7.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

আপনারা যে যেখানে আছেন, ঈদ মুবারক

আপনারা যে যেখানে আছেন, ঈদ মুবারক - the Bengali Times
পরিবার পরিজন এবং বন্ধুবান্ধব নিয়ে উপভোগ করুন আপনাদের প্রধানতম এই উৎসব

অনেককেই ব্যক্তিগতভাবে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে পারি নি। তাই এখানে জানিয়ে রাখছি। পরিবার-পরিজন এবং বন্ধুবান্ধব নিয়ে  উপভোগ করুন আপনাদের প্রধানতম এই উৎসব ।

অনেকেই জানেন,  আগামী ২৮ এপ্রিল কানাডায় ভোটের দিন।  আর চার সপ্তাহ মাত্র।  ভোটের বর্তমান রাজনীতি  নিয়ে একটা  পর্যবেক্ষণ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

- Advertisement -

কথায় আছে,  মর্নিং শোজ দ্য ডে। কিন্তু কানাডার বেবি বুমার রা বা প্রবীণ অংশটা, যাদের বয়স ৬০ এর উপরে, সেই সকাল দেখেও দিন কিভাবে যাবে সেটা আচঁ করতে পারছেন বলে মনে হয় না। অবশ্য জেনজি (Gen Z) রা এবারের রাজনীতির সমীকরণটা ভালই ধরে ফেলেছে। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে জেনজিরা কনজারভেটিভ কে সাপোর্ট করছে ,  আর লিবারেলদের পাল্লা ভারী বেবি বুমারদের নিয়ে। আসলে যা হয়,  বেবি বুমাররা অতিরিক্ত লিগেসি মিডিয়ার ন্যারেটিভ শুনছেন। তাই ওদের সমর্থনও তৈরি করে দিচ্ছে লিগেসি মিডিয়া, যেমন এপারে ১.৪ বিলিয়ন ডলারের সি বি সি (জনগনের ট্যাক্সের টাকায় চলে,  শুনে দেখে মনে হয় সাহেব বিবি গোলামের বাক্স), সিটিভি, টরন্টো স্টার (সরকারের ৬০০ মিলিয়ন ডলার এর মিডিয়া গিল্ড এর টাকার ভাগ বাটোয়ারা পায়)। সরকারের টাকায় চলে বলে  এই মেইন স্ট্রিম মিডিয়াগুলো তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। আর জেন জি দের সোর্স হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার অবাধ টাউন স্কয়ার, যেখানে কারো বক্তব্য অন্য কেউ সম্পাদনা করে না।

মার্ক কার্নি  কে নিয়ে একটা কথা খুব চাউর হয়েছে। উনি ডক্টরেট ডিগ্রী হোল্ডার,  দু দুটো ব্যাংকে কাজ করার অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমার কথা হল রাজনীতিতে ব্যাংকে কাজের অভিজ্ঞতার কি দরকার আছে  বা দরকার আছে কি ডক্টরেট ডিগ্রীর? তাহলে তো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা না হয়ে ওবামার শিক্ষক হাভার্ড এর প্রেসিডেন্ট ল্যারি  সামারস এর হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তা তো হয়নি।  তাছাড়া আরো কত ভুরি ভুরি উদাহরণ। চিলির আলেন্দে থেকে শুরু করে হালের ‘চা ওয়ালা’ মোদি কারো কোন ডক্টরেট  ডিগ্রী ছিল না বা ছিল না ব্যাংকে কাজের অভিজ্ঞতা।  রাজনীতিতে বালখিল্য  আচরণের কোন সুযোগ নেই এই বলে অমুকের কর্পোরেট চালানোর অভিজ্ঞতা আছে,  তমুকের তা নেই। আমাদের টরন্টোর জন টোরীর  কথা মনে আছে? মিডিয়া হাউজ  থেকে কর্পোরেশন এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তার কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না কিন্তু রাজনীতিতে এসে দশ দশ বার পরাজিত হয়েছে কখনো দলের নেতৃত্বে বা কখনো প্রভিন্স এর নেতৃত্বে । ১১ তম বারে এসে মেয়র পদে জিতে ছিলেন।

রাজনীতির আর্ট টা একেবারে ভিন্ন ধাতুর, এখানে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্র নয়, পুরো  একটা জনগোষ্ঠীকে চালাতে হয় ক্রিয়েটিভ  পলিসি দিয়ে ।  এখানে শুধু জনমানুষের সাথে রাজনীতির অভিজ্ঞতাই দরকার। রাজনীতির একমাত্র নিয়ামক হচ্ছে সাধারণের সমর্থন । তা না হলে বাংলাদেশে খালেদারা,  হাসিনারা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারতেন না। ব্যাংকের অভিজ্ঞতা, এনজিও র  অভিজ্ঞতায় ভরপুর অনির্বাচিত  লোকদের দেশ চালানো তো আমরা দেখতে পাচ্ছি,  সবাই যেন মায়োপিয়াতে আক্রান্ত,  নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে আর কিছু দেখতে পান না।

মার্ক কার্নির কথা বলছিলাম। ট্রুডোর ক্যাবিনেটের শতকরা ৯০ জনকে নিয়ে আবার সদল বলে  নির্বাচন করছেন। ট্রুডোর মন্ত্রী  শন ফ্রেজারের কথা মনে পড়ে? ইমিগ্রেশন এবং হাউজিং মন্ত্রণালয়  দেখত। দুটোই বারোটা বাজিয়ে বিদায় নিয়েছিল,  ইয়ং ফ্যামিলিকে সময় দিতে হবে,  দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকার জন্য ফ্যামিলিকে সময় দেয়া হয়নি,  এরকম নানান বাহানা বলে বিদায় নিয়েছিল  কিন্তু কার্নি আসার পর যখন দেখতে পেল, জয়ের একটু সম্ভাবনা আছে,  আবার সুরসুর করে ভিড়ে গেছে দলে। একইভাবে ওকভিলের অনিতা আননদ। তাই শুরুতে বলছিলাম মর্নিং শোজ দ্য ডে কিন্তু আমরা ক্যানাডিয়ানরা দশ বছরের সে সকাল দেখেও এখনো আচঁ করতে পারছি না আগামির দিন গুলো  কি রকম হবে। ট্রুডোর দশ বছরের শাসন আমরা দেখলাম কিন্তু লিবারেল পার্টি যেইমাত্র কার্নিকে অভিষিক্ত করলো,  সাথে সাথে বদলে যেতে শুরু করল সমীকরণ। বুমারদের অনেকেই এখন  কার্নির ন্যারেটিভে মজে  যায় ,  অথচ পিয়ের পলিয়েভ কার্বন ট্যাক্স সরাতে হাউস অফ কমন্সে গত দু’বছর লাগাতার যুদ্ধ করে ,  লিবারেল পার্টি জনপ্রিয়তার ধ্বস থেকে নিজেদের উদ্ধার করতে পিয়েরের সেই পলিসি কপি করে শেষ পর্যন্ত কার্বন ট্যাক্স বাতিল করে দেয় তাও নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার পর, পুরোপুরি বাতিল করেনি,  নির্বাচনের পর বাণিজ্যিক কার্বন ট্যাক্সের নামে আবার ফিরে আসবে, ব্যবসায়ীরা তো আর নিজেদের পকেট থেকে কার্বন ট্যাক্স  দেবে না,  প্রকারান্তরে আমাদের মত কনজিউমারের উপর চাপিয়ে দেবে । কনজারভেটিভ এর দেখাদেখি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ও  কার্নি বাতিল করে দিয়েছে।  এখন বিরোধী শিবিরে বলা হয় কপি ক্যাট কার্নি কারণ কার্নি শুধু কার্বন ট্যাক্স পলিসি বা অন্যান্য পলিসি কপি করেনি, খবর বেরিয়েছে তার পিএইচডি থিসিসও কপি করা।

আসলে বেবি বুমারদের খাওয়া পরা নিয়ে কোন চিন্তা নেই,  অধিকাংশের মর্টগেজ দেওয়া হয়ে গেছে,  পেনশনের টাকায় দিব্যি চলে যায় কিন্তু ঝামেলা বেধেছে তাদের ছেলেমেয়েদের। কানাডার মন্দা অর্থনীতিতে চাকরির সুযোগ দিন দিন সীমিত হয়ে আসছে,  নিজেদের টাকায় বাড়ি কিনতে পারবে, সেই আশা দূর অস্ত। বিশ্ববিদ্যালয় সদ্য পাশ করা ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলে দেখুন।  কাজের সুযোগ পাচ্ছে কিনা খবর নিন। আমার গতকালকের পোস্টে পিয়ের পলিয়েভ এর বক্তব্যে একটা হিসাব আছে, টরন্টো বা ভ্যাংকুভারে  বাড়ি কিনতে হলে কত টাকা ইনকাম করতে হবে।

তাই কার্নির ভ্যানিটি আইডিয়াগুলো বেবি বুমারদের জন্য পোষায়, তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য নয়। জেন জিরা ঠিক বুঝতে পেরেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মত অভিজাত ক্লাবের উচ্চ মার্গের সদস্য মার্ক কার্নি ক্ষমতায় আসলে জাস্টিন ট্রুডোর চতুর্থ  টার্ম ফিরে আসবে, আবার সরকারে সেই একই ভ্যানিটি প্রজেক্ট গুলো গুরুত্ব পাবে,  সমকামীদের নিয়ে আদিখ্যেতা,  ক্লাইমেট চেঞ্জ,  কালো বা বাদামি লাইভস ম্যাটার, এক গোষ্ঠীকে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া,  যেমন ইন্ডিয়ার হিন্দু বনাম খালিস্তানি শিখ,  এমন সব উদ্ভট উদ্ভট বিষয় নিয়ে রাজনীতি। গত দশ বছর ক্লাইমেট চেঞ্জ এর নামে ওয়েস্টার্ন কানাডাতে তেল গ্যাসের কোন প্রজেক্টই করতে দেয়া হয়নি। ট্রুডো কে সামনে রেখে কার্নিই এসব পলিসি বাতলে দিত। এবং লিবারেল এসব পলিসি  নিয়েছে যেহেতু তরুণদের মধ্যে এসব নিয়ে হুজুগ ছিল বরাবরই। তরুণেরা ছিল লিবারেল এন ডি পির পক্ষে আর প্রবীনেরা ছিল রক্ষণশীলতা, চিরায়ত মূল্যবোধের পক্ষে।

কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে,  প্রবীণরা বেকেঁ বসছেন। আর সেই সুযোগে এবার মার্ক কার্নি  ক্ষমতায় আসার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।  যদিও তাকে নিয়ে যাচাই বাছাই এখনো বাকি আছে। খবর বেরিয়েছে,  ২৫ বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড তিনি কর ফাকি দেয়ার স্বর্গরাজ্য বারমুডায় সরিয়ে নিয়েছেন। আরো চার সপ্তাহ বাকি আছে। দেখা যাক কি হয়।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles