6.9 C
Toronto
শনিবার, মে ৩, ২০২৫

ছয় হাজার সুন্দরী তরুণী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ

ছয় হাজার সুন্দরী তরুণী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ - the Bengali Times

ছবি সংগৃহীত

অভিজাত এলাকায় আলিশান বাসা কিংবা হোটেলে চাওয়া মাত্র বাসায় পৌঁছে যাবে পছন্দের নারী। যার সঙ্গে কাটানো যাবে অন্তরঙ্গ সময়। অবশ্য তার জন্য গুনতে হবে মোটা অংকের টাকা। যা ১০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা ছাড়ায়। নারীর সৌন্দর্যের ওপর ভিত্তি করেই বাড়ে দামের গ্রাফ। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে নারী ও ইয়াবা সাপ্লাইয়ের দায়ে ছয়জনকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।আটককৃতরা হলেন- সৌরভ ইসলাম, তাসনিয়া বেলা, চৈতি, সামিনা আলম নীলা, সাকিব আহম্মেদ ও মানসিব হায়াত।

সুন্দরী তরুণীকে দিয়ে ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে এই চক্রটি। আর এ ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী, সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি এমনকি প্রবাসী ব্যক্তিরাও। সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে এই চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিশেষ করে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা ও বসুন্ধারা এলাকায় এ ঘটনা বেশি ঘটছে। প্রায় ৬ হাজার সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে শত শত প্রতারণা করা এ রকম এক ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

- Advertisement -

গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুনুর অর রশিদ বলেন, চক্রটি প্রতারণা দেখে আমরা নিজেরাও বিস্মিত হয়েছি। সারা ঢাকা শহরে এদের পদারচারণা ছিল। ক্লায়েন্টদের নারী সাপ্লাই দিয়ে সেটি আবার গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে চক্রটি দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইলিং করে আসতো। আমরা এ ধরনের কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানে নামি। এরপর ৫ জনের পুরো চক্রকেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।

তিনি বলেন, চক্রটি প্রায় ৬ হাজারের মত সুন্দরী তরুণী দিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তারা বাসা বাড়ি ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও গেস্ট হাউসেও সাপ্লাই দিত। রাজধানীতে এ রকম আরো সিন্ডিকেট রয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। এগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান চলবে।

ডিবি জানায়, এ সিন্ডিকেটের অন্যতম মূল হোতা সামিনা আলম নীলা নামের মধ্যবয়স্ক মহিলা। এর সঙ্গে রয়েছে তাসনিয়া বেলা, মানসিব হায়াত, সৌরভ ইসলাম এবং সাকিব আহমেদ। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা মহানগর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধোঁকা দিয়ে নারী সরবরাহ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তারা গুলশান-বনানীর মত অভিযাত এলাকার বিভিন্ন ফ্ল্যাট এবং হোটেল সমূহে নারী সরবরাহ করে থাকে। এই কাজে সাকিব এবং চৈতি নামের একটি মেয়ে সামিনা আলম নীলার সহায়তায় একটি চক্র গড়ে তুলেছে। সাকিব এবং চৈতি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে মিশে খদ্দের জোগাড় করে থাকে এবং সামিনা আলম নীলার মাধ্যমে তাদের নিকট বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের সরবরাহ করে থাকে। সামিনা আলম নীলা এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার নারীকে বিভিন্ন খদ্দেরের নিকট সরবরাহ করেছে বলে জানা যায়।

প্রতারণার ফাঁদ : মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের নিকট জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিকে টার্গেট করে মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। পরে তাদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে কৌশলে একটি সুনির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে ফাঁদে ফেলে। এ সময় অন্তরঙ্গ মুহুর্ত চলার সময় এই চক্রের অন্যান্য সদস্য বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় তারা টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে জোর পূর্বক আপত্তির ছবি তোলে। তারা এ সময় পত্রিকায় ছবি প্রকাশ করার হুমকি ও ভূয়া পুলিশরা মামলার হুমকি দেয়। এরপর তারা টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে দেনদরবারের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়। এছাড়াও টার্গেটকৃত ব্যক্তির নিকট পাঠানো নারির কাছে গোপন ক্যামেরা দিয়ে পাঠায়। এরপর অন্তরঙ্গ মুহুর্তেও ছবির একটি ক্লিপ ওই ব্যক্তির নিকট পাঠিয়ে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এর বাইরেও টার্গেটকৃত ব্যক্তি তাদের বাসায় আসলে পূর্বে থেকে সিসি ক্যামেরা রেডি করে রাখা হয়। এরপর একই কায়দায় চলতে টাকা অর্থ আদায়।

কর্মকর্তারা বলেন, ভুক্তভোগী এসব ব্যক্তির নিকট থেকে মাসে কখনো সপ্তাহে টাকা নিতে থাকে। এভাবে একজন ভুক্তভোগী বছর জুড়েও টাকা দিয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, গুলশান বনানীতে নানা এভাবে প্রতারণা করা বেশকিছু চক্র রয়েছে। সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে এ রকম ব্ল্যাকমেইলিং করে থাকে। মান সম্মান ও লজ্জার ভয়ে থাকা এসব ব্যক্তি নিরবে সহ্য করে যান।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ভুক্তভোগী জানান, গুলশান বনানীতে প্রতারণার এ রকম ভয়ঙ্কও কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের প্রতারণার খপ্পরে পড়ে ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। এই এলাকায় গড়ে উঠা অবৈধ স্পা সেন্টারগুলোতে প্রায়শ যাতায়াত এ প্রতারকের। নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে সুন্দরী নারী দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। আর এ ফাঁদে পা দিলেই ঘটে সর্বনাশ।

পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি শামিম রিফাত জানান, আমি এখানে অতিসম্প্রতি জয়েন করেছি। এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে অভিযানও শুরু হয়েছে। আমরা এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধে কাজ করছি।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (লালবাগ) মশিউর রহমান বলেন, আমরাও এ ধরনের প্রতারক চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। ওই সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলো দোলা নামের এক নারী। প্রায় ৪৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তারও একই ধরনের সিন্ডিকেট ছিল।

তিনি বলেন, এই চক্রটি একটি কাজ করার পর ২/৩ মাস গা ঢাকা দিয়ে থাকে। এরপর আবার তারা মধ্য বয়সী বিত্তবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে আবার প্রতারণার কাজটি চালায়।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles