
মানুষটার জন্য কাঁদবার কাউকে পাওয়া গেলো না। শুধু গিয়াস ভাই ছাড়া। উনি বেডের পাশে মৃতের একটা হাত ধরে মিনিটদশেক চুপচাপ বিছানার পাশে বসে থাকলেন।
মুহূর্তে সব ঘটে গেলো, ঠিক কালবৈশাখী ঝড়ের মতো, সব লন্ড-ভন্ড। আমি কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে শুধু দেখে গেলাম।

এগিয়ে গেলাম মৃতদেহটার কাছে। গিয়াস ভাই মৃতের ডান হাতটা বের করে আমাকে দেখালেন। আমরা তার কপালের ব্যান্ডেজ সরিয়ে খুঁজে পেলাম ভ্রুর উপর বেশ খালিকটা পুরানা কাটা দাগের রেখা। পায়ের গোড়ালিতে শুকিয়ে যাওয়া ক্ষত।

একটা ব্যাপার কী জানেন?- গিয়াস বলে যেতে লাগলেন। ওই এক্সিডেন্টের পর থেকে আমার ব্যবসায় দারুন বরকত আসলো। আমার গমের আটার বিজনেস তুঙ্গে উঠে গেলো, আমি কয়েক মাসের মধ্যেই লাখোপতি বনে গেলাম। টাকার অভাব নাই। একটা থেকে তিনটা গমের আড়ৎ আমার এখন। দুইটা এতিমখানা চালাই। আপনাকে বলার কারণ দেখেন, আল্লাহ সুবহানু তায়ালার কি অশেষ কৃপায় আমি বেঁচে আছি, নতুন করে বিষয় সম্পত্তি পেয়েছি। নতুন জীবন ফিরে পাবার আনন্দ যে কত প্রকট, সেটা পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই জানে না। শুধু যদি সেই মানুষটাকে জীবিত অবস্থায় কিছু খেদমত করে যেতে পারতাম..

ওই এক্সিডেন্টের পর থেকে আমি জীবনকে ভালবাসতে শিখেছি, মানুষকে ভালবাসতে শিখেছি। আমি আর কোনো মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করি না। কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নাই।

সন্ধ্যার আগে আগে আমরা এম্বুলেন্স ঠিক করে লাশ নিয়ে রওনা দেই মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে। ভদ্রলোক আমাকে যেতে নিষেধ করলেও আমি সাথে থাকলাম। লোকটার সান্নিধ্য চাই, দেখতে চাই সে ওখানে গিয়ে কী করে, কিভাবে উনার ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করার চেষ্টা করে..।

রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে লাশ মেহেরপুর নিয়ে যাওয়া হলো, গ্রামের বাড়িতে। বাড়িতে তার অন্ধ বৌ আর এক ছেলে থাকে। আত্মীয় স্বজন খুব কম। ছেলে রিকশা-ভ্যান চালক। শুনলাম ভদ্রলোকের একটা ইলেকট্রনিক্সের ছাপড়া দোকান ছিল। পুরানা মাইক, এমপ্লিফায়ার, টেলিভশন, রেডিও মেকানিক। ঘটনার ঐদিন গুলিস্তান গিয়েছিলেন পাইকারি জিনিস কিনতে। দারিদ্রতার ছোঁয়া বাড়ির কোনাকাঞ্চিতে। বাঁশের বেড়া দেওয়া এক রুমের ছোট্ট ভাঙাচোরা ঘর, সামনে এক চিলতে উঠোন। গিয়াস ভাই কয়েকজন এতিমের সাথে কোরান খতম দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। এক ফাঁকে আমার কাছে এসে বললেন, নজরুল ভাই, আপনি ঢাকায় চলে যান
– আপনি?
– আমি থাকবো। সকালে লাশ দাফন করবো। তার মেয়ে বরিশাল থেকে রওনা দিয়েছে। হয়তো আরো দুদিন আমাকে থাকতে হবে। অনেক কাজ বাকি
– আমিও থাকতে চাই
– এখানে আপনার থাকার মতো কোনো পরিস্থিতি নাই। আমি কোরান খতম না করে আর উঠবো না। আপনি অনেক করলেন ভাই, আপনার কাছে আমরা সবাই ঋণী
– ছিঃ ছিঃ, আমি কিচ্ছু করি নাই। করেছেন আপনি
– আপনার বাসের টিকিট হয়ে গেছে, সাড়ে বারোটার নাইট কোচে ঢাকা চলে যাবেন।
পাশের একজনকে ইশারা করে আমাকে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দিতে বললেন।

আমি ভরা পূর্ণিমায় মেঠো পথ ধরে হাঁটতে থাকি। চারদিকে আলোর বন্যা বয়ে যাচ্ছে। পাশের তরুণ যুবকের হাতে ফ্ল্যাশ লাইট, শুধু শুধু জ্বালিয়ে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিচ্ছে। ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকি পিপোলটি, আকন্দের ঝোপে ঝিকমিক করছে; বাতাসে উড়তে থাকা ঝকমকে জরির মতো। কোনো কোনো জোনাকির ঝাঁক একই ছন্দে, একসাথে জ্বলছে নিভছে! আকাশে পরিযায়ী হাঁসের ঝাঁক।
জীবিকার তাগিদে কত শত, হাজার মাইল দূরে চলে যাচ্ছে।

মাত্র কয়েক ঘন্টার নোটিশে কোথা থেকে কোথায় এসে নতুন এক জগতের সন্ধান পেলাম। নতুন মানুষের সন্ধান, পেলাম জীবনের নতুন অর্থ। আমরা যে আসলেই এক মহাশক্তির ইশারায় চলছি, সে ধারণা মাঝে মধ্যে আরো অটুট হয়। কাউকে জিজ্ঞেস করার কিছু নাই, ভবিষ্যৎ আমাদের নাগালের বাইরে। শুধু টাইট হয়ে বসে থাকা।

মরা বাড়িতে আসলে সবসময় একটা উপলব্ধি এসে ভর করে, আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে। কিন্তু ক’দিনই বা সেটা মনে থাকে? হয়তো আলাউদ্দীনের চাইতেও আরো ভয়াবহ বা করুন পরিণতিও হতে পারে আমার, কে জানে! এ ক্ষেত্রে আলাউদ্দীন অনেক ভাগ্যবান। তীব্র ভালোবাসায় সমাধিত হবার ভাগ্য ক’জনের ভাগ্যেই বা জোটে?
কি অপূর্ব জোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles