9.5 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু কথা

ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু কথা
ছবি বেন সুইট

এ কেমন ভবিষ্যৎ যেখানে অতীত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

অচেনা ভবিষ্যৎ। তড়িৎ হস্তান্তর। চূড়ান্তে আগমন। এ সবের কিছুই আমি চাইনি। শুধু চেয়েছিলাম অতীতের মতো পরিপাটি একটি ভবিষ্যৎ।

- Advertisement -

আষাঢ় এলে যদি বৈশাখ না থাকে। কিংবা ফাগুনে যদি দেখা যায় না পৌষ মাঘ চৈত্র। আর দিনের শেষে সূর্যটা যদি না থাকে অন্ধকারের পাশে। তাহলে ভবিষ্যৎ নতুন কী বার্তা শোনালো হে? এসব তো আমি দেখে এসেছি অতীতে।
অতীতের অমূল্য সাধনা হলো প্রত্যাশা। পাবার অপেক্ষা। অতীতে বসে গন্তব্য ঠিক করা যেত। ভবিষ্যৎ নিজেই গন্তব্য। কোথাও যাবার যায়গা নেই। না আগে না পিছে। অতএব, আমার অতীত এখন অনাথ আশ্রমে।

ভেবেছিলাম মাটির ওপর পা থাকবে ঋজু। চোখ হবে শান্ত। চিরদিনের চেনা তরুলতা বাইবে খোলা জানালার পাশে। এতসব ভেবে যেখানে এলাম, সেখানে আলোকিত অতীত অদৃশ্য। এখন ইচ্ছে করছে যে স্রোতে ভেসে এসেছি ভবিষ্যতে সেই স্রোতে ভেসে চলে যাই অতীতে। যেখানে কেউ বয়োবৃদ্ধ হয় না। যেখান থেকে ফিরে যেতে চায় না কেউ অতীতের অতীতে।
ভবিষ্যৎ মানে পরম বিসর্জন। মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ থাকুক কিংবা নাই-বা থাকুক অতীত আমার চাই-ই চাই। বনে-বাদরে, গোল্লাছুটের মাঠে, টিনের চালে বৃষ্টির শব্দের কাছে আমার যেতে ইচ্ছে করে। আমি সেই অতীতের কথা বলছি যেখানে মা দাঁড়িয়ে থাকতেন গেটের পাশে, কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগ তুলে নিতে। বাবা ডাকতেন বাবা বলে।

আমার অতীতে চাঁদ বংশের একটি মেয়ে ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে যে তেঁতুল খেত শব্দ করে। অতীতে জ্যোৎস্না রাতে আমার হাতে সদা কাগজ কলম থাকতো আঠার মত লেগে।

অতীতে খেলার মাঠে বাঁশি হাতে অপেক্ষা করতেন ফুটবল কোচ। অতীতে খদ্দর পাঞ্জাবির বোতামগুলো কেঁপে উঠত আগুন ঝরা স্লোগানে। অতীতে বেশ কয়েকবার আগুন লেগেছে জেনেভা ক্যাম্পে।

অতীত অনেক দীর্ঘ, অনেক বিস্তৃত। সেখান থেকে সামান্য কিছু উল্লেখ করলাম মাত্র। সাত খণ্ড আমায়ন লেখা যায় যে অতীতকে নিয়ে তার সবটুকু ছিন্নপত্রের কাছে রেখে এসেছি। সম্মানিত সুধী মণ্ডলী, আপনাদের মত ভবিষ্যতে আসার সখ আমারও ছিল কিন্তু এখন দেখছি সব সুখ ছিল অতিতে।

ভবিষ্যৎ মানে রবীন্দ্রনাথের মতো ঝুঁকে ঝুঁকে মর্নিং ওয়াক করা। রাষ্ট্রপতির দস্তখতের আনুষ্ঠানিকতা।

ভুল বুঝবেন না কেউ। এ কথা সত্য যে, এখানেও আছে এক টুকরো আকাশ। কিন্তু সে আকাশে মনের বিজুলি নেই। এখানেও শিশির পড়ে রোজ সকালে অথচ অতীতে আমি শিশির দেখেছি মানুষের চোখে।
আজকের সকালটা যদি হয় ভবিষ্যতের সকাল তবে, রাত্রির পূর্বের সকালের কাছে ফিরে যেতে চাই। বলুন, এ কেমন বেঁচে থাকা যেখানে কষ্ট নেই। ভবিষ্যতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি কাঁদে সে তো অতীতের জন্য বটে। ভবিষ্যতের জন্য কাউকে কখনো কাঁদতে দেখেছেন কি?

জল রেখায় আঁকা কপোলের সব নকশীকাঁথা অতীত সুতোর বুনন। ভবিষ্যতে দাঁড়িয়ে দেখি অতীতের প্রচণ্ড রক্ত ক্ষরণ।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles