9.2 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

শোক ও শপথের ১৫ আগস্ট

শোক ও শপথের ১৫ আগস্ট

১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসের জঘন্যতম, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শোকাবহ দিন।

- Advertisement -

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বিশ্ব মানবতাকে দংশনকারী হন্তারক হায়েনারা গোটা বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করেছিল। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে ঘাতকের নির্মম বুলেটে বিদ্ধ হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার পরিবার।

অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু ঘাতকের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও খুনিদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ বঙ্গবন্ধুকে দেখেও হাত কাঁপেনি খুনিদের। গুলি চালিয়েছে নরপশুরা।

সেদিন ঘাতকের বুলেটে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ছোট্ট শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের, কর্নেল জামিল।

খুনিদের বুলেটে সেদিন আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকে। ওই সময় দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

জাতির জন্য গভীর শোক ও বেদনার দিবসটি হত্যা, ষড়যন্ত্র, ক্যু রুখে দেওয়ার শপথ গ্রহণেরও দিন। গণতন্ত্রের পথে সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিকতায় দেশ শাসনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ প্রতীতিতে সমুন্নত হওয়ারও দিন।

বস্তুত, ১৫ আগস্টে ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। বরং স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী চক্রের যে কোনও অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকার শক্তিতে উজ্জীবিত হয়েছে বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি।

ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, স্বাধীন বাংলাদেশে কোনও বাঙালি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না বলে দৃঢ়বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধু। সেজন্য তিনি গণভবনের পরিবর্তে থাকতেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে। যে বাড়িটি বাঙালির স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। এখানে থেকেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে সর্বশক্তি নিয়ে ব্রতী ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ বিচারের হাত থেকে ১৫ আগস্টের খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন দেন। অতীতের সেইসব জঘন্যতম অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাঙালি ১৫ আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধু-কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপান্তরের পথে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। সকল শাঠ্য-যড়যন্ত্রকে পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনায় লড়াকু ও অকুতোভয় বাঙালি ও বাংলাদেশ আবার মাথা উঁচু করে সগৌরবে আসীন হয়েছে বিশ্বসভায়।

১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস এখন সরকারি ছুটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম অবহেলিত থাকতো জনক হারানোর দিনটি। এখন দিনটি সরকারিভাবে শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা।

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তবে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গের হত্যাকারী পাঁচ আত্মস্বীকৃত খুনির ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।

দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন। যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হবে করোনা মহামারির সংক্রমণ রোধে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

প্রতিবছরের মতো এবারও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকালে সাড়ে ৮টায় ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ আগস্ট শোক ও বেদনার মধ্যেও সমগ্র জাতিকে ঐক্য, উন্নয়ন ও প্রগতির পথে চলার শপথে উদ্ভাসিত করে। স্বাধীনতার শত্রু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধবাদী অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দেওয়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান করে বাঙালি ও বাংলাদেশকে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles