
আজ দুপুরে জানালা দিয়ে বাইরের ঝলমলে দিনটি দেখতে দেখতে হঠাৎ করে মনে হতে লাগলো আমি অতি সুখী একজন মানুষ। আমার কিসের দুঃখ? আমি কি সব সময় দুঃখ বিলাসে ব্যস্ত থাকি? নাহ সেটাই বা হতে যাবে কেনো? সুখ দুঃখ মিলিয়েইতো মানুষের জীবন ।
তবে সত্যি কথা বলতে কি ছাত্র জীবনের পর থেকে ,সেরকম চিন্তা ভাবনাহীন ডানা ঝাঁপটা দিয়ে উড়ে বেড়ানোর নিরবিছন্ন আনন্দ সুখ কখনো অনুভব করিনি।
আমি এমন একটা মানুষ জীবনের কোন অংশটাই আমার মনে হয়নি আমি মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াচ্ছি অথবা কখনো এটাও মনে হয়নি আমি দুঃখের সাগরে ডুবে যাচ্ছি আর দুঃখের ঢেউ গুলো আমাকে গ্রাস করে ফেলছে।
বিয়ে হোল , সংসার হোল , তাকে একটু একটু করে সাজানোর আনন্দে ব্যস্ত। ছেলে মেয়ে আসলো সংসারে তখন অন্য রকম আনন্দ আরেক রকম ব্যস্ততা । তাদের যত্ন করা, পড়া শোনা শিখিয়ে বড় করে তোলা । বাচ্চারা বড় হোল । যার যার স্থানে প্রতিষ্ঠিত । তাদের নিয়ে কোন ভাবনা আমার নেই ।
জীবনের ব্যস্ততম সময় টুকুতে মনে হতো কখন পাবো অনেকটা অফুরন্ত সময় বা কিছুটা অবসর সময় যখন আমি আমার প্রিয় লেখকদের না পড়া বই গুলো পড়ে শেষ করতে পারবো । আমার পাশে থাকবে সাড়ি সাড়ি বই । যখন যেটা ইচ্ছে হবে হাত বাড়িয়ে টেনে নেবো । আবার কখনো বৃষ্টি ঝরা দিনে মনে করবো ছেলে বেলার সে গান – বৃষ্টি পড়ে টাপুর টূপূড় নদে এলো বাণ । বৃষ্টির রুম ঝূম শব্দ শুনতে শুনতে রবীন্দ্রনাথের গানের মাঝে নিজেকে ভাসিয়ে দেবো । নিজে নিজে বলবো- আজ মোর নেই কোন ভাবনা ।
আজো ভাবি অনেক না বলা কথা লিখবো যা কখনো আমার বলা হয়নি বা বলার সুযোগ হয়নি । কতো কথাই তো বলতে ইচ্ছে করে , লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু কোথায় যেনও একটা জড়তা কাজ করে মনে হয় পাঠকরা কি ভাবে তা গ্রহণ করবে। আজাকাল আরেকটা আতংক কাজ করে। মনে মনে কল্পনার রাজ্যে ভ্রমণ করতে করতে কল্পনার বশবর্তী হয়ে অনেক কিছুই লিখে ফেলি। কোন কোন পাঠক মনে করেন এ জেনো আমার নিজের জীবনের কথা । সে ভাবনা থেকে তারা মন্তব্য করেন । অনেকে আবার নানা রকমের সান্ত্বনা দিয়ে থাকেন । যার ফলে বেশী কল্পনা রাজ্যে ঘুরার ব্যাপারেও কিছুটা ভীরুতা কাজ করে । এ ভাবেই জীবন চলছে । এখন তো কতো ভাবনা এসে , কতো কথা মনে পড়ে। এখন আমার কবি মহা দেব সাহার মতো বলতে ইচ্ছে করে – “এখন শুধু মনে পড়ে
মনে পড়ে মেঘ, মনে পড়ে চাঁদ
জলের ধারা কেমন ছিলো
সে সব কথাই মনে পড়ে ।
এখন শুধু মনে পড়ে, মনে পড়ে ।
ম্যাল্টন, অন্টারিও, কানাডা