7.3 C
Toronto
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

দেশে চোখ রাঙাচ্ছে ডেল্টা-ওমিক্রন

দেশে চোখ রাঙাচ্ছে ডেল্টা-ওমিক্রন - the Bengali Times
দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণ চূড়ায় ওঠার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ডেল্টা ও ওমিক্রন

দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণ চূড়ায় ওঠার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ডেল্টা ও ওমিক্রন। টানা দুদিন ধরে করোনা শনাক্তের হার ৩২ শতাংশের উপরে। এ ছাড়া মৃত্যুও বেড়েছে। একদিনে মারা গেছেন আরও ১৮ জন।

নতুন ধরনের উপসর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম গলার স্বর পরিবর্তন। ওমিক্রন দ্রুত ছড়ায় জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, শনাক্তের চলমান হার অব্যাহত থাকলে শিগগিরই অতি মাত্রায় সংক্রমণ ঘটতে পারে। এদিকে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

- Advertisement -

গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালের প্রস্তুতি নিয়ে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ওমিক্রনের উপসর্গ মৃদু ভেবে অবহেলা করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রোগীর সংখ্যা যদি অনেক বেশি হয় তাহলে মৃত্যু বাড়বে। যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আশঙ্কাজনকভাবে মৃত্যুও বাড়বে। রোগীদের চাপের জন্য দেশের সব হাসপাতাল তৈরি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনগণের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অসচেতনার জন্যই সংক্রমণ বেড়েছে।

এদিকে করোনা সংক্রমণের গুরুতর সন্ধিক্ষণ চলছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সতর্কবার্তা দিয়েছিল তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশ। সংক্রমণের পিক টাইমের আগেই আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। গত বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে যেখানে শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, সেখানে এ বছর গত ২৪ দিনেই এ হার ৩২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তদের প্রায় ৭০ শতাংশের দেহে ধরা পড়েছে ওমিক্রন।

এ অবস্থাকে অশনিসংকেত বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, সংক্রমণ সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছার আগেই অতি মাত্রায় শনাক্ত হওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, সংক্রমণ এখন কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেল্টা ধরনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওমিক্রন। এ অবস্থা চলতে থাকলে রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোকেও হিমশিম খেতে হতে পারে। রেড জোন এলাকাগুলোতে আইসোলেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে করোনার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি জেলা। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তারপরও নির্দেশনা মানছেন না সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের।

সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে রেডজোন চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে ৩ জন করে মারা গেছেন। আর শনাক্তের হার রাজশাহীতে ৫৫ দশমিক সাত আট শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৩৬ দশমিক পাঁচ চার শতাংশ।

সংক্রমণের রেড জোন চট্টগ্রামেও দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে ওমিক্রন। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন ১৩শ’র বেশি মানুষ। সম্প্রতি একদল গবেষক দুটি হাসপাতালের কিছু নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে ৭৫ শতাংশই ওমিক্রন পাওয়ার তথ্য প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের নির্দেশনা মানার পরামর্শ তাদের। একদল গবেষক চট্টগ্রাম জেনারেল এবং মা ও শিশু হাসপাতেলের ১১টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং কর। যার ৭৫ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বলে জানায় দলটি।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের গবেষক দলের প্রধান ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন বিভাগ), ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী এ বিষয়টি তুলে ধরেন।

গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়, গত ১ নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব রোগীই ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের। তবে ২৫ ডিসেম্বরের পর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৭৫ শতাংশই পাওয়া যায় অমিক্রন। যেটি জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটায় প্রকাশিত হয়। দলটি বলছে নতুন লক্ষণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে শরীর ও গলা ব্যথা এবং গলার স্বর পরিবর্তন ও অতিরিক্ত দুর্বলতা।

চট্টগ্রাম বিভাগের করোনা সেলের সমন্বয়ক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে জানুয়ারির শুরুতে আক্রান্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলেও এখন ছাড়িয়েছে ৪০ শতাংশে।

১০ ডিসেম্বর দেশে কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়। উচ্চ সংক্রমণশীল এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের শরীরে ৬টি লক্ষণ ধরা পড়ছে। রাজধানী ঢাকাতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের অন্তত তিনটি উপধরন (সাব-টাইপ) পাওয়া গেছে। এ তথ্য সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স গবেষণায় উঠে এসেছে।

২৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরে যে তিনটি উপধরন আছে সেগুলো আফ্রিকান, ইউরো-আমেরিকান এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ওমিক্রন ধরনের সঙ্গে মিলে যায়।

আইসিডিডিআরবি বলছে, জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে ল্যাবরেটরিতে এক হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ শতাংশই ছিল করোনায় আক্রান্ত। আর আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রন ছিল ৬৯ শতাংশের নমুনায়।

২৩ জানুয়ারি দুপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে সংস্থাটির মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ক্রমেই ডেল্টার জায়গা দখল করছে।

স্বাস্থ্যের এ কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগীর সংখ্যা যদি প্রতিদিনই বাড়তে থাকে এবং স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে আমরা যদি নিজের মতো করে চলতে থাকি তাহলে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে, সেটি সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করবে। এই অতিমারিকে যদি আমরা পরাস্ত করতে চাই তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles