7.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

সেনা-পুলিশ পরিচয়ে রূপান্তরিত নারীকে নির্যাতন তদন্তে যা পেল পুলিশ

সেনা-পুলিশ পরিচয়ে রূপান্তরিত নারীকে নির্যাতন তদন্তে যা পেল পুলিশ - the Bengali Times

ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক সানি নিজেকে সেনা কর্মকর্তা, আর তার কথিত স্ত্রী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম-পরিচয় ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু ট্রান্সজেন্টার এক নারীকে ফাঁদে ফেলতে গিয়ে ধরা খেলেন এই প্রতারক জুটি।

- Advertisement -

চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এক ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত নারীকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ‘অভিনব ফাঁদ’ গড়ে তুলেছিল ফুয়াদ ও সাইমা দম্পতি। তারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেখা করা, তারপর অর্থকড়ি হাতিয়ে নিঃস্ব করেছেন অনেককে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বামী-স্ত্রীর এই প্রতারক চক্রটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব করত। তা কিছুটা আবেগের জায়গায় পৌঁছালে দেখা করার প্রস্তাব। বিশ্বাস অর্জন করতে একসঙ্গে খাওয়া, ঘোরাঘুরি। এরপর কৌশলে বাসায় ডেকে এনে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের প্রতারণার সত্যতা পাওয়া গেছে। তিন-চারজন মিলেই মূলত এই ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল।

সেদিন ট্রান্সজেন্ডার নারীর সঙ্গে কী ঘটেছিল

বিউটি ব্লগার সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআ। গত বছরের নভেম্বরে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশু নামের এক যুবকের। ১০ জানুয়ারি বিকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় বসে খাচ্ছিলেন সাদ মুআ। এ সময় রিশু ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করতে চান। তাকে ওই রেস্তোরাঁয় আসতে বললে তিনি (রিশু) কিছুক্ষণ পরে ফোন দিয়ে বলেন, রেস্তোরাঁর ভেতরে আসতে চান না, সাদকে বাইরে যেতে বলেন। পরে বাইরে গিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। সেসময় রিশু জানায় ‘তার বাসা কাছেই’ এবং ‘সাদ মুআ সেলেব্রিটি হওয়ায় তাকে বাসায় নিয়ে স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে চান’। এ জন্য একাধিকবার অনুরোধ করেন। তারপর সাদ মুআ ওই বাসায় যান।

সাদ মুআ ওই যুবকের কথা বিশ্বাস করে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের এক বাসার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে যান। সেখানে তিনি এক নারী ও আরেকজন পুরুষকে দেখতে পান। পরে তারা তিনজন তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন।

সাদ মুআ তাদের বাধা দিলে তিনজন তাকে মারধর শুরু করেন এবং বলতে থাকেন এই ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন। এ সময় তিনজন নিজেদের আইনের লোক পরিচয় দেন। তাদের কাছে অস্ত্র ও ওয়াকিটকি ছিল। তারা হলেন- ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি, অন্যতম সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা ও আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশু। এই ঘটনার এই তিনজনের নাম উল্লেখ করে ২১ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানা মামলা করেন সাদ মুআ।

মামলায় সাদ অভিযোগ করেন, তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন, সোনার চেইন, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে বলা হয়, না দিলে মেরে পূর্বাচলে ফেলে দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে প্রাণভিক্ষা চাইলে তাকে থানায় নিয়ে যাবে বলে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে রাত আটটার দিকে রামপুরা এলাকায় একটি হাসপাতালের সামনে ফেলে যায়।

কথিত স্বামী-স্ত্রীর প্রতারণার ফাঁদ

ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদ নর্থ সাউথে পড়াশোনা করেন, আর সাইমা নিরা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। অথচ ফুয়াদ নিজেকে আর্মি ক্যাপ্টেন বলে পরিচয় দেন, আর সাইমা পরিচয় দেন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে। তারা বসুন্ধরাতে বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন।

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার তিনজন

সাদ মুআর মামলায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত তিনজন। র‌্যাব জানায়, আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম-পরিচয় ভাঙিয়ে নানাজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। তিনজনের মধ্যে দুজনের নামে আগে মামলা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ওয়াকিটকি সেট ও খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্তরা জানায়, ভুয়া সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নারী-পুরুষকে তাদের ভাড়া বাসায় নিয়ে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতেন। এছাড়া অনলাইনেও ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলতেন তারা। গত দুই বছর ধরে তারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এদিকে গ্রেপ্তারের আগে ঢাকা টাইমসের হাতে আসা ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদের একটি ছবিতে দেখা গেছে, চেয়ার-টেবিলে বসা ফুয়াদ সিগারেট টানছেন। আর ডান হাতে কালো রঙের একটি পিস্তল এবং টেবিলের ওপর রাখা একটি ওয়াকিটকি। অপর আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, সিগারেট হাতে তিনি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় তার কোমড়ে একটি ওয়াকিটকি দেখা যায়।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা যা বলছেন

ট্রান্সজেন্ডার নারীকে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাসান মাসুদ। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তকাজ অনেকটা গুছিয়ে এনেছি। অল্প কিছু কার্যক্রম বাকি আছে। দ্রুতই আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে দেওয়া হবে।’

প্রাথমিকভাবে তাদের প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। বলেন, এই দলের সদস্যসংখ্যা কম। এখন পর্যন্ত তিন-চারজনের নাম পাওয়া গেছে। কিন্তু তারা অনেককেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছিলেন।’

অবৈধ ওয়াকিটকিসহ তিনজন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা হয়। সেই মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে থানার পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) শাহ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকারি অনুমোদন ছাড়া এই ওয়াকিটকি ব্যবহার করা অপরাধ। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে মতামত এলে দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

সাদ মুআ যা বলছেন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই ট্রান্সজেন্ডার নারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব হবে না। কিন্তু র‌্যাব ও পুলিশ বিষয়টি অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। আর প্রথমে তো ভেবেছিলাম তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। তারা যখন এমন করেছে, সহযোগিতা কোথায় পাব! কিন্তু জানতে পারলাম আমি নকল সেনা ও পুলিশ সদস্যের খপ্পড়ে পড়েছিলাম।’

খোঁয়া যাওয়া মোবাইল ফোন ও স্বর্ণের চেইন উদ্ধারের বিষয়ে সাদ মুআ বলেন, ‘মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে র‌্যাব। তবে সেটা আলামত হিসেবে থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চেইনটা উদ্ধার হয়নি।’

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles