ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ের ‘দুবাই অ্যাকুয়ারিয়াম অ্যান্ড আন্ডারওয়াটার জু’তে পানির নিচে গিয়ে সরাসরি হাঙরের মুখোমুখি হন তিনি। এদিকে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি অভিনয়জীবনের
এক যুগ পূর্ণ হয়েছে তার। এসব বিষয় নিয়েই কথা হয় মেহজাবিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
হাঙরের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এক কথায় যদি বলি তা হলে বলব- ভয়ঙ্কর। ওখানে যখন ট্রেনিং দিচ্ছিল, শুরুতেই বলেছি ক্যান্সেল। আমাকে দিয়ে হবে না। আর এমনিতেও আমার ঠাণ্ডা বেশি। আমি রীতিমতো কাঁপতে শুরু করি। বারবার মাস্কের ভেতর পানি চলে যাচ্ছিল। আমি মনে করেছি আমাকে দিয়ে হবে না, এটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আলহামদুলিল্লাহ, সবার দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরতে পেরেছি।
এ বছর অভিনয়ের এক যুগ পূর্ণ করেছেন। শোবিজে আসার পেছনে কার সাপোর্ট বেশি ছিল?
শোবিজে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি বাসা থেকে। বাবা-মা সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। একটা মেয়ের ইচ্ছাকে সমর্থন করা, তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন, তার পরিশ্রমকে মূল্যায়ন এবং তার কাজের সুযোগ করে দেওয়া- সবকিছুই ওনাদের কাছ থেকে শিখেছি। বাবা-মা আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। এ কারণে আমি সফলতার সঙ্গে এক যুগ পার করতে পেরেছি। সেই সঙ্গে সমর্থন দিয়েছেন অসংখ্য ভক্ত-দর্শক। কাজের ভালো-মন্দ তারাই বিচার করেন। তাদের বিচার-বিশ্লেষণই আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি।
বর্তমান সময়ে ছোটপর্দার শীর্ষ অভিনেত্রী আপনি। এই অবস্থানে পৌঁছানোর রহস্যটা একটু বলবেন?
আলাদা কোনো রহস্য নেই। অভিনয় শুরুর পর থেকেই একাগ্রতা, আন্তরিকতা দিয়ে কাজের চেষ্টাটা করে গিয়েছি। এই জার্নিতে অনেকের সহযোগিতা পেয়েছি। সহশিল্পী, পরিচালকরা সহযোগিতা করেছেন। চিত্রনাট্যকার, পরিচালকরা আমাকে নিয়ে আলাদা করে ভেবেছেন, তাদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই দিক থেকে বলব, আমি অনেক সৌভাগ্যবান।
আরও পড়ুন :: সত্যিই কি অভিষেকের আগে গাছের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ঐশ্বরিয়ার?
দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে অসংখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এমন কোনো চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা আছে, যেটিতে এখনো অভিনয় করেননি?
অনেক চরিত্র আছে, যেগুলোতে অভিনয় করা হয়নি। আইনজীবী, পাইলট কিংবা জাহাজের ক্যাপ্টেন চরিত্রে অভিনয় এখনো করিনি। এসব চরিত্রে কাজের ইচ্ছা আছে।
মেহজাবিন অনেকের প্রিয় অভিনেত্রী। মেহজাবিনের পছন্দের অভিনয়শিল্পী কে?
এই প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়। কিন্তু ভারতের একটি টিভি অনুষ্ঠান দেখার পর এর উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমি মনে করি, এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে ভয়ানক কিছু ঘটে যেতে পারে। পছন্দের অভিনয়শিল্পীদের কথা বললে একটা তালিকা করতে হয়। আর শেষের দিকে যাদের নাম থাকবে, তাদের মন খারাপ হতে পারে। এতে ওই অভিনয়শিল্পী কষ্ট পেতে পারেন। এটা একজন মানুষের ব্যক্তিজীবনে বেশ প্রভাব ফেলে।
ইদানীং অনেকেই ওটিটিতে ঝুঁকছেন। এই মাধ্যমে কি আপনার আগ্রহ বেড়েছে?
আমি নাটকের মানুষ। এই মাধ্যমে কাজ করেই জীবনের এতকিছু অর্জন। স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া। অনেক মানুষ ওটিটির কাজ না দেখে নাটকই দেখেন, দেখবেন। তাই এই মাধ্যমটি কখনই ছাড়ব না। তবে বাস্তবতা হলো- ফিল্ম বা ওয়েব ফিল্মের বাজেট অনেক বেশি থাকে। সেখানে গল্পের ডেভেলপমেন্ট, স্থায়িত্বকাল বেশি থাকে। দুই মাধ্যমে দুই রকম ভালো লাগা কাজ করে।
বড়পর্দায় অভিনয় নিয়ে কিছু ভাবছেন?
এখনই বলতে পারছি না। কারণ চলচ্চিত্র হলো বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। এই মাধ্যমে কাজ শুরুর আগে নিজেকে ভালো করে ঝালিয়ে নিতে চাই। এর ফাঁকে ভালো কোনো অফার এলে ভেবে দেখব।
অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোটি ভিউয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছে আপনার নাটক। এ বিষয়টি কেমন লাগে?
চমৎকার। তবে এ আনন্দ কিন্তু আমার একার নয়, পুরো টিমের। নাটক যত দর্শক দেখবেন, কাজের চাহিদা তত বাড়বে। কাজের চাহিদা বাড়লে সবার কাজ বাড়বে। সেই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিও সামনে এগিয়ে যাবে।
কিন্তু নাটকসংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলেন ‘ভিউ’ ‘ভিউ’ করে এই মাধ্যমকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
এসব কথা যারা বলেন, তারাই বিষয়টি নিয়ে ভালো বলতে পারবেন। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বলার মতো এত বড় মানুষ আমি এখনো হইনি। নিজের কাজ নিয়েই ভাবি। দর্শকদের ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চিন্তা করি।
নতুন যারা অভিনয়ে আসতে চান, তাদের উদ্দেশে কী বলতে চান?
পুরুষতান্ত্রিক এই ইন্ডাস্ট্রিতে যেসব তরুণ-তরুণী স্বপ্ন দেখে বৈষম্যকে হার মানিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাদের একটা বার্তাই দিতে চাই- নিজেকে নিয়ে কাজ করতে হবে। তোমার কাজই তোমাকে সমতা এনে দেবে। তোমার পরিশ্রমের সামনে যেন বৈষম্যকারীরাও ছোট হয়ে যায়।