8.4 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী পুরনোরাই নর্থ সাউথের ট্রাস্টি!

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী পুরনোরাই নর্থ সাউথের ট্রাস্টি!

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। বর্তমানে সেই মামলায় চারজন কারাগারে রয়েছেন।

- Advertisement -

জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতাসহ নানান অভিযোগ থাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী ১২ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড নতুন করে গঠন করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বাদ পড়েছেন পারটেক্স গ্রুপ সংশ্লিষ্টসহ পুরনোরা। ১৬ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়।

তবে নর্থ সাউথের ওয়েবসাইটে এখনো আগের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ছবিসহ নাম রয়েছে। গেল পাঁচ দিনেও নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের নাম-পরিচয় আপডেট করা হয়নি। কেন করা হয়নি সেই বিষয়ে কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।

আগের ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও এখনো তাদের নাম থাকায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীসহ নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা বলেন, `এ বিষয়টি দেখিনি তো, এখন শুনলাম। যদি এমন হয়, তবে তা ঠিক হয়নি। আগের ট্রাস্টি বোর্ডের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। অভিভাবকরা কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখানে তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করান। আর সেই টাকা যারা তছরুপ করেছে, তাদের প্রতি এখনও কেন এত স্বজনপ্রীতি আমরা জানি না।’

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী পুরনোরাই নর্থ সাউথের ট্রাস্টি!

কারাগারে যারা

দুদকের মামলায় গত ২২ মে আগাম জামিন নিতে গিয়ে আটক হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ট্রাস্টি। সেখান থেকে তাদের শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়। পরদিন তাদের ঢাকার স্পেশাল সিনিয়র জজ আদালতে তাদের হাজির করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলছে। কারাগারে থাকা চার ট্রাস্টির মধ্যে রেহানা রহমান কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি আছেন। অন্য তিনজন ট্রাস্টি এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।

হাইকোর্টে জামিন শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি হত্যার চেয়ে বিপজ্জনক অপরাধ। একটি হত্যা একজন ব্যক্তি বা পরিবার বা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।’

এদিকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ পলাতক রয়েছেন। তাছাড়া গত ১ জুলাই আরেক ট্রাস্টি আমিন মো. হিলালীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন। পরে তার ভাই রফিকুল হিলালী উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তাকে পাওয়া গেছে।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী পুরনোরাই নর্থ সাউথের ট্রাস্টি!

নতুন ট্রাস্টিতে কারা এবং মন্ত্রণালয়ের আদেশে যা আছে

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া আদেশে যাদের ট্রাস্টি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা ট্রাস্টি হিসেবে আছেন টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কাশেম, মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল, বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ সোহেল ফসিউর রহমান ও ইউনাইটেড ফসফরাস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ।

ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে আছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। আর উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারী হিসেবে বোর্ডে আছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ড. জুনাইদ কামাল আহমাদ, ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন, উদ্যোক্তা জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও শীমা আহমেদ।

আদেশে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) কিছু সদস্য ও কর্মকর্তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ, জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে প্রমাণিত হয়, যা দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘন।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চার সদস্য আর্থিক দুর্নীতির দায়ে দুদকের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে কারাবন্দি রয়েছেন। তাছাড়া ট্রেজারার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি নথিতে জালিয়াতির ঘটনায় একজন ট্রাস্টির বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিতে অন্তর্ভুক্ত থাকা সমীচীন নয় বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বোর্ড অব ট্রাস্টি পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনা করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং সরকারের আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত সভার সুপারিশ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর উদ্যোক্তা ট্রাস্টি ও উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারীদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি পুনর্গঠন করা হলো।

বিলাসবহুল গাড়ি কেলেঙ্কারি

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের জন্য মার্সিডিজ বেঞ্জ, টয়োটা প্রাডো টি এক্স, রেঞ্জ রোভার ভোগ পি ৪০০ সহ বিভিন্ন মডেলের ১২টি বিলাসবহুল গাড়ির কেনা হয়। যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে ১০টি গাড়ি বিক্রি করে টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৭ মে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ধারা ৪৪ (১) অনুযায়ী প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাধারণ তহবিল থাকবে এবং ৪৪ (৭) ধারা অনুযায়ী সাধারণ তহবিলের অর্থ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় না করে জানুয়ারি ২০১৯ থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত ১২টি গাড়ি কেনে, যার মধ্যে ১০টি বিলাসবহুল। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এসব গাড়ির মধ্যে ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি খোলা দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রয় এবং সেই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে ব্যয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে সেগুলো বিক্রি করে টাকা জমা করা হয়।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles