1.9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

পিটার প্লোগোজোয়িটজ- একজন সত্যিকারের ভ্যাম্পায়ার?

পিটার প্লোগোজোয়িটজ- একজন সত্যিকারের ভ্যাম্পায়ার? - the Bengali Times

পিটার প্লোগোজোয়িটজ ছিলেন সার্বিয়ার একজন ছোট কৃষক। ধারণা করা হয় মৃত্যুর পর তিনি ভ্যাম্পায়ার হয়ে গিয়েছিলেন ও নিজের গ্রামের আরো নয় জন গ্রামবাসীকে তিনি হত্যা করেন। ইউরোপে ভ্যাম্পায়ার সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর সারিতে ‘বাস্তব’ বলে দাবি করা ঘটনাগুলোর মাঝে এটিই সবচেয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ও রহস্যময় বলে স্বীকৃত। ঘটনাটি বর্ণনা করেন তৎকালীন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের প্রাদেশিক কর্মকর্তা ফর্মব্যাল্ড। তিনি পিটারের মৃত্যুর পর ভ্যাম্পায়ার সন্দেহে যখন মৃত পিটারকে কবর থেকে উঠিয়ে আগুনে পোড়ানো হয় সে সময় নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

- Advertisement -

পিটার সার্বিয়ার একটি ছোট গ্রাম কিসিলোভাতে (খুব সম্ভবত বর্তমানের কিসিলেভো) বসবাস করতেন। সার্বিয়া ছিল সেসময় তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। ১৭১৮ সালে প্যাসারুইটজ চুক্তির মাধ্যমে সার্বিয়াকে অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের কাছে হস্তান্তরিত করে তুর্কীরা। পরে ১৭৩৯ সালে বেলগ্রেড চুক্তির মাধ্যমে সার্বিয়াকে ফিরে পায় অটোমান সাম্রাজ্য। ১৭২৫ সালে পিটার মারা যান ও তার মৃত্যুর আটদিন পর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৯ জন গ্রামবাসী সামান্য অসুস্থতায় মারা যান। প্রতিটি মানুষ মৃত্যুশয্যায় বলেন যে, পিটার তাদের গলায় আঘাত করেছিল। এদিকে পিটারের স্ত্রী জানান, কবর দেয়ার পর একদিন পিটার বাড়িতে আসেন ও স্ত্রীর কাছে নিজের জুতোজোড়া চান। এ ঘটনার পর পিটারের স্ত্রী গ্রাম ছেড়ে চলে যান। কিংবদন্তী অনুসারে, পিটার এরপর আবার তার বাড়িতে ফিরে আসে ও তার ছেলেকে খাবার দিতে বলেন। ছেলে রাজি না হওয়ায় পিটার তার ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। এ ঘটনার পর গ্রামবাসীরা পিটারের দেহ কবর খুঁড়ে বের করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা দেখতে চাচ্ছিলো যে পিটারের দেহে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাওয়ার কোন লক্ষণ যেমন চুল-দাড়ি-নখ বড় হওয়া কিংবা দেহ পচে না যাওয়া।

গ্রামবাসীরা কবর খোঁড়ার সময় স্থানীয় রাজকর্মকর্তা ফর্মব্যাল্ড ও স্থানীয় পুরোহিয়কে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেন। ফর্মব্যাল্ড গ্রামবাসীকে অনুরোধ করেন বেলগ্রেড থেকে অনুমতিপত্র আসার পর কবর খোঁড়া হোক। কিন্তু গ্রামবাসীরা ভয় পাচ্ছিলো অনুমতি আসতে আসতে পিটার কবর থেকে উঠে আরো গ্রামবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। গ্রামবাসীরা জরুরী ভিত্তিতে ফর্মব্যাল্ডকে অনুমতি দিতে বলে, নয়তো তারা বলে যে জীবন বাঁচাতে তারা গ্রাম ত্যাগ করবে। ফর্মব্যাল্ডকে অনুমতি দিতে বাধ্য করা হল।

পুরোহিত ভেলিকো গ্রাদিস্তেকে নিয়ে ফর্মব্যাল্ড কবর খোঁড়ার দৃশ্য অবলোকন করলেন। চরম আতঙ্ক ও হতভম্ব অবস্থায় সবাই দেখলেন পিটারের দেহে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাওয়ার সব ধরণের লক্ষণই বর্তমান। পিটারের দেহ পচেনি মৃত্যুর এতদিন পরও, তার চুল ও নখ, মুখের দাড়ি বড় হয়ে গিয়েছিল। এমনকি তার দেহের ত্বক যেন নতুনভাবে জন্ম হয়েছিল। ভয়াবহ এই দৃশ্য দেখে গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লো।

তারা অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিল পিটারের হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে সূচালো কাঁঠের গোঁজ ঢুকিয়ে দিতে হবে, যাতে সে আর কখনো কবর থেকে উঠে আসতে না পারে। এটা করার পর পিটারের মুখ ও কান দিয়ে বের হয়ে একদম তাজা রক্ত! গ্রামবাসীরা পিটারের দেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। ফর্মব্যাল্ড বলেন এটি করা উচিত নয়, কিন্তু গ্রামবাসীদেরকে তিনি থামাতে পারেন নি।

পূর্ব ইউরোপে ভ্যাম্পায়ার সংক্রান্ত কাহিনীগুলোর মাঝে এটিই প্রথম নথিভুক্ত হয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ভিয়েনার সংবাদপত্র Wienerisches Diarium (বর্তমান নাম Die Wiener Zeitung)তে। যদিও এখন বলা হয়, পিটারের দেহ স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা দেরিতে পচে গিয়েছিল কিন্তু পুরো ঘটনা এখনো যুক্তি আর রহস্যময়তার মাঝামাঝি একটি ঘটনা হিসেবেই স্বীকৃত!

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles