8 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

ক্রিকেট খেলার মতো

ক্রিকেট খেলার মতো
ক্রিকেট খেলার মতো

রাত সাড়ে এগারোটা।

কিভাবে এত রাত হয়ে গেলো টেরই পাইনি। শরীরে এনার্জী দরকার। কাজ থেকে ফিরে সেই সাড়ে পাঁচটার দিকে ভাত খাইছিলাম। করল্লা ভাজি, ডাল আর মুরগি। তারপর ছেলেটাকে নিয়ে আধা ঘন্টার জন্য হাঁটতে গেছি। এই ছয় ঘন্টা না খাওয়ার মতই। সন্ধ্যায় শুধু বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের ছোট্ট ছোট্ট চার-পাঁচটা সিঙ্গারা আর চা খাইছি। সমস্যা হলো রাতে অল্প হলেও মজার কিছু চাই। রাতের খাবার যত হালকা, তত গাঢ় ঘুম।

- Advertisement -

লেখালেখি করতে গেলে পেটের সাথে ব্রেইন এর নিবিড় কোঅর্ডিনেশন লাগে। তা না হলে লাগাম থাকে না। যেদিন দেখবেন খুব দুঃখের কথা লিখতেছি, পাঠকরা কানতেছে, বুঝবেন পেটে খিদে নিয়ে লিখছিলাম। যেদিন পাঠকরা পড়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিবে; বুঝবেন ভরা পেটে তুখোড় একটা চা হাতে কম্পিইউটারের সামনে সুখ-চুমুক মেরে লিখছি। আর যেদিন দেখবেন ম্যাজমেজে লেখা, লাইক নাই/কমেন্টস নাই, সাহারা মরুভূমির হাহাকার; বুঝবেন বাসি ব্রয়েলার দিয়ে সপ্তাহ খানেক আগের বরফ হয়ে যাওয়া পুরানা ভাতে গরম পানি ছিটায়ে মাইক্রোওয়েভে হিট দিয়ে খাইছি। টক ডাল দিয়ে।

যাই হোক, সবাই নাক ডাকতেছে। রান্নাঘরে ফ্রিজ খুলে ঝুকে, রুকুতে যাবার মতো হাঁটুতে হাত ঠেশ দিয়ে, বামে তাকায়ে ফ্রিজের ভেতরটা স্ক্যান করতে থাকি। দুই সপ্তাহ আগের তরমুজ জিপলগ ব্যাগে বড় ফালি করে রাখছিলাম যাতে ফ্রেশ থাকে। কিছু বিকালবেলায় বেঁচে যাওয়া সিঙ্গারা, চিজ ক্রীম, দেশি সেমাই, এভোক্যাডো, পুরানা খিচুড়ি, মাংস, সকালের আলু-বেগুন ভাজি। আর গিন্নি কিছু জিনিস সেই প্যানডেমিকের আগ থেকে প্লাস্টিকের কৌটায় যত্ন করে তুলে রাখছিল। জিজ্ঞেস করলেই বলে সময় হোক..

তরমুজটা বের করে ফালি করে ফেলি। বিশ্রী স্বাদের। তরমুজ আর আনারস যারা বুঝে শুনে কিনতে পারে, তারা হলো সত্যিকারের জিনিয়াস। আজকে না শেষ করলে পচে নষ্ট হবে। মহামানবেরা দাওয়াতে গিয়ে রান্না খারাপ পেলে নাকি বেশি করে খায়ে কমায়ে ফেলেন! তরমুজ খায়ে ফ্রিজটা ফাঁকা করব; কিছু সোয়াব যদি যোগ হয়। তাছাড়া এতে ক্যালোরি খুব কম। ছেলেটার জন্য সকালে বানানো এগ মাফিনটা আস্তই আছে, খায় নাই। সাথে একটা বার্গারের পেটি ঢুকায়ে নিয়ে মাফিনটা পাউরুটি টোস্টারে ঢুকায়ে গরম করে খাইলাম। এই বিফ পেটির বয়স প্রায় দশ দিন। নায়াগারা ফলস এ যাবার সময় কয়েকটা ভাইজে নিছিলাম। হোটেলে ছোট্ট টোস্টার নিয়ে গিয়ে সেই পেটি গরম করে বার্গার বানায় খাইছি। অসাধারণ! এই আইডিয়ার জন্য আমি নিজেই নিজের পিঠে সাব্বাশ বলে চাপড় দিয়ে ফাঁকা দাঁত বের করে হাসছি।

এবার ক্যাম্পিং এ যাবার সময়ও এই বুদ্ধি খাটাবো। আরেকটা আইডিয়া পাইছি। পাঠকরা, আমার পিঠে সাব্বাশ বলে একটা চাপড় দিয়েন তো? সবকিছুই পাউরুটি টোস্টারে গরম করবো। দাঁড়ান দেখাচ্ছি, চলেন ডাইনিং এ:

একটা নান রুটি প্রথমে অর্ধেক ভাঁজ করে অর্ধচন্দ্র বানাই। তারপর আরেকটা ভাঁজ করে কোয়ার্টার সাইজ বানায়ে টোস্টারের গর্তে দিলাম। এবার ফ্রিজ থেকে খাসির দুই পিস্ রান্না মাংস বের করে এলুমিনিয়াম ফয়েলে থলের মতো করে সাবধানে ভরে টোস্টারের আরেকটা গর্তে রেখে দেই। দুইবারের বার চালু করতেই টগবগ করে ফুটতে লাগলো। তবে সাবধান, ফয়েল লিক করলে আম ছালা দুইটাই যাবে, ইলেকট্রিক শক খাবেন। কানাডার ইলিক্ট্রিক শক খাওয়া আর আর মশার চুলকানি একই কথা। কিন্তু বাংলাদেশের দুইশ বিশ ভোল্টের শক খেলে বাপের নাম ভুলে যাবে। তাই বঙ্গদেশীয় ভাইরা এসব করতে যাবেন না। পিলিজ..

রাতে কুড়মুড়ে কিছু না চিবালে ভাল্লাগে? রাত মানেই জাঁকজমক অবস্থা। বাদাম বাসায় তিন ধরণের; চীনা, কাজু আর আলমন্ড। তিন কৌটা থেকে এক মুঠো করে নিতেই অনেক হয়ে গেলো। মিক্স করলে পুষ্টি বাড়ে। আর জানেন তো, বাদামের ফ্যাট খুব উপকারী? তবে শুধু শুধু বাদাম খাওয়া আর সস ছাড়া সিঙ্গারা খাওয়া একই কথা। তাই এক মুঠো শ্রীলংকান ঝাল চানাচুরও মিশালাম। আর পেঁয়াজ কুচি করে, অনেক করে কাঁচামরিচ দিয়ে, খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে আচ্ছামত ডলে নিয়ে বাদামের বাটিতে মিশালাম। কি যে চকচক করতেছে! মনে হচ্ছে বিকাল সাড়ে তিনটায় গড়াই নদীর পানিতে সূর্য ঝিলিক মারতেছে।

বারান্দায় বসে পায়ের উপর পা তুলে মিশ্রণটা কুড়মুড়িয়ে খাই। জিনিস হইছে একটা! সেইরকম ঝাল। জিব্বার ঝাল কমাতে দেড় চামুচ চিনি দেওয়া এক কাপ চা খাইলাম। একটু দূরে পায়রা দুইটা বাচ্চা নিয়ে ঘুমাচ্ছে, ওদের আর ডিস্টার্ব না করি। আর খুব ভুল করছি, মরিচের ঝাল কমাতে চা না খায়ে আইসক্রিম খাওয়া উচিত ছিল। যে গরম পড়ছে! তাই ফ্রিজ থেকে স্ট্রবেরি, ভ্যানিলা আর চকলেটের কৌটা থেকে তিন স্কুপ আইসক্রিম বাটিতে নিয়ে কম্পিউটারে বসে কিছু লেখার চেষ্টা করি। এইবার কাজে দিচ্ছে।

কম্পিউটারের সিপিইউ এর উপরে বাচ্চারা সন্ধ্যায় কিছু পটেটো ফ্রাই রাখছিল। ওগুলি চিবায়ে লিখতে থাকি। জিনিস অপচয় করতে নাই। রাত একটার দিকে আজকের মতো ইস্তফা দিয়ে ঘুমাতে যাই। কিন্তু বিধি বাম, তিড়িং করে লাফায়ে উঠি। গিন্নি শোবার আগে অনুরোধ করছিল টেবিলের কোনায় রাখা সিরামিকের বাটির খাবারগুলো যেন ফ্রিজে তুলি। এই গরমে নষ্ট হবে।

আবার আলো জ্বালায়ে, লুঙ্গি গিট্টু দিতে দিতে ডাইনিং এ ছুটলাম। ঢাকনা খুলে দেখি এক গাদা লাজানিয়া! কখন বানাইছে?

আমার মনে সন্দেহের দানা বাধতে থাকে; আমি কি লাজানিয়া খাইছিলাম? এটা খেলে আমি অবশ্যই এক গ্লাস দুধ খাইতাম, তাই না?

বয়স হয়ে যাচ্ছে। কিছু মনে থাকে না।

Benefit of the doubt জিনিসটা সবারই কাজে লাগানো উচিত।

ক্রিকেট খেলার মতো…

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles