14.7 C
Toronto
শুক্রবার, মে ৯, ২০২৫

পরশ পাথরের গল্প

পরশ পাথরের গল্প - the Bengali Times
জানুয়ারি ৫ মীজান রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী এই কথাটির মানে আমরা আর মীজান রহমানের নতুন কোন লেখা পাব না

কথাটা আমি আগেও বলেছি, না হয় আর একবার বলি। পরশ পাথরের গল্প আমরা অনেকেই পড়েছি। যেখানে সেই পাথরের স্পর্শ লাগত সেটাই সোনা হয়ে যেত। মীজান রহমান ছিলেন পরশ লেখক। যে বিষয় নিয়ে লিখেছেন, যাকে নিয়ে লিখেছেন সেটাই উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে। একমাত্র অন্ধরাই সেই উজ্জ্বলতা দেখতে পারে না। তাঁর লেখা পড়ে আমি বরফের দেশে বসে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনতে পাই। ধুপ আর গোবরের গন্ধ পাই। তার লেখা পড়তে পড়তে কাদায় পা আটকে গেছে ভেবে পা টেনে তুলে দেখি পা আমার কার্পেটের উপরই ছিল। তার লেখা পড়লে মাথার উপর জোনাকিদের উড়তে দেখি।

পরশ পাথরের গল্প - the Bengali Times

- Advertisement -

পুকুরের পানিতে পদ্ম ভাসতে দেখি। তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন অহমিকা নয়, সত্য কথা বলতে। সাব-ইন্সপেক্টর বাবাকে ডি-এস-পি বলতে নেই, কলাবাগানের বাসাকে ধানমন্ডি বলতে নেই। মীজান স্যার এক লেখাতে বলেছেন দেশের কাছে তার ঋণ অনেক। তাই যতদিন বেঁচে থাকবেন সে ঋণ শোধ করে যাবেন। তিনি বলেছিলেন এখন তাঁর লেখার পালা, জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত লিখে লিখে ঋণ শোধ করে যাবেন। কবি যেমন কবিতা লিখে, কৃষক যেমন ফসল ফলিয়ে, মুয়াজ্জিন যেমন আজান দিয়ে তাদের ঋণ শোধ করে। লেখক মীজান রহমান তাঁর নিজস্ব মাধ্যমে সে কাজটি করেছেন। আর এ কাজটি করতে গিয়ে তিনি অনেকর ভেতর জ্ঞানের হারিকেন কুপি জ্বালিয়ে দিয়েছেন।

পরশ পাথরের গল্প - the Bengali Times

জানুয়ারি ৫ মীজান রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী। এই কথাটির মানে আমরা আর মীজান রহমানের নতুন কোন লেখা পাব না। এটা অবশ্যই একজন পাঠকের জন্য হতাশাজনক বিশেষ করে যারা নিয়মিত মীজান রহমানের লেখা পড়তেন। বয়সের পৌঢ়ত্বের কোঠায় পৌঁছে যখন তিনি পুনরায় লিখতে শুরু করেছিলেন সেই দিন থকে জীবনের শেষ দিনটিও ব্যয় করেছেন লেখালেখির কাজে।

পরশ পাথরের গল্প - the Bengali Times

অসুস্থতার কারণে যেদিন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেদিনও তাঁর টেবিলে পাওয়া গেছে অসমাপ্ত লেখা। হাসপাতাল থেকে এম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছিল তাঁকে নিয়ে যেতে অথচ স্ট্রেচারে উঠেও তিনি হাত বাড়িয়ে তুলে নিয়েছিলেন একটা বই। বই নেবার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন “ওখানে (হাসপাতালে) শুয়ে থেকে আমি করবোটা কি”? হাসপাতালে নেবার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বেঁচে ছিলেন আমাদের এই প্রিয় লেখক।

পরশ পাথরের গল্প - the Bengali Times

মীজান রহমানকে জানতে হলে তাঁর লেখাগুলো পড়া একান্ত প্রয়োজন। যে সমস্ত ব্যক্তি জাগতিক বস্তুবাদী তারা মীজান রহমানকে এড়িয়ে গেছেন। যারা পরজগতে বিশ্বাসী তাঁরা তাকে অবহেলা করেছেন। এই দুইয়ের বাইরের যারা, তাঁদের অনেকেই মীজান রহমানকে মনে করেছেন আত্মার লোক। মীজান রহমানের মত মুক্তচিন্তার লোক আমাদের মাঝে খুব বেশি দেখা যায় না। তাঁর বড় গুন ছিল তিনি খোঁজ করতেন অনবরত। সব কিছুর গভীরে গিয়ে তিনি খোঁজ করতেন মানুষের ভেতরের মানুষ। আমরা যাকে ভুলে থাকি বা ভুলে যাই তারাই মীজান রহমানের কাছের লোক। রবীন্দ্রনাথের সেই কথা; ‘বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি’।

যতদিন মন বলে কিছু থাকবে ততদিন মীজান রহমান মনের মাঝে বসবাস করবেন। এতে কোন ভুল নেই।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles