5.4 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

খেলাপি আর মূলধন ঘাটতিতে ‘দুর্বল’ ১০ ব্যাংক, যা বলছেন গভর্নর

খেলাপি আর মূলধন ঘাটতিতে ‘দুর্বল’ ১০ ব্যাংক, যা বলছেন গভর্নর

সরকারি ও বিশেষায়িত ছয়টিসহ দশ ব্যাংক রুগ্নদশায়। খেলাপি ঋণ, আমানতের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি আর মূলধন ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলো এই অবস্থার মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন যে ব্যাংকগুলোকে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

- Advertisement -

এই দশটি ব্যাংক হলো—সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, পদ্মা, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। এগুলোর মধ্যে সরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংক ছয়টি। বেসরকারি তিনটি আর একটি বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণ, আমানতের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি এবং মূলধন ঘাটতিতে ব্যাংকগুলোর এই বেহাল অবস্থা। এই ব্যাংকগুলোকে নিবিড় তত্ত্বাধানে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর র‌উফ তালুকদার এই ব্যাংকগুলোর বিষয়ে উদ্যোগের কথা জানান। বলেন, ‘ব্যাংক খাতে সুশাসন আনতে ১০টি ব্যাংককে নিবিড় তত্ত্বাবধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এই দশটি ব্যাংক তিন বছর মেয়াদী চুক্তি করবে। চুক্তির আওতায় ব্যাংকগুলো তাদের তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা জানাবে। আর সেই তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেই অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি তদারকি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

তবে কেবল ১০টি ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ সমর্থন করছেন না আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সব ব্যাংককেই তদারকির প্রয়োজন রয়েছে। আগেও এমন তদারকির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে ইতিবাচক ফল আসেনি। ব্যাংকখাতে সুশাসন ফেরাতে সব ব্যাংকের ওপর কড়া পর্যবেক্ষণ দরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই দশটি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। তাদের বিতরণকৃত মোট ঋণের মধ্যে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা খেলাপি। ব্যাংকটির মোট ঋণের হিসাবে এটি ৯৯ শতাংশ।

এরপর খারাপ অবস্থায় রয়েছে ফারমার্স ব্যাংক থেকে নাম বদলে হওয়া পদ্মা ব্যাংক। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৬৮ শতাংশ।

আইন অনুযায়ী ব্যাংকের মোট আমানতের শতকরা ৮৭ টাকার বেশি বিনিয়োগের সুযোগ না থাকলেও পদ্মা ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) ৯৮ শতাংশের ঘরে। এছাড়া ব্যাংটির মূলধন ঘাটতি ১০৫ কোটি টাকা।

সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকের ২৫ ভাগই জুন শেষে খেলাপি হয়ে পড়েছে। টাকার অংকে ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটি প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা। মার্চভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯১৫ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে জনতা ব্যাংক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৩ শতাংশই খেলাপি। টাকার অঙ্কে এটি ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের হার ৯১ শতাংশ, যা নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।

সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকটির বিতরণকৃত মোট ঋণের ২১ শতাংশ। আর তাদের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকটি মূলধর ঘাটতি ৮২৯ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৪৬৬ কোটি, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ২ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা এবং ১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। প্রভিশন ঘাটতি ২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। ১ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি ১২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকা আরেকটি বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংক। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের হার ৯৭ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্ধারিত সীমার অনেক ওপরে। এছাড়া এক্সিম ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles