6.3 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

মুরগির স্বামীর সহজ ঝোল রেসিপি

মুরগির স্বামীর সহজ ঝোল রেসিপি
ফাইল ছবি

রান্নার রেসিপি আসলে টু দ্যা পয়েন্টে না হলে মনে থাকে না। তাই সরাসরি চলে যাচ্ছি রান্নায়। অনেকে রান্না আর ফোন একসাথে করে। শেষে দেখা যায় ফ্রিজ থেকে গরু বের করতে গিয়ে মাছ ভিজিয়ে রেখেছে, লবন দিয়েছে ডবল, ভাতও চুলায় দিতে ভুলে গেছে; ছেলেপেলে খিদায় কান্নাকাটি করছে। তাই গল্পের সময় গল্প, রান্নার সময় রান্না। বাঙালিরা আড্ডার সুযোগ পেলে হলো..
.
উপকরণ:
১. সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত ৩-৪ কেজি ওজনের পুরুষ মোরগ ১টা
২. নতুন আলু আধা কেজি
৩. আধা পোয়া করে আদা, রসুন, জিরা, হলুদ, ধনিয়া বাটা
৪. শুকনা মরিচ বড় সাইজ ১০-১২টা, আর যদি পারেন সাথে চার পাঁচটা কাশ্মীরি শুকনা মরিচ নেবেন, ঝোলের রং লাল হবে
৫. সয়াবিন তেল দেড়শো মিলি
৬. এলাচ, দারুচিনি, তেঁজপাতা, আস্ত গোলমরিচ
৭. জিরা ভেজে গুঁড়া করা পঁচিশ গ্রাম
৮. লবন পরিমানমত
৯. পেঁয়াজ কুঁচি এক পোয়া
১০. নেইল কাটার
.
মোরগের দোষ হলো মুড়ি খাওয়ার মতো পরকীয়া করে, আর বড়ই গাছ ঝাঁকানোর মতো ছ্যাঁকা দিবে কথায় কথায়। তাই সারাক্ষন মহিলাদের দিকে নজর দেয়, এরকম মোরগকে আগে ধরবেন। মুরগির সংসার ভাগ্য খুব খারাপ। মোরগ খুব বেশি কচি বা খুব বেশি বুড়া হলে স্বাদ কমে যাবে। তাই ধাড়ি, বড়, ঘাটের মরা না কেনাই ভাল। বয়স এক বছরের কাছাকাছি হলে ভাল। দেখতে চকচকে, হান্ডসামগুলোর টেস্ট বেশি। কীসের রাসপুটিন, কীসের জর্জ মাইকেল.. দুনিয়ার একমাত্র প্লে বয় হলো মোরগ। দেখে মনে হয় ব্রিটেনের রাজপ্রাসাদ পাহারা দেবার জন্য দাঁড়ানো বেয়ারসকিন হেট টুপি মাথায় রাইফেল কাঁধে স্মার্ট, গম্ভীর সিপাহী। আর রোদে যখন সোনালী, লালচে, নীলচে-সবুজ ত্যালতেলে পাখনার ঝালোর ঝিকমিক করে ভাই রে বই… মুরগিগুলা তো আর এমনি পালানোর ভাণ করে মিটিমিটি হেসে আস্তে আস্তে দৌড়ায় না.. এদের কাছে ধরা দিয়ে জীবন ধন্য মনে করে। যাই হোক, অন্যদিকে না যাই, আসল কথায় আসি।
.
প্রণালী:
মোরগের মাংস ছোট করে কাটবেন, তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হবে। আজকালকার দিনে অবশ্য বয়স বোঝা খুব টাফ, দোকানদার পর্যন্ত মোরগের বয়স লুকায়, মুরগি হলে তো কথাই নাই। নেইল কাটার দিয়ে মোরগের পায়ের নখ ভালমতো ছেঁটে নেবেন। এরা খুব নোংরা; জীবনেও নখ কাটে না, পাও ধোয় না। বাটিতে পানি নিয়ে বিশ থেকে তিরিশ মিনিট শুকনামরিচগুলো ভিজিয়ে রেখে তারপর বেটে নিবেন বা ব্লেন্ড করবেন। মাংসে যখন এক গাদা ঝাল শুকনামরিচের বাটা দেওয়া হবে, তখন ব্যাটারা টের পাবে, কত মোরগের পেছনে কত মুরগি দৌড়ায়!
.
ওসব বাদ, রেসিপিতে আসি।
কড়াইতে তেল গরম হলে পেঁয়াজ হালকা বাদামি করে ভেজে নিয়ে সব মশলা দিয়ে মিনিট দশেক ভাজা হলে দেখবেন মশলা থেকে তেল উপরে উঠে আসছে। তখন মাংস ছেড়ে দিয়ে মিনিট বিশেক মিডিয়াম-হাই হিটে কষাবেন। তবে বেশি পোড়া পোড়া করে কষানোর পক্ষপাতী আমি নই। বেশি পোড়ালে মশলার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়; স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল না। তাই স্বাদ আর স্বাস্থ্য; এ দুটার ব্যালান্স করাই ভাল।
.
কষানো হলে গরম পানি ঢেলে আধা ঘন্টা ফুটিয়ে নামানোর আগে আলু ছেড়ে দিন। যারা আলু খান না, তারা দিবেন না। পনেরো মিনিটে আলু সেদ্ধ হয়ে যাবে। নামানোর আগে ভাজা জিরার গুঁড়ো ছিটিয়ে, কিছু আস্ত কাঁচামরিচ দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম মোরগ।
.
মোরগের কথা মনে হলেই আমার শুধু কুস্তিগিরদের কথা মাথায় আসে। পাকানো পায়ের পেশির কারণে। এদের হাঁটুর নিচটা দেখছেন? ছোটকালে একবার চট্টগ্রামে প্যারেড গ্রাউন্ডে রেসলিং দেখতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ জনতার ভিড়ের মধ্যে সুনামি ঢেউ খেলে গেলো; ‘ডমিনো ইফেক্ট’ এর মতো হুড়মুড় করে সবাই ঝড়ে সটান হওয়া ধানক্ষেতের মতো চিৎপটাং হয়ে গেলাম। পরে শুনলাম কুস্তিগীর জলিল নাকি ভীড়ের মধ্যে হাত ঘড়িতে কয়টা বাজে দেখতে গিয়ে..। এসব বলার কারণ হলো, দুনিয়ার এক নাম্বার হ্যান্ডসাম মানুষটা যেমন বাংলাদেশের ছিল, তেমনি দুনিয়ার এক নম্বরের হ্যান্ডসাম প্রাণীর বাসও চট্টগ্রামে। আমাদের জন্য গর্বের এই তেলতেলে, চকচকে পাহাড়ী মোরগ। এরা “কথা কম, কাম বেশি” করা লোক।
.
.
যেভাবে খাবেন:
মোরগ রান্না করলে বেশি আইটেম করবেন না। সাথে কাঁকরোল ভাজি বা ডুমুর ভাজি রাখবেন, আর বাগাড় দেয়া পাতলা মসুরের ডাল। ফ্রেশ লেবু মাস্ট। আর মোটা ইরিধানের ভাত। খেলা জমবে!
.
প্রথমে কাঁকরোল ভাজি দিয়ে এমনভাবে খেতে থাকবেন, যেন মোরগের কথা ভুলেই গেছেন। মোরগের পেটানো বাইসেপ্স বা ট্রাইসেপ্স পেশিতে যখন কামড় দেবেন ভাই রে ভাই.. মনে হবে সব ভাত যেন মাংসকে আলিঙ্গন করতে একসাথে উঠে আসতে চাইছে প্লেট থেকে। আলু সহকারে যখন কচকচে চামড়া মুখে পুরবেন… ট্রেভর জেম্স এর মতো মুখমন্ডলের ব্যক্তিত্ব হবে দেখার মতো! শুধু “ওয়াও ওয়াও, মমমমম..” শব্দ বের হবে মুখ থেকে। একটা গলার পিস দিয়ে কমপক্ষে পাঁচ নলা ভাত চিবানো যায়। আমি তো গলা যতই শক্ত হোক, একদম চিবিয়ে বিড়ালের মতো ক্যাত করে গিলে ফেলি। আর দয়া করে রাণ নিয়ে যুদ্ধ বাধাবেন না, মোরগের ঝুটি থেকে শুরু করে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত স্বাদের ডিব্বা। তবে মাথাটা কাকে দিচ্ছেন লিখে রাখবেন, নেক্সট টাইম একই মানুষ যেন দুইবার না পায়, খুব সাবধান!
.
প্রশ্ন: আংকেল, এখনো রান্না শিখিনি। আমি কি মোরগ রানতে পারবো?
উত্তর: তাহলে মোরগ দোকান থেকেই কেটে ধুয়ে আনবি। কারী মশলা কিনবি। তিন টেবিলচামচ মশলা, আস্ত পিঁয়াজ, আস্ত রসুন, আস্ত আদা তেল-লবন-কাঁচামরিচ দিয়ে মাখায়ে প্রেশার কুকারে চড়িয়ে দিবি। ব্যাস তৈরী হবে তোর মোরগ।
প্রশ্ন: ভাই, এভাবে আর কী কী রান্না করা যাবে?
উত্তর: গরু, মুরগি, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, গজার মাছ
– তাইলে শুধু মোরগের কথা লিখলেন যে?
– ঐটা বুঝবেন না..।

প্রশ্ন: ভাইয়া, স্বাদে চেঞ্জ আনতে কী করবো?
উত্তর: মশলা কষানোর সময় দু-তিনটা বড় পাকা টমেটো দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন: মামা, মোরগ রান্নায় কী কী সবজি দেওয়া যাবে?
উত্তর: আলু, কাঁচা পেঁপে, পটল, পাতাকপি দিতে পারিস। ঝোল ঝোল রাখবি।
প্রশ্ন: দুলাভাই, এই মোরগ ভাত ছাড়া আর কী দিয়ে খাওয়া যায়?
উত্তর: চালের আটার রুটি, সাদা পোলাওয়ের সাথে।

- Advertisement -

প্রশ্ন: দোস্ত মোরগ পালতে চাই। মোরগ কতদিন বাঁচে?
উত্তর: যদি শিয়াল ধরে না খায়, আর তুই যদি আগেই জবাই না করিস, তখন পাঁচ থেকে দশ বছর বাঁচার কথা।
প্রশ্ন: দুলাভাই, রান্নার ছবি কোই?
উত্তর: সেই দুই বছর আগে শেষ মোরগ রানছিলাম তো, ছবি খুঁজে পাইনি।
প্রশ্ন: চাচা, বাটা মশলা ছাড়া হবে না?
উত্তর: হবে, গুঁড়া মশলা দিয়েও ভালো হয়।
প্রশ্ন: মোরগ খাওয়ার সুবিধা কী চাচা?
উত্তর: মোরগের পেটানো পেশির মাংসে ফ্লেভার ভালো। আর মুরগিরাও কড়াইতে মোরগের বেহাল দশা দেখে কিছুটা শান্তি পায়, খুশি হয়..। এই যে মোরগের ইহকালেই এতো মুরগি নিয়ে ফুর্তি, এতো লাফালাফি, দুইনাম্বারি; সব কোথায় যাবে চামড়া ছিলে যখন লবন, মরিচ বাটা মাখানো হবে?

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles