10.1 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

শিক্ষিকার স্বামী প্রথমে বঁটি খোঁজেন, না পেয়ে ওড়নায় আগুন দেন!

শিক্ষিকার স্বামী প্রথমে বঁটি খোঁজেন, না পেয়ে ওড়নায় আগুন দেন!
সংগৃহীত ছবি

কলেজছাত্রকে বিয়ে করে আলোচিত সেই শিক্ষিকা খাইরুন নাহারের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার স্বামী মামুনের দাবি, শিক্ষিকা ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনকে আটক করে নাটোর থানায় নিয়ে এসেছে।

আজ সকালে নাটোর শহরের বলারীপাড়া এলাকার সাবেক কমিশনার নান্নু শেখের বাড়ির চারতলা ফ্ল্যাট থেকে খাইরুন নাহারের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

- Advertisement -

স্বামী মামুনকে নিয়ে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি। খাইরুন নাহারের স্বামী মামুন বলেন, ‘রাত ২টার দিকে খাইরুন নাহার খুব অসুস্থ বোধ করলে আমি ওষুধ নিতে হাসপাতালে যাই। ফিরে এসে দেখি দরজা খোলা। তখনই আমার আশঙ্কা জাগে। বেডরুমে ঢুকে দেখি খাইরুন গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলছে। আমি তাকে নামানোর জন্য বঁটির খোঁজে রান্নাঘরে যাই। কিন্তু বঁটি না পেয়ে লাইটার জ্বালিয়ে ওড়নায় আগুন ধরিয়ে দিই। ওড়না অর্ধেক পুড়ে গেলে টান দিয়ে ছিঁড়ে তার দেহ নামিয়ে খাটে শুইয়ে দিই। এরপর দৌড়ে গিয়ে আমি নিচতলায় নাইট গার্ড নিজাম উদ্দিনকে খবর দিই। ফিরে এসে দিখি সে মারা গেছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘অনেক রাত হওয়ায় আমি পাশের ফ্ল্যাটের কাউকে ডাকিনি। ’
নাইট গার্ড নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘রাত ২টার দিকে মামুন নিচে নেমে এসে জানায় সে হাসপাতালে যাবে। তখন আমি গেট খুলে দিই। এরপর ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরেই জানায় তার বউ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এরপর ওপরে গিয়ে আমি খাটের ওপর শোয়ানো মৃতদেহ দেখতে পাই। পরে পুলিশকে জানানো হয়। এরপর পুলিশ আসে। ’

জানা যায়, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজি অফিসে গিয়ে দুজন গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হওয়ার পর সম্প্রতি বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। শিক্ষিকা খাইরুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। মামুন নাটোর এনএস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক বছর আগে ফেসবুকে শিক্ষিকা খাইরুনের সঙ্গে একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের কলেজছাত্র মোহাম্মদ আলীর ছেলে মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তাদের দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বরে কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন তারা। এর আগে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় একজনের সঙ্গে বিয়ে হয় খাইরুন নাহারের। তবে পারিবারিক কলহে সেই সংসার বেশি দিন টেকেনি। প্রথম স্বামীর ঘরে তার বড় ছেলে বৃন্ত রয়েছে। অপরদিকে ছোট ছেলে বিম রয়েছে গুরুদাসপুর পৌর এলাকার খামার নাচকৈড়ে তার নানার বাড়িতে।

বিয়ের ছয় মাস পর তাদের সম্পর্ক জানাজানি হলে ছেলের পরিবার মেনে নিলেও খাইরুন নাহারের পরিবার মেনে নেয়নি। বর্তমানে নাটোর শহরের বলারীপাড়া এলাকায় সাবেক কমিশনার নান্নুর ছেলে তানভীর সিদ্দিকী সুজনের বাড়ির চারতলা ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া হিসেবে দুজন বসবাস করছিলেন।

মামুন বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমাদের সংসারে কোনো বিরোধ ছিল না। কিন্তু খাইরুন নাহারের পরিবার বিয়েটা মেনে নেয়নি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘খাইরুন নাহার মাত্র দুই দিন আগে বেতন তোলে। তার ঋণ থাকায় ২৭ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা কেটে নেয়। বাকি সাত হাজার টাকার মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা তার বড় ছেলেকে দেয়। কিন্তু ছেলের দাবি এখন তার ছয় লাখ টাকা লাগবে। ওই টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার ছিল না। ফলে বড় ছেলের সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। এ নিয়ে সে মানসিক কষ্টে ভুগছিল। তার পরই এ ঘটনা। ’

মামুন বলেন, ‘আমি তাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। ’

নাটোরের পুলিশ সুপার রিটন কুমার সাহা বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ফ্যানের সঙ্গে আগুন দিয়ে পোড়ানো ওড়নার অংশবিশেষ দেখা গেছে। সব কিছু দেখে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যাই মনে হয়। ’ তিনি বলেন, ‘অসম বিয়ের কারণে সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিতজনদের অসহযোগিতা আত্মহত্যার প্ররোচনার কাজ করতে পারে। পুলিশের একাধিক টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। আমরা আশা করছি দ্রুতই সঠিক কারণ জানা যাবে। ’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles