-0.3 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

পরীমনি কাণ্ডে ধৃত অমির অফিসে প্রচুর পাসপোর্ট উদ্ধার, তারপর কী হলো?

পরীমনি কাণ্ডে ধৃত অমির অফিসে প্রচুর পাসপোর্ট উদ্ধার, তারপর কী হলো?

ক্লাবপাড়ার পরিচিত মুখ তুহিন সিদ্দিকী অমি। চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে জানাশোনা ছিল তার। দুবাই ও মালয়েশিয়ায় অমির বাড়িতে (সেকেন্ড হোম) গিয়েছেন পরীমনি। তারা দুজন একসঙ্গে ঘুরেও বেড়িয়েছেন।

- Advertisement -

কিন্তু ঢাকার অদূরে বিরুলিয়ায় একটি ক্লাবে মধ্যরাতে পরীমনিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টা মামলায় গত বছরের ১৪ জুন গ্রেপ্তার হন অমি। সাভার থানায় করা পরীমনির মামলার দুই নম্বর আসামি অমি নাকি তাকে ফাঁদে ফেলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন- এজাহারে এমনটি উল্লেখ করা হয়। ওই ঘটনায় আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।

পরীমনিকাণ্ডে গ্রেপ্তারের পর অমির দক্ষিণখানে রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে অভিযান চালিয়ে ১০২টি পাসপোর্ট উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে প্রতারণা করে অবৈধভাবে উপার্জিত শতকোটি টাকার মালিক অমি মানবপাচার, হুন্ডি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। বিদেশে কর্মী পাঠানোর সূত্র ধরে সাবেক এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল অমির।

অর্থ ও মানব পাচার মামলায় কুয়েতের আদালতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুলের চার বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর দেশে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়। তিনি এখন কুয়েতের কারাগারে বন্দি।

এদিকে অর্ধডজন মামলার আসামি অমি এখন কোথায়? তার মামলারগুলোর অগ্রগতিই বা কত দূর? এখনো কি ক্লাবপাড়ায় তার আনাগোনো রয়েছে? এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে।

মানব পাচার মামলায় জনশক্তি রপ্তানিখাতের সমালোচিত ও বিতর্কিত তুহিন সিদ্দিকী অমির বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে সিআইডি।

কিন্তু তার আগেই গত মার্চে জামিন পান অমি। এরপর দেশেই ছিলেন। বর্তমানে অমি দেশের বাইরে রয়েছেন বলে তার ঘনিষ্টজন সূত্রে জানা যায়। তবে কোন দেশে গেছেন তা জানায়নি সূত্র।

তাছাড়া অমির কাছে পাওয়া (অভিযানে উদ্ধার) বেশ কিছু পাসপোর্ট অবৈধভাবে রাখা ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। তারা বলছে, পাসপোর্ট উদ্ধারের মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এ মামলায় দ্রুতই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

কে এই অমি

অমির গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। সেখানে অনেক সম্পদ গড়েছেন তিনি। অবৈধভাবে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হওয়ায় বনে গেছেন প্রভাবশালী। এসএসসির গণ্ডি পেরোতে না পারা অমির রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে আনাগোনা ছিল নৈমিত্তিক।

অমির বাবা তোফাজ্জল হোসেন একসময় বিদেশে ছোটখাটো চাকরি করতেন। এরপর দেশে ফিরে রাজধানীর আশকোনায় ‘সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন।

ওই ট্রেনিং সেন্টারের আড়ালে অমি নারী পাচার চক্রে জড়িয়ে পড়েন বলে অনেকে জানিয়েছে। বৈধ-অবৈধভাবে শত শত কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে ও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন তিনি। দক্ষিণখানে তাদের (অমি ও তার পরিবারের) একাধিক সুরম্য বাড়ি ছাড়াও উত্তরা ও আশকোনায় একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে। এসব এলাকায় তাকে একনামে চেনে সবাই।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক একজন মহাসচিবের সঙ্গে অমির দারুণ সখ্যের কথাও জানা যায়। এই সখ্যের সুবাদে অমি তার জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান আইএসএমটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় একচেটিয়া কর্মী পাঠানোর সুযোগ পান। একই সঙ্গে তিনি মালয়েশিয়াভিত্তিক মানব পাচারকারী চক্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ আছে। মালয়েশিয়ার একজন অতি বিতর্কিত জনশক্তি ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে অমি হয়ে ওঠেন এই চক্রের ঘনিষ্ঠজন।

অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে সেকেন্ড হোমও গড়েছেন অমি। দক্ষিণখানে একটি রিসোর্টের আড়ালে প্রায় প্রতিদিন মদ-জুয়ার আসর বসাতেন। এসব তথ্য তার ঘনিষ্ঠদের সূত্রে প্রচলিত।

অমি ও তার বাবার বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসার অভিযোগও আছে। অমি একসময় ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেনও বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা ভোল পাল্টে ফেলেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন

অমির কাছে বেশ কিছু পাসপোর্ট অবৈধভাবে ছিল জানিয়ে মামলার তদারকি কর্মকর্তা এসপি খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে হওয়া মানবপাচার মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে পাসপোর্ট মামলার তদন্ত চলছে। দ্রুতই চার্জশিট দেয়া হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে খালিদুল হক বলেন, ‘অমি তার লাইসেন্সের বিপরীতে এত পাসপোর্ট জমা নিতে পারে কি না এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। যতগুলো পাসপোর্ট তার লাইসেন্স ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডকুমেন্টসের সঙ্গে সমর্থনযোগ্য সেগুলো ‘বৈধ’। এর বাইরে অন্য সব পাসপোর্ট ‘অবৈধ’ গণ্য হবে।’

উদাহরণ দিয়ে এসপি খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, `যেমন- প্রবাসী মন্ত্রণালয় থেকে ৫০০ লোক পাঠানোর অনুমতি পেয়েছেন কেউ, কিন্তু সেখানে যদি ৭০০ পাসপোর্ট নেওয়া হয়, তাহলে সেটা বৈধ হয়নি। এতে তিনি অভিযুক্ত হবেন। আমরা তার (অমি) কাছে কিছু কাগজ চেয়েছি।’

এসপি আরও জানান, অমির হেফাজত থেকে বেশ কিছু পাসপোর্ট পাওয়া গেছে, যা অবৈধভাবে তার কাছে ছিল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles