9.2 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

যেভাবে উদ্ধার হলেন রহিমা বেগম

যেভাবে উদ্ধার হলেন রহিমা বেগম

ফরিদপুর থেকে উদ্ধার খুলনার দৌলতপুরের রহিমা বেগম কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না; তিনি ‘নির্বাক’ রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

- Advertisement -

শনিবার রাত ২টার দিকে নগরের দৌলতপুর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রহিমাকে উদ্ধারের পর শনিবার রাত ২টার দিয়ে দৌলতপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।

রহিমা বেগম কিভাবে উদ্ধার হলেন এমন প্রশ্নে জাহাঙ্গীর বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। রহিমা কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। সে কারণে তাকে ট্র্যাকিং করা সম্ভব হচ্ছিলো না। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন যে, রহিমা ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে রয়েছেন। আরও খোঁজ নিয়ে তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হন।

এরপর দৌলতপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুর রহমান ও দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছায়। পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখতে পায়, রহিমা বেগম ওই বাড়িতে বসে দুজন নারীর সঙ্গে গল্প করছেন। তবে বাড়ির মালিক কুদ্দুস এ সময় ছিলেন না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুদ্দুসের ছেলে আলামিন, কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

খুলনার মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ অগাস্ট নিখোঁজ হন ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম। এরপর থেকে তার সন্ধান করছিলেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ চার বোন। এনিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ফুলপুরে তার মায়ের লাশ পাওয়া গেছে বলে মরিয়ম মান্নান ফেইসবুক পোস্ট দেন। এরপর এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে তা আলোচনায় আসে।

শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে এক মাস ধরে হদিস না পাওয়া রহিমাকে উদ্ধারের কথা জানান খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা।

রহিমা অপহরণ মামলাটির তদন্ত দৌলতপুর থানা-পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইতে গেছে। তারপরও খুলনা মহানগর পুলিশ মামলাটির ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিলো বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান উপ-পুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি বলেন, রহিমা বেগমের আশ্রয় নেওয়া বাড়ির মালিক কুদ্দুস বেশ কয়েক বছর আগে খুলনার সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন। তখন তিনি রহিমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এরপর তিনি বোয়ালমারীতে চলে যান। রহিমা বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ছিলেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর বোয়ালমারীতে কুদ্দুসের বাড়িতে যান।

রহিমা অপহরণ হয়েছিলেন নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “উনি কোনো জবাবই দিচ্ছেন না; ‘নির্বাক’ রয়েছেন। খাবার-দাবারও খেতে চাইছেন না। জবাব না দিলে এখনই তো কিছু বলা যাচ্ছে না। মামলাটি যেহেতু পিবিআই তদন্ত করছে, তারাই বিস্তারিত উদ্ঘাটন করবেন। রহিমা বেগমকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। পিবিআই চাইলে তাকে হস্তান্তর করা হবে।”

এর আগে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া এক নারীর লাশ নিজের মায়ের বলে দাবি করেছিলেন রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান।

লাশ শনাক্তে গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় যান। এ সময় মরিয়ম লাশটি তার মায়ের দাবি করে নিয়ে যেতে চান। সেখানে লাশের পরিহিত কাপড় দেখে মরিয়ম দাবি করেন, লাশটি তার মায়ের। পরে মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন।

পুলিশের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, “তিনি এসব পরিকল্পিতভাবে করেছেন না, আবেগের বশবর্তী হয়ে করেছেন, সব উন্মোচিত হবে।”

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, রহিমা মূলত স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।

গত ২৭ অগাস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমে আর ফেরেননি রহিমা। সম্ভাব্য সবস্থানে খুঁজেও তার সন্ধান না পেয়ে বাড়ির লোকজন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে রহিমার মেয়ে আদুরি আক্তার অপহরণের মামলা করেন।

আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পুলিশের ওই ইউনিট। রহিমা নিখোঁজের ঘটনায় তার স্বামী হেলাল হাওলাদারসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।

এদিকে রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় আসেন রহিমা অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার রফিকুল আলম ও নুরুল আলমের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় তার দুই ছেলের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে।

রহিমা ও তার সন্তানরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছে দাবি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

একই দাবি করে একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, “রহিমা বেগমের সন্তানরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছে।”

সূত্র : বিডিনিউজ

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles