11 C
Toronto
শুক্রবার, মে ২, ২০২৫

ঘটনা ফাঁস করলে ‘ক্রসফায়ারের হুমকি’ দিলেন ওসি

ঘটনা ফাঁস করলে ‘ক্রসফায়ারের হুমকি’ দিলেন ওসি - the Bengali Times
ফরদিপুরের বোয়ালমারী থানার ওসি মো আব্দুল ওহাব

ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওহাবের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন, বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি ও এ বিষয়ে মুখ খুললে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক ব্যবসায়ী।

গত বুধবার পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বরাবর ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন বোয়ালমারী রেলস্টেশন রোডস্থ মহু মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. মাসুদ আলম।

- Advertisement -

ডিআইজি বরাবর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসায়ী মো. মাসুদ আলম। তখন বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক মামুন-আর-রশিদ ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেনের প্রতিষ্ঠানে এসে ‘ওসি সাহেব তলব করেছেন’ বলে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। থানায় পৌঁছানোর পর ওসি আব্দুল ওহাব তার কাছে নাম ঠিকানা জানতে চান।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় নিজ দফতরের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও দরজা বন্ধ করে মোটা বেত দিয়ে পেটাতে শুরু করেন ওই ব্যবসায়ীকে এবং তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। শারীরিক নির্যাতনকালে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে জীবনকে তছনছ করে দেওয়ার ভয়ও দেখায়। পরে ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন তার স্ত্রীকে খবর দিলে তার স্ত্রী ১ লাখ টাকা ওসিকে ঘুষ দিয়ে স্বামীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, এ বিষয়ে কারও কাছে মুখ খুললে ক্রস ফায়ার দেওয়া হবে বলে ভয় দেখান ওসি মো. আব্দুল ওহাব। থানা থেকে বের হয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ চিকিৎসা নেন ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন।

ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, আমার বাবা মো. হেমায়েত হোসেনের সঙ্গে আমার দাদাকর্তৃক আমাকে দলিল করে দেওয়া একটি সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কোর্টে একটি মামলা চলমান রয়েছে। ধারণা করছি আদালতে সুবিধা করতে না পেরে আমার বাবা তার স্বার্থে ওসিকে দিয়ে আমাকে নাজেহাল করাতেই মোটা অংকের ঘুষ দিয়েছেন। যে কারণে, ওসি আব্দুল ওহাব থানায় ডেকে নিয়ে আমাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও বেতের লাঠি দিয়ে বেধড়ক শারীরিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনকালীন আমার চিৎকার থানার উপস্থিত সবাই কম বেশি শুনতে পেয়েছে।

বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফাতেমা নুসরাত জানান, দুপুরে স্ত্রীকে নিয়ে মাসুদ আলম নামের একজন চিকিৎসা নিতে আসে, তার হাতে পায়ে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যেগুলো নীল বর্ণ ধরণ করেছে। সেগুলো কিসের আঘাত সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেন নাই জরুরি বিভাগের ওই কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এ অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওহাব বলেন, ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেনের বাবার সঙ্গে একটি ঝামেলা চলছে। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে থানায় ডেকে ছিলাম, সে সময় তার বাবা উপস্থিত ছিল। দুই জনের ভেতর মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যবসায়ী মাসুদ ছাড় দিতে অস্বীকার করলে তাদের আদালতে যেতে বলি। পরে তারা বাবা-ছেলে থানা থেকে চলে যান।

অভিযোগকারীর বাবা হেমায়াত হোসেন বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে জমি নিয়ে একটা বিরোধের বিষয়ে ওসি সাহেবকে বললে সে মাসুদকে ডেকে জমি ফেরত দেওয়া সহ আমার কাছে মাফ চাইতে বলে। ছেলে না শুনলে ওসি সাহেব তাকে কয়েকটা বাড়ি দেয়। পরে আমি ঠেকিয়েছি।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, ব্যবসায়ী মাসুদ আলম ফোন করেছিল, তখন বিষয়টি জানতে পারি। তাৎক্ষণিক বোয়ালমারীর ওসিকে ফোন করে বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই। ওসি জানায় ‘মাসুদের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে থানায় ডেকে মিমাংসার চেষ্টা করেছে, শারীরিক নির্যাতন ও চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু ব্যবসায়ী মাসুদ আলম অভিযোগ করেছে, অবশ্যই তদন্ত হবে, তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles