
“আমি চিরতরে দূরে চলে যাব ,
তবু আমারে দেব না ভুলিতে ।”
একটা মানুষ কতখানি অহংকারী এবং জেদী হলে আর নিজের ভালোবাসার উপরে কতখানি বিশ্বাস থাকলে এমন একটি কথা বলতে পারে। এমন কথা যা সামান্য লেখা, সামান্য মনের আবেগ থেকে কত কাল ধরে প্রেমিকের বুকের ভেতর থেকে হৃদপিন্ড ছিড়ে এনে তার অভিমানকে নগ্নভাবে প্রকাশ করছে। আহা নজরুলের মতো করে যদি কেউ ভালোবাসার প্রকাশ করতে পারত। বুকে ভালোবাসার সমুদ্র অনেকেই ধারন করে কিন্তু নজরুলের মতো করে প্রকাশ করার ক্ষমতা আছে কয়জনের?
আজ এই গানটা বড় বেশি বেজে উঠছে নিউরনে। শুনতে শুনতে অভিমানে আমার নিজের গলার কাছেই কেমন একটা দলা পাকানো ব্যাথা ব্যাথা অনুভূতির সঞ্চালন। আমি চলে তো যাব, তুমি চাইছ না, আমায়, আমি চলে যাব কিন্তু আমাকে ভুলতে দিব না। আমি এমন প্রমিক আমাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব হবে না।
“আমি বাতাস হইয়া জরাইব কেশে
বেণী যাবে যবে খুলিতে
তোমার সুরের নেশায় যখন
ঝিমাবে আকাশ কাদিবে পবন ,
রোদন হইয়া আসিব তখন তোমার বক্ষে ঝুরিতে ।।”
আমি তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকবো। আমি হব তোমার অক্সিজেন, তুমি অসাড় অকেজো অথর্ব হয়ে পড়ে থাকবে আমার অনুপস্থিতিতে।পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শণ পুরুষ বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের সকল ঐশ্বর্য তোমার পায়ের কাছে ফেলে রাখলেও আমার নেশা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। তোমার নিজের মধ্যে থাকার দিন শেষ। আমার ভালোবাসা এমনই উত্তাল এমনই মত্ত ঘোড়ার মতো পাগল এবং হিংস্র। তুমি একে অমানবিক মধ্যযুগীয় কিংবা অত্যাচার হিসেবেও উপাধিত করতে পারো, কিন্তু প্রমান করবে কিভাবে হে বৎস? এতো সবই হবে পাঁজরের হাড়ের মধ্যে। হাড় ভাঙার আওয়াজ এবং বেদনা সবই পাবে, কিন্তু মুখটি দেখে বোঝার উপায় থাকবে না গো। এ বড় অসহায় এক অবস্থা। তুমি মৃতপ্রায় হয়ে বেঁচে থাকবে- চাবি দেওয়া খেলনা পুতুলের মতো নড়াচড়া করবে কিন্তু সুখবোধবিহীন সেই পুতুলের মাঝে মানবিক প্রাণ থাকবে না।
“আসিবে তোমার পরমোৎসবে কত প্রিয় জন কে জানে ,
মনে পড়ে যাবে কোন সে ভিখারি পায়নি ভিক্ষা এখানে ।
তোমার কুঞ্জ পথে যেতে হায় !
চমকি থামিয়া যাবে বেদনায় ,
দেখিবে কে যেন মোরে মিশে আছে তোমার পথের ধূলিতে ।।”
যতই চাও পার্থিব রাস উৎসবে মত্ত হও, নিজের মনকে অন্যদিকে ধাবিত করো। নিজেকে ভিড়ের মধ্যের একজন ভাবো, নিজেকে মিলিয়ে ফেল জাগতিক লীলা খেলায়- আমার অস্তিত্বকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না। আমার সাথে যে অন্যায় করেছে, আমার হৃদয়ের সকল অভিমান তোমাকে অভিশাপ দেবে। আমি ভিখারির মতো তোমার কাছে হাত পেতেছিলাম তুমি ফিরিয়ে দিয়েছ। সামনে থাকার সময়ে আমি ছিলাম অদৃশ্য অস্পৃশ্য। তোমার অমূল্য হাত আমার অসীম ভালোবাসা স্পর্শ করেনি, তোমার মায়াবী চোখ দৃস্টিক্ষেপন তো করেছে কিন্তু ঐ চোখের মায়ায় বাঁধোনি কখনও। আর আমিও আমার সকল ভালোত্ব দিয়ে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের সম্রাজ্ঞীর আসনে বসিয়েছিলাম আর তুমি আমার জীবনটাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যে ভরিয়ে তুলেছ। আমি সরে এসেছি সন্তর্পণে কিন্তু আমার রেশ রয়ে গেছে তোমার আঙিনায়।
ভুলবে কি করে?
স্কারবোরো, কানাডা