4.8 C
Toronto
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

এখনো রহস্য হয়েই আছে ফ্লাইট ৪০১-এর ‘ভুতুড়ে দুর্ঘটনা’

এখনো রহস্য হয়েই আছে ফ্লাইট ৪০১-এর ‘ভুতুড়ে দুর্ঘটনা’

১৯৭৩ সালের ঘটনা। ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্লাইট ৩১৮-এ যাত্রা করছিলেন। তার পাশের আসনে বসেছিলেন ওই বিমানের ক্যাপ্টেন। কিছুক্ষণ বার্তালাপ চলার পর তিনি খেয়াল করলেন, ক্যাপ্টেন যদি তার পাশে বসে থাকেন, তবে বিমান চালাচ্ছেন কে?

- Advertisement -

তাড়াহুড়ো করে তিনি পাইলট কেবিনের দিকে পা বাড়াতে যাবেন, তখনই তিনি ভালো করে ক্যাপ্টেনের মুখের আদল লক্ষ্য করেন। এই মুখ তার খুব পরিচিত। ফ্লাইট ৪০১ বিমানের ক্যাপ্টেন রবার্ট অ্যালবিন লফ্ট এতক্ষণ তার সঙ্গে গল্প করছিলেন। তবে এ কী করে সম্ভব? বব তো অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। তিনি কি তবে ভূত দেখলেন?

এখনো রহস্য হয়েই আছে ফ্লাইট ৪০১-এর ‘ভুতুড়ে দুর্ঘটনা’

না, শুধু ক্যাপ্টেন লফ্টকেই নন, ফ্লাইট ৪০১ বিমানের সহ-পাইলট ফার্স্ট অফিসার অ্যালবার্ট জন এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার সেকেন্ড অফিসার ডোনাল্ড লুইসের প্রেতাত্মাও দেখেছেন অনেকে। কখনো তারা ক্রু সদস্যদের আগাম দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছেন, কখনো যাত্রা শুরু করার আগের মুহূর্তে বিমানে কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ রয়েছে কি না, তা-ও জানিয়েছেন বিমানকর্মীদের।

বিমানকর্মীরা সত্যি সত্যিই ভূত দেখছেন, নাকি এ সবই গুজব, তা জানতে বিমান সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মীরা তদন্ত শুরু করেন। ফ্লাইট ৪০১ বিমানের এর সঙ্গে সম্পর্কই বা কী?

এখনো রহস্য হয়েই আছে ফ্লাইট ৪০১-এর ‘ভুতুড়ে দুর্ঘটনা’

মূল ঘটনার সূত্রপাত ১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বছরের শেষে ১৬৩ জন যাত্রী, ১০ জন বিমানকর্মী এবং তিন জন ক্রু সদস্য নিয়ে নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স ফ্লাইট-৪০১ যাত্রা শুরু করে। এই বিমানের ক্রু সদস্যরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ ছিলেন। ক্যাপ্টেন লফ্টের ৩২ বছরের কর্মজীবনে মোট উড়ানের সময় ছিল ২৯,৭০০ ঘণ্টা। এমনকি লুইসের অভিজ্ঞতাও কম ছিল না। তার মোট উড়ানের সময় ছিল ১৫,৭০০ ঘণ্টা। সহ-পাইলট জনই সেই তুলনায় অনভিজ্ঞ ছিলেন। তার কর্মজীবনে মোট উড়ানের সময় ছিল ৫,৮০০ ঘণ্টা।

বিমান যখন মায়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের মুখে, তখন রাত ১১.৩২। ক্যাপ্টেন ল্যান্ডিং গিয়ারের লিভারটি নিচে নামানোর সময় লক্ষ্য করেন, নোজ গিয়ারের সঙ্গে যুক্ত ইন্ডিকেটরের আলো জ্বলছে না। সাধারণত, বিমান টেক-অফের সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের লিভার নিচে নামালে ইন্ডিকেটরটি জ্বলে ওঠে। এর ফলে বোঝা যায়, ল্যান্ডিং গিয়ারটি খুলেছে কি না।

এখনো রহস্য হয়েই আছে ফ্লাইট ৪০১-এর ‘ভুতুড়ে দুর্ঘটনা’

বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার না খুললে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী, তাই পাইলটরা বিমানটিকে দু’হাজার ফুট উচ্চতায় অটোপাইলট মোডে রেখে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারকে ডাকেন। তিনি পুরো ইন্ডিকেটর সিস্টেমের পরীক্ষা করেন। বিমানের সব আলো জ্বলে উঠলেও ইন্ডিকেটরের আলো কিছুতেই জ্বলছিল না। তিনি নিচের কেবিনে গিয়ে দেখারও চেষ্টা করেন। পেছনের দিকে ল্যান্ডিং গিয়ার খুললেও নোজ ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধই ছিল। এই অবস্থায় কোনোভাবেই বিমান অবতরণ করানো যাবে না। তাই তারা আকাশপথেই কিছুক্ষণ বিমানটি ‘হোল্ডিং পজিশন’-এ রাখবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিমানটি যে নিজে থেকেই ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে, তা পাইলটের নজর এড়িয়ে যায়।

৯০০ ফুট উচ্চতায় নেমে যায় বিমানটি। পাইলট সেই মুহূর্তে বিমানটিকে ১৮০ ডিগ্রি ঘোরাতে উদ্যোগী হলে বিমানের ফার্স্ট অফিসার খেয়াল করেন, বিমানটি আর আগের উচ্চতায় নেই। ক্যাপ্টেন লফ্টকে তিনি এই বিষয়ে জানাতে যাবেন, ততক্ষণে বিমানটি নির্দিষ্ট দিকে ঘুরিয়ে ফেলেছিলেন লফ্ট। মুহূর্তের মধ্যে এভারগ্লেডস জলাভূমির মধ্যে আছড়ে পড়ে বিমানটি। বিমানের পাইলট-সহ দু’জন ক্রু সদস্য, দু’জন বিমানকর্মী এবং ৯৬ জন যাত্রীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। ৭৫ জনকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।

এখনো রহস্য হয়েই আছে ফ্লাইট ৪০১-এর ‘ভুতুড়ে দুর্ঘটনা’

দুর্ঘটনার পর বিমান সংস্থার তরফে ফ্লাইট ৪০১ বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। যে অংশগুলো তখনো অক্ষত ছিল, তা সামান্য মেরামত করে ওই সংস্থার অন্য বিমানে ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ যন্ত্রপাতিই ফ্লাইট ৩১৮-এ লাগানো হয়েছিল। তারপর থেকেই বিমানকর্মী থেকে শুরু করে ক্রু সদস্যরা ফ্লাইট ৪০১ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত ক্যাপ্টেন, সহ-পাইলট এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের প্রেতাত্মা দেখতে পেতেন। এক সময় এমনও হয়েছিল যে, ইঞ্জিনিয়ার লুইস বিমানকর্মীদের দেখা দিয়ে সাবধান করেছিলেন, বিমানের ইঞ্জিনে যান্ত্রিক গোলযোগ রয়েছে, বিমানে আগুন লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাইলট ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই বিমানবন্দরে ফিরে যান। পরীক্ষা করে দেখা যায়, লুইস ঠিকই বলেছিলেন। এ রকম বহু বিমানকেই দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন ফ্লাইট ৪০১-এর ক্রু সদস্যরা।

এখনো রহস্য হয়েই আছে ফ্লাইট ৪০১-এর ‘ভুতুড়ে দুর্ঘটনা’

ওই বিমানে কি সত্যিই কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ ছিল, না কি বিমানটি গোড়া থেকেই ভুতুড়ে ছিল, এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলেছে প্রচুর। এমনকি ১৯৭৮ সালে এই ভুতুড়ে কাণ্ডকে কেন্দ্র করে সিনেমাও তৈরি করা হয়েছিল। তবে ফ্লাইট ৪০১ -এর দুর্ঘটনা এখনো রহস্য হয়েই থেকে গিয়েছে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles