13.9 C
Toronto
শুক্রবার, মে ৯, ২০২৫

মেধাবী কেউ আসুক এনডিপিতে

মেধাবী কেউ আসুক এনডিপিতে - the Bengali Times
তিনি চলে যাবেন শুনে তার কর্মী সমর্থকরা ব‍্যথিত হলেন কিন্তু এটাই নিয়ম

২৮শে এপ্রিল নির্বাচনের রাতেই প্রথা অনুযায়ী প্রধান তিনটি দলের তিনজন প্রধান নেতা ভাষণ দিলেন। রাত যত গভীর হচ্ছিল ততই নির্বাচনী ফলাফল বিপর্যয়ের ইংগিত পাচ্ছিল বিরোধী এনডিপি ও কনজারভেটিভ পার্টি। প্রথম ভাষণটি দিলেন এনডিপির নেতা জাগমিত সিং। মাত্র সাতটি সীটে বিজয়ী তার পার্টি, নিজের সীটে তৃতীয় হয়েছেন। আগের বার ২৫ টি আসন ছিল সংসদে, জ‍্যাক লেটনের নেতৃত্বে ২০১১ সালে ১০৩ টি আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হয়েছিল এনডিপি। সেই এনডিপির এবার খুবই লজ্জাজনক পরাজয় হলো। নিজ স্ত্রীকে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন জাগমিত সিং। বিশ পঁচিশ মিনিটের বক্তৃতায় সম্ভবত পনের বার পানি পান করলেন। এরকম বিপর্যয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হয়, দিলেনও। তিনি চলে যাবেন শুনে তার কর্মী সমর্থকরা ব‍্যথিত হলেন কিন্তু এটাই নিয়ম। গনতন্ত্রে অন‍্যকে সুযোগ দিতে হয়। সম্ভবত তার চেয়েও মেধাবী কেউ আসবেন। তিনি যদি সরে না যেতেন তাহলে তার দল বুঝতে পারতো না যে পরেরবার যিনি আসবেন তিনি কতটুকু দলকে এগিয়ে নিতে পারবেন। মেধা ও যোগ্যতার পরিচয়ে নেতৃত্ব পরিবর্তন গনতান্ত্রিক দলের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

এর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়ারে পলিয়েভের ভাষণ। তার সমর্থকদের নিষেধ সত্তেও তিনি খুব দ্রুতই পরাজয় স্বীকার করে নিলেন এবং লিবারেল নেতা মার্ক কার্নিকে বিজয়ে জন‍্যে অভিনন্দন জানালেন। কনজারভেটিভ পার্টি গতবারের চেয়ে এবার আরো ভাল করেছে, ১৪৪ টি আসন পেলেও দুর্ভাগ্যবশত নেতা নিজেই তার আসনে পরাজিত হয়েছেন। অথচ কিছুদিন আগেও তারা নিশ্চিত ছিলেন যে কনজারভেটিভ পার্টি এবার বিপুলভাবে বিজয়ী হবে এবং পিয়ারে পলিয়েভ কানাডার প্রধানমন্ত্রী হবেন কিন্তু ট্রুডো পদত্যাগ করে লিবারেল পার্টির নুতন নেতা মার্ক কার্নি এসে সব হিসাব পাল্টে দিল। পিয়ারে পলিয়েভ যথেষ্ট কষ্ট করেছেন, অজস্র টাকা খরচ করেও বিজয়ী হতে পারলেন না যার অন‍্যতম প্রধান কারণ পাশের দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এমন কি নির্বাচনের দিনেও ট্রাম্প এমন একটা টুইট করলেন যেটা আবারও পিয়ারে পলিয়েভকে বেকায়দায় ফেলে দিল। ট্রাম্প টুইট করে কানাডার লোকদেরকে এমন কাউকে ভোট দিতে বললো যারা কানাডাকে আমেরিকার ৫১ তম অংগরাজ‍্য বানাতে পারবে। মানুষ আবারও সন্দেহের তীর কনজারভেটিভ পার্টির দিকে ছুঁড়ে দিল। জনগণ ভাবলো, কনজারভেটিভ পার্টি বিজয়ী হলে তারা হয়তো আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে কানাডার সার্বভৌমত্ব খুইয়ে দিতে পারে।

- Advertisement -

এদিকে রাত দুটোর দিকে লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি ঐতিহাসিক বিজয়ী ভাষণটি দিলেন। প্রথমেই তিনি বললেন, “আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে আমি এমন একটি সরকারের নেতৃত্ব দিব যারা সকল কানাডিয়ানদের প্রতিনিধিত্ব করবে। তিনি স্বীকার করলেন যে লক্ষ লক্ষ কানাডিয়ান তাকে ভোট দেয় নি। তদুপরি তিনি সবার প্রতিনিধিত্ব করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন যারা এই কানাডাকে নিজেদের বাড়ি মনে করেন।

“He acknowledged that while millions of Canadians didn’t vote for him, he would “always do [his] best to represent everyone who calls Canada home.”

কি চমৎকার বক্তব্য। নির্বাচনে বিজয়ের পর এই বক্তব্যকে বলা হয় Assurance statement. গনতান্ত্রিক দেশে বিজয়ী হয়ে কেউ বলে না যে, বেটা আমারে ভোট দেস নাই, তোর খবর আছে! এটাই গনতন্ত্রের সৌন্দর্য। এখানে কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেই গলা টিপে ধরা হয় না, কুশপুত্তলিকা দাহন করা হয় না, গুম করে ফেলা হয় না।

তিনি তার প্রধান দুই প্রতিপক্ষ জাগমিত সিং ও পিয়ারে পলিয়েভকে তাদের চমৎকার ও কষ্টসাধ্য নির্বাচনী প্রচারের জন‍্যে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, তাদের এই দেশের জন‍্যে অনেক অবদান রয়েছে, তারাও দেশকে ভালোবাসেন।

কি আশ্চর্য, বললেন না, ওরা দেশের শত্রু, ওদেরকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেয়া হবে, আমি এবং আমার পরিবারই একমাত্র কানাডাকে ভালবাসি। না এসব ভাষা কোন সভ‍্য দেশের নেতাদের হতে পারে না। তারা দেশ সেবা করতে আসেন, ব‍্যর্থ হলে বিদায় নিয়ে চলে যান, কখনোই বলেন না নিজেই একমাত্র সেরা, প্রতিপক্ষ সবাই খারাপ, দেশের শত্রু! এরকম বললে, জনগণ কখনেই তাদেরকে ভাল চোখে দেখবে না।

 

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles