10.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

যে কারণে ইসলামে মৃত্যু কামনা নিষিদ্ধ

যে কারণে ইসলামে মৃত্যু কামনা নিষিদ্ধ

পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি জীবের মৃত্যু নির্ধারিত। কেউ চাইলে এর এক মুর্হুত আগে অথবা পরে মারা যাবে না। মৃত্যুর বিষয়টি পুরোপুরি আল্লাহ তায়ালার অধীনে, এতে কারো কোনও ইচ্ছেধিকার নেই। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তাদের মৃত্যুর নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তারা তা এক মুহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না, এমনকি মুহূর্তকাল ত্বরান্বিতও করতে পারবে না। -(সূরা নাহল, আয়াত, ৬১)

- Advertisement -

মৃত্যু থেকে কেউ পালাতে পারবে না-

মৃত্যুর নির্ধারিত সময় এলে পৃথিবীর কোনও ক্ষমতাধর চাইলেও এ থেকে পালাতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।’ -(সুরা নিসা, আয়াত, ৭৮)

আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’ -(লোকমান ৩১/ আয়াত, ৩৪)

পরকালের প্রস্তুতি-

মৃত্যুর পরে মানুষের সাথে তাই ঘটবে যা সে পরকালের জন্য পৃথিবী থেকে অর্জন করেছে।

হজরত আনাস (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাইয়েতকে দাফন শেষে যখন তার পরিবারবর্গ ও সঙ্গীসাথীরা ফিরে যায় এবং তাদের জুতার আওয়াজ মাইয়েত অবশ্যই শুনতে থাকে, তখন দু’জন ফেরেশতা আসেন ও তাকে উঠিয়ে বসান।

অতঃপর যদি সে মুনাফিক ও কাফের হয়, তখন তাকে এই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত, আমিও তাই বলতাম। তাকে বলা হবে, তুমি তোমার জ্ঞান দিয়েও বুঝনি। পাঠ করেও জানতে চেষ্টা করোনি। -(ইবনু মাজাহ হা/৪২৭২; মিশকাত হা/১৩৮)

*পরকালের প্রস্তুতির জন্য মানুষকে নেক আমল করতে বলা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)

জীবন থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন নবীজি-

অতএব ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা উচিত। কখনো হতাশা বা দূরাশায় ভোগা কোনও মুমিনের কাম্য নয়। কারণ, হতাশা মানুষকে জীবনের আনন্দ ও স্বাদ থেকে দূরে সরিয়ে। হতাশা থেকেই মানুষ জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠে। অধৈর্য হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করে থাকে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে জীবন থেকে নিরাশ হতে এবং মৃত্যু কামনা করতে স্পষ্ট নিষেধ করেছেন।

দীর্ঘ জীবন কল্যাণই বয়ে আনে-

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কিছুতেই মৃত্যু প্রত্যাশা না করে এবং মৃত্যু আসার আগে তার জন্য দোয়াও না করে। কেননা যখন তোমাদের কেউ মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিনের দীর্ঘ জীবন শুধু তার জন্য কল্যাণই বয়ে আনে।’ -(মুসলিম, হাদিস : ৬৯৯৫)

হতাশা ঘিরে ধরলে আল্লাহর কাছে যা চাইবেন-

আরেক হাদিসে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ বিপদাপদের সম্মুখীন হলে যেন কোনোভাবেই মৃত্যু কামনা না করে। আর কেউ যদি এমন অবস্থায় পড়ে যে, তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয়, তবে সে এভাবে দোয়া করবে-

আরবি :

اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي

উচ্চারণ :
‘আল্লাহুম্মা আহয়িনি মা কানাতিল হায়াতু খাইরান লি, ওয়া তাওয়াফফানি ইজা কানাতিল ওয়াফাতু খাইরান লি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! যতদিন বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর হয়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখুন আর যখন আমার জন্য মৃত্যুই কল্যাণকর হয় তখন আমার মৃত্যুদান করুন।’ -(বুখারি : ৫৬৭১; মুসলিম : ২৬৮০)

মৃত্যু কামনা নিষিদ্ধ যে কারণে-

*হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা মৃত্যু কামনা করবে না। নেককার মানুষ হলে, সে বেঁচে থাকলে আরো বেশি নেককাজ করতে পারবে। সে যদি গুনাহগার হয়, হয়তো সে তওবাহ করে গুনাহ থেকে ফিরে আসবে।’ (বুখারী, মিশকাত, ১৫৯৮ )

দুনিয়াতে শাস্তি প্রার্থনাও নিষিদ্ধ-

দুনিয়াতেও শাস্তি প্রার্থনা করতেও নিষেধ করেছেন রাসুল (সা.)। হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. একজন মুসলিম রোগীকে সেবা করতে গেলেন। সে (অসুখে কাতর হয়ে) অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এমনকি সে পাখির ছানার মতো হয়ে গেল।

রাসুলুল্লাহ সা. তাকে বলেন, তুমি কি কোনো বিষয় প্রার্থনা করছিলে অথবা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কিছু চেয়েছিলে? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহ! আপনি পরকালে আমাকে যে সাজা দেবেন তা এ ইহকালেই দিয়ে দিন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, সুবহানাল্লাহ! তোমার এমন সামর্থ্য নেই যে, তা বহন করবে? অথবা তুমি তা সহ্য করতে পরবে না।

তুমি এমনটি বললে না কেন? হে আল্লাহ! আমাদের কল্যাণ দাও পৃথিবীতে এবং কল্যাণ দান করো পরকালেও। আর জাহান্নাম থেকে আমাদেরকে রক্ষা করো। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তখন তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আর আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭২৮)

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles