-0.3 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

আমাদের বৈশাখ

আমাদের বৈশাখ
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা

সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য গ্রহণ বর্জনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় । বহু আগের একটা পহেলা বৈশাখের কথা স্মৃতি হাতড়ে ভেবে দেখুন তো কোন পার্থক্য খুজে পান কিনা ?? কি খুজে পেয়েছেন ? অবশ্যই খুজে পাবেন ? অনেক কিছু বিয়োগ হয়েছে আবার অনেক কিছু যোগ হয়েছে ।

অনেক আগে দেখতাম পহেলা বৈশাখে দোকান গুলিকে নানা বর্ণে সাজানো হোত । পুরনো হিসাব সব চুকেবুকে দিয়ে নতুন হিসাবের খাতা খোলা হোত । আর এই উপলক্ষে হোত মিষ্টিমুখ যাকে বলা হয় ‘ হালখাতা’ অর্থাৎ দোকানের হিসাব হালনাগাদকরন । দোকানী তার ক্রেতাদেরকে মিষ্টি মুখ করাতো আর ক্রেতারাও বাচ্চা কাচ্চা সহ দোকানে হাজির হয়ে যেত উৎসবের আমেজ নিয়ে ।

- Advertisement -

আর বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হোত বৈশাখী মেলা । সাধারণত ফাকা জায়গা অথবা মাঠে নানা রকমের মেলা বসতো । বেশীর ভাগ মেলায় থাকতো হরেক রকম হাতে তৈরি জিনিষ । কুটীর শিল্পের নানা রকম সামগ্রী । মেয়েদের জন্য থাকতো চুড়ি থেকে আরাম্ভ করে নানা রকম প্রসাধনী । স্নো পাউডার , আলতা, কম দামী লিপিস্টিক , আরো কত কি !! মাঝে মধ্যে গ্রাম গঞ্জের বাউলরা এসে এই মেলা গুলিকে জমিয়ে রাখতো । অনেক মানুষের ভিড় আর তার মাঝে বাউল লালন থেকে আরাম্ভ করে নানা রকম বিচিত্র সব গ্রাম গঞ্জের গানে আসর মাতিয়ে রাখতো ।হোত জারি গান । দেখার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে অনেক সময় থাকতো ডুগডুগিসহ বানরের খেলা কিংবা সাপুড়ের বাঁশিসহ সাপের খেলা । নানা রকম খাবারও শোভা পেত এই সব মেলায় । বিভিন্ন ধরনের পিঠা , কটকটি , মুড়ি , মুড়কী , পেড়া সন্দেশ , খেজুরের গুঁড় , পাটালী গুঁড় । একেবারে আনকোরা সব হাতে তৈরি মিষ্টি মণ্ডা ।

রমনার বটমূলে ছায়ানটের আসর অনেক দিন থেকে হয়ে আসছে । ফকির আলমগিরের ঋষিজও বৈশাখকে মাতিয়ে রেখেছিল ।

এই দিনটিতে ঘরে ঘরে ভাল মন্দ কিছু খাওয়া হোত । ভিন দেশী কোন খাবার নয় , একেবারে বাঙ্গালীয়ানা খাবার ।

কালক্রমে নতুন নতুন আয়োজন যুক্ত হতে থাকলো । চারুকলার ছাত্র ছাত্রীরা এক সময় রাজপথে আলপনা একে বের করা শুরু করলো মঙ্গল শোভা যাত্রা । বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে মূলত নানা আকৃতির পশু , পাখি আর মুখোশের নানা বাহারি শোভা যাত্রা বাঙ্গালী ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকেই প্রতিফলিত করে । এক সময় এর সঙ্গে একটু পশ্চিমা ধাঁচের কনসার্টও যুক্ত হয়েছিল যাকে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলতে একটু দ্বিধা হয় । আরো যুক্ত হোল পান্তা-ইলিশ । বিক্রি হতেও দেখা যায় । যেন বিক্রি হয় বাংলা সংস্কৃতি !!

আগেই বলেছি গ্রহণ বর্জনের মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এগিয়ে চলে । এই পরিবর্তনকে মেনে নিতেই হবে । তবে একে বন্ধ করা যাবে না । একে বন্ধ করা মানে পরাজয়কে মেনে নেওয়া । একে বন্ধ করা মানে , সময়ের কাটাকে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া ।

সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles