
কানাডায় আসার আগে দেশেও চাকরি করেছি, কাজকর্ম করেছি কষ্ট করে। সবই ঠিক আছে। পৃথিবীর কোথাও বিনা পরিশ্রমে বা বিনা কষ্টে ধাপে ধাপে এগুনো যায় না।
কিন্তু কানাডায় আসার পর আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে বড়ো বেশি বাস্তবতা শেখা যায়। পৃথিবীতে অন্যান্য দেশে যারা যেখানে বাস করেন, সবারই আলাদা আলাদা অনুভূতি রয়েছে। কারোরটা কারোর থেকে কম-বেশি না। আমি বলছি আমারটা কানাডায় যেটা অনুভব হয়েছে।
এদেশে এসে মানুষ বাস্তবতাকে আঁকড়ে ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে। সর্বপ্রথমে কাজ খুঁজতে গিয়েই তার প্রমাণ মিলবে। তবে সবার জন্য না। যেকোনো কাজ শুরু করা এটা একটা চরম বাস্তবতা।
এদেশে নিজের কাজ নিজেই করার নীতিতে চলতে হয়। যেমন, ড্রাইভিং করা। আলাদা করে ড্রাইভার রাখার রেওয়াজ নেই। যারা প্রাভেট গাড়ি ইউজ করতে চান, তাদেরই চালাতে হয়। ফলে সবাই নিজের গাড়ির ড্রাইভার নিজেই হোন। আমি ও আমার husband গাড়ি চালাচ্ছি সেই আসার পর থেকেই। ষোল বছরের বেশি হবে। আমার কাছে এটা খুবই ভালো লাগে। দারুণ আত্মনির্ভরশীল মনে হয়। এদেশে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যা আপনার একটা ভ্যালিড আইডি হিসেবে কাজ করে। অনেক জবই তো required করে ড্রাইভিং। ফলে অটোমেটিক ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। যা আনন্দেরই।
তারপর ধরেন, কানাডায় অনেক মানুষ অটোমেটিক কৃষক হয়ে পড়েন। এদেশের মাটি ভালো। তাই যা কিছু বপন করা যায় তাই জন্মে ভালো। তাছাড়া অধিকাংশ মানুষের মধ্যে নিজেরাই শাকসবজি উৎপাদনের উৎসাহ দেখা যায় অনেক বেশি। ফলে সবাই শৌখিন কৃষক হয়ে যান। দেশে থাকতে কিন্তু সেটা ছিল না হয়তো অনেকের। যেমন আমার তো ছিলই না। কিন্তু এখন তো ধরেন মোটামুটি কৃষকের ভূমিকায় ভালোই আছি।
আসার প্রথমদিকে এসবে মনোযোগ ছিল না। পরে বাড়ি কেনার পর থেকে শুরু করেছি। যারা এপার্টমেন্টে থাকেন তাঁরাও করেন।
তো হয়েছে কি, প্রথম দিকে আমার husband দোকান থেকে চারা কিনে এনে লাগাতেন। তারপর তিনি বীজ কিনে এনে চারা বানিয়ে লাগাতে লাগলেন। ফলন কিন্তু বরাবরই ভালো হয়েছে।
তারপর হলো কি, আমি ভেবেছি আমি বীজও তৈরি করব, চারাও তৈরি করব। তারপর সবজির বাগান করব।
তো ২০২৩ সালে যে লাউ গাছ লাগিয়েছিলাম তার থেকে একটা লাউ রেখেছিলাম বীজ করার জন্য। ২০২৪ সালে সেই বীজ থেকে হিউজ চারা তৈরি করেছি। প্রায় সত্তরটার মতো লাউ হয়েছিল লাউ গাছে।
গত বছর যেসব সবজি ও মরিচ লাগিয়েছিলাম তার সবগুলো থেকে বীজ তৈরি করেছি। যেমন ধরেন, লাউ তো আছেই। আরো যা আছে চার-পাঁচ ধরণের মরিচ, নাগা মরিচ। শসা, টমেটো, শিম, করলা, গ্রিন পিপার ইত্যাদি।
সবগুলোর বীজ আগেই অঙ্কুরোদগম করে নিয়েছি স্ব-স্ব পদ্ধতিতে। ভালোই অঙ্কুরোদগম হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
তারপর দুই দিন আগে সবগুলো অঙ্কুরিত বীজ পটে পুতে দিয়েছি। এখনো শিম আর করলা দেওয়া হয়নি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্য আশা করছি সবগুলো চারা গজাবে ইনশাআল্লাহ্। এ বছর পটে বীজ দেওয়া একটু দেরি হয়ে গেছি। কারণ, এখনো শীতের প্রকোপ কাটে নি।
ছবিতে যতগুলো পট দেখছেন আরো পট আছে ভেতরে বীজ লাগানো।
যাই হোক, পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সেইসব চারা নিয়ে মাটিতে পুতে দেওয়া। এরজন্য মাটিতে সবজির বেড করতে হয়। আমি গত বছর উইন্টারের আগে আলাদা একটা বিশাল বেড তৈরি করেছি নিজেই মাটি কু*পিয়ে। মোট তিনটা বেড রেডি আছে।
ইনশাআল্লাহ্ আগামী এক সপ্তাহ পর চারাগুলো বেডে লাগিয়ে দেব। আশা করছি ফলন ভালোই হবে আল্লাহর রহমতে। এইসব সবজি থেকে আবার বীজ তৈরি করব আগামী বছরের জন্য। এটা একটা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়া বলতে পারেন।
এই যে পটগুলো দেখছেন এটার একটা কাহিনি আছে বলি শোনেন। আমি গত বছরই প্ল্যান করেছিলাম এবার নিজেই বীজ তৈরি করে চারা বানাব। তো অনেক বীজ, অনেক চারা হবে। লাগবে অনেক পট। পট ডলারমা থেকেও কেনা যায়। কিন্তু আমি কি করেছি বলি। আমার বাসা থেকে পনের মিনিটের ড্রাইভিং একটা নার্সারি আছে। নাম হলো Sheridan Nurseries। ওরা করে কি অসংখ্য পট স্টোরের পাশে রেখে দেয় যাদের দরকার তারা নিতে পারেন ফ্রি। তো আমি গত বছরই অসংখ্য পট ও ট্রে এনে রেখেছিলাম ঐ নার্সারি থেকে যা এ বছর ব্যবহার করেছি।
যাই হোক, এই যে অটোমেটিক কৃষক হওয়া এটা কানাডায় না আসলে হয়তো হতো না অন্তত আমাদের বেলায় সেটা জোর দিয়ে বলা যায়।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা