15.2 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

পরকীয়া

পরকীয়া - the Bengali Times
প্রতীকী ছবি

আজকাল মহিলা মহলে শাড়ি গহনা কত কেনা হল, কোন ফ্যাশানটা এখন প্রচলিত, কোন সিরিয়ালে এখন কী কাহিনী চলছে, বাংলাদেশে রাজনীতি করে কে কতো টাকা বানিয়েছে, কার ছেলে-মেয়ে কতোটুকু জীবনে উন্নতি করেছে কতোটুকু অবনতি হয়েছে, স্বামীদের নিয়ে আলোচনা, তাদের ভালো-মন্দ দুটি দিক নিয়ে উত্তেজনামূলক মন্তব্য এই সব আলোচনার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে ‘পরকীয়া’ নিয়ে আলাপ-আলোচনা।

কার স্ত্রী কার সাথে পরকীয়া করছে। কার স্বামী, কার স্ত্রীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। নিশ্চয়ই ভেতরে এমন কোনো দুঃখ-বেদনা ছিল যার ফলে নারী বা পুরুষটি অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এই পরকীয়া ব্যাপারটি এখন বেশ উত্তেজনামূলক ও আসর জমানো আলোচনা। সবাই চেয়ার টেনে বসে আলোচকের বক্তব্য মন্তব্য শোনার জন্য। নানারকম প্রশ্ন আসতে থাকে আসল ঘটনাটা কী? কবে থেকে শুরু হয়েছে? কতো দূর এগিয়েছে? নানারকম প্রশ্ন আসতে থাকে, আসরের মহিলাদের কাছ থেকে। এটা হয়ে উঠে একটি মুক্ত আলোচনার আসর। যার যা খুশি বক্তব্য রাখতে পারে। কেউ কেউ আবার পরকীয়াকে সংক্রামক ব্যাধি বলেও ঘোষণা দেয়। বহুদিন আগে দেশের বাইরে থাকা এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, ‘পরকীয়া’ নামে যে একটা প্রেম আছে সেটা আগে কখনো শুনিনি, এখন বুঝতে পারলাম পরকীয়া কাকে বলে।’

- Advertisement -

আসলে পরকীয়া কোনো নতুন ঘটনা না। সেটা আদি যুগেও ছিল এখনো আছে। আগে ছিল কাছের মানুষদের সাথে অন্দর মহলে, আর প্রভাবশালীদের ছিল বাহির মহলে। অন্দর মহলে স্বামীর ভাইয়ের সাথে, গৃহ শিক্ষকের সাথে, পুরুষদের শ্যালিকার সাথে, ভ্রাতৃবধুর সাথে প্রেম ভালোবাসার অনেক ঘটনা আছে। আমাদের কবিগুরুও সে তালিকা থেকে বাদ পড়েননি। তবে এখন অন্দরমহল বলে কোনো কথা নেই, সবই বাইরের মহলে। মুক্ত পৃথিবীতে সবকিছুই মুক্ত। আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের মাঝে এনে দিয়েছে অনেক সুযোগ সুবিধা, পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়, তেমনি প্রেম ভালোবাসাও হাতের মুঠোয়। ইচ্ছেমত ধরে রাখা হচ্ছে ইচ্ছে না হলে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষ সুযোগ পাচ্ছে স্বাধীনতাকে উপভোগ করতে, তেমনি স্বাধীনতার অপব্যবহারও হচ্ছে সমানভাবে। মানুষের ভালোবাসার রূপ, রঙও বদলে গেছে। পুরাতনের আকর্ষণ কমে গিয়ে মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে নিত্য-নতুন জিনিশের প্রতি।

এখন মহিলারা শুধু ছেলে-মেয়ে লালন পালন ও সংসারের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকছে না সাথে সাথে চালাচ্ছে নানাবিধ কাজকর্ম। পুরুষদেরও টাকা উপার্জন ও সংসারের দায়-দায়িত্ব পালন করাই একমাত্র কাজ না, তার সাথে জড়িত হয়েছে অনেক কিছু। কম্পিউটার মানুষের কাছে নিয়ে এসেছে নতুন এক জগত। ফেস বুক সুযোগ এনে দিয়েছে নানা মানুষের সাথে পরিচয়ের কথাবার্তার, নারী পুরুষের খোলামেলা বন্ধুতের। সে বন্ধুত্ব অনেক সময় সীমানা পেরিয়ে বহুদুর এগিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে অনেক সংসারে অশান্তিও ডেকে আনছে। কর্মক্ষেত্রেও সবাই একসাথে কাজ করছে। সেখানেও পরকীয়া নামক শব্দটি এদিক সেদিক দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে।

একঘেয়েমী জীবনে অনেকেই ত্যক্ত বিরক্ত। ফুল বাসী হলে যেমন আদর থাকে না তেমনি বিয়ে পুরানো হয়ে গেলেও প্রেমের কথাগুলো ধীরে-ধীরে কমতে থাকে। তখন নিত্য দিনের ঝুট-ঝামেলা, ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তাভাবনা, সংসারের হিসাব-নিকাশ করতে করতে প্রেমের মিষ্টি কথাগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কথায় কথায় বিরক্তি এবং খিটখিটে ভাবটা অনায়াসে বেরিয়ে আসে দুপক্ষের কাছ থেকেই। বাস্তবতার চাপে প্রেম অসহ্য ও অসহনীয় লাগতে থাকে। আবার কখনো মনে হতে থাকে, এই মানুষটির সাথে বিয়ে না হলে জীবনটা হয়তো অনেক সুন্দর হতো। তখন তৃতীয় কারো কাছ থেকে মিষ্টি কথা, ভালোবাসার কথা, প্রেমের ইঙ্গিত, সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের প্রশংসা তাদের আকৃষ্ট করে। তখন শুষ্ক বাগানে ফুল ফোটার মতো মনের বাগানে ফুল ফুটে উঠে। তখন মনে হতে থাকে মন্দ কি যদি এমন একজন থাকে যে কি-না বুঝতে পেরেছে তার মনটাকে তাকে মূল্যায়ন করতে পেরেছে, ভালোবাসতে পেরেছে, জীবনটাকে নানা রঙে রঙিন করে দিতে পারছে, এমন একজন মানুষই তার জীবনে প্রয়োজন ছিল। তখন বসন্তের ঝিরিঝিরি হাওয়া বইতে থাকে মানুষটির দেহ মনে।

অধিকাংশ সময়ে বসন্তের হাওয়া পর্যন্ত প্রেমটা সীমিত থাকে। কিন্তু ঘরও ভেঙে যেতে দেখা যায় পরকীয়া প্রেমের ফলে। স্বামী স্ত্রীকে ফেলে চলে যাচ্ছে নতুন প্রেমিকার কাছে, স্ত্রী স্বামীর ঘর ছাড়ছে অন্যরকম ভালোবাসা পেতে। তারপর ভালোবাসার নর-নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সুখী জীবনের আশায়। কখনো নতুন জীবন সুখের হয় আবার কখনো আগের সংসারের চাইতেও অশান্তির হয় নতুন জীবন। তখন আর কোনোকিছু করার থাকে না। এমনো দেখা যায় স্বামী সবকিছু ভুল স্বীকার করে স্ত্রী কাছে ফিরে আসে। আবার স্ত্রী ক্ষমা চেয়ে আগের স্বামীর সংসারেই ফিরে আসে।

এ পৃথিবী এক আজব জায়গা। নদীর ভাঙনের মতো কতো সম্পর্ক ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আবার কখনো বাঁশের নড়বড়ে সেতুর মতো সম্পর্ক জোড়াও লাগছে।

মানুষের চাহিদার কাছে ভালোবাসা প্রতিনিয়ত নতজানু হচ্ছে। আজকালকার যুগে মানুষ নিজেদের প্রতি ভালোবাসা মূল্যায়নে খুবই সচেতন। ভালোবাসার রঙে নতুন করে রঙিন হতে মানুষের মন চায়। সবাই বলে ভালোবাসার রং লাল। আমি ভাবী ভালোবাসার অনেক রং। সে অনেক রঙের সাথে কালো কুচকুচে রংও আছে যা মানুষকে কুৎসিত করে তোলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরকীয়া প্রেমের সৃষ্টি হয় নানারকম হতাশা এবং জীবনসঙ্গীর অবহেলা থেকে। সংসারজীবন সুখ-অসুখ মিলিয়েই হয়। কেউ এটা মেনে নেয়, কেউ নিতে পারে না। আবার করো কারো সুযোগের অভাবে চরিত্রবান হয়ে থাকতে হয়।

মাঝ বয়সের শেষ প্রান্তে এসে প্রতিটি মানুষের জীবনে নতুন করে প্রেমের জোয়ার বইতে থাকে। কেউ সেটা প্রকাশ করে, কেউ প্রকাশের সুযোগ পায় না। তখন অতীত, প্রেম ভালোবাসা হৃদয়ের দ্বারে এসে কড়া নাড়তে থাকে। তখন ইচ্ছা করে নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে। অধিকাংশ মানুষের জীবনে (বিশেষ করে মহিলাদের) সে সুযোগ আসে না। সুযোগ আসলেও সেটা দমন করে রাখার ক্ষমতা তারা রাখে। মানুষের মনের ভেতর অনেকগুলো ছোট ছোট খোপ থাকে। তার সবগুলো কিন্তু পরিপূর্ণ থাকে না। অনেকগুলোই থাকে ফাঁকা। জীবনের এক পর্যায়ে মানুষের ইচ্ছে হয় সে ফাঁকা খোপ পরিপূর্ণ করতে।

মানুষের জীবনে কত রকমের কত ধরনের প্রেম আসে। তবে এটা সত্যি প্রেমের কোনো বয়েস নেই। সেটা যে কোনো বয়েসে মানুষের মনের দুয়ারে এসে দাঁড়াতে পারে। আর প্রতিটি মানুষের মনে যে তরুণ মনটি বাস করে সে হঠাৎ করে জেগে উঠে বলে, ও যে মানে না মানা-আঁখি ফিরাইলে বলে না না না।

ম্যাল্টন, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles