2.9 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে

তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে
আবাসিক এলাকার মধ্যে আধুনিক সুন্দর এই মন্দির

শুক্রবার।

গুড ফ্রাইডে’র ছুটি। বিকালে বাইরে বের হচ্ছিলাম। গিন্নি দোকানে যাবে। আর একটু ড্রাইভ করাও হবে। বিত্ত এসে বিরক্ত নিয়ে বলল, আব্বু না গেলে হয় না?

- Advertisement -

– তোদের যাওয়ার দরকার নাই

– এখন রব্লক্স গেমস এর স্পেশাল ইভেন্ট চলতেছে

– বললাম না তোরা থাক? একটু মাঠে তাকিয়ে দেখ বাচ্চারা কিভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে। গেম্স্ খেলে কতটা আনসোশাল হয়ে গেছিস বুঝতে পারছিস?

সে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। একা বাসায় থাকতেও চাইছে না।

বের হবার সময় ছেলেটাও ফোঁপাতে ফোঁপাতে আসলো। আমরা মারখাম রোড ধরে উত্তরে যেতে থাকি। গাড়ির মধ্যে থমথমে অবস্থা। ঠিক পেছনেই একটা পুলিশের গাড়ি। পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বললাম, বিত্ত রে! দ্যাখ পেছনে কে!

– কে?

– পুলিশ! তোকে কাঁদলে দেখলে কিন্তু তোর বাপকেই আগে ধরবে!

– স্টপ আব্বু! একদম ফান করবা না

– আমার পুলিশ যে ভয় লাগে!

– উড ইউ স্টপ?

দখিনা খিলখিল করে হাসতে থাকে। বললাম- দেখছিস, পুলিশের ভয়ে পাশের গাড়িটা কি আস্তে আস্তে যাচ্ছে? দ্যাখ তো কিডা চালাচ্ছে? ভীতুর ডিম্ টা কে?

আমি গাড়িটাকে ওভারটেক করার সময় দেখি সবাই সত্যি সত্যি কৌতূহল চোখে বামে তাকিয়ে দেখছে কে চালাচ্ছে।

রেড লাইট ইন্টারসেকশনে গাড়ি থামতেই ঠিক আমার বামে পুলিশের গাড়িটা দাঁড়ালো। বললাম, ওরে বাবা রে!

– ড্যাডি, একটা পুলিশ আমাকে হাই দিলো! (দখিনা খুশিতে বলল)

– তুই-ও দে?

– দিসি। সেইদিন একটা ফায়ারম্যানও আমাকে হাই দিসিলো!

– গুড!

আমরা ম্যাকনিকল রোডে ঢুকে জগজিৎ টেক্সটাইল-এ গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। কোভিডের কারণে চিরতরে। গিন্নির কাজটা আজ হলো না।

গাড়ি হাঁকিয়ে আরো পশ্চিমে গিয়ে বামে টার্ন নিয়ে ব্রিমলি রোডে উঠে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলতে থাকি। একটা গান ছেড়ে দিতেই বিত্ত বলল, আব্বু স্টপ! নো সঙ!

তার এখন কোনো কিছুই ভালো লাগবে না। ব্যাটার মেজাজ আসলেই খারাপ। বেশি রসিকতা করলে উল্টা ফল হবে; রাগ চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে যাবে। তবে মানুষকে বেশি রাগাতে রাগাতে শেষ পর্যন্ত তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়ে হেসে ফেলে। এই ভরসায় বললাম, বাসায় যাবি?

– হু।

আমি ডেনভারের গানের মতো গেয়ে উঠলাম-“ব্রিমলি রোড, টেইক মি হোম… টু দা প্লেস…”

মা-মেয়ে হেসে উঠল। বিত্ত’ও হাসি থামাতে পারলো না। হাসি আর রাগ মেশানো একটা অস্বস্তিকর অবস্থা নিয়ে সে চুপচাপ বসে থাকলো। বললাম, আচ্ছা, ব্রিমলি রোডে একটা চাইনিজ বুদ্ধিস্ট টেম্পল আছে। একটু ঘুরে আসি?

– নো! (তারা এক সাথে বলে)

– শুধু একটা মিনিট, কী যে সুন্দর! আমি একা জাস্ট নেমে একটু দেখি?

– নো!

তাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও আমি টেম্পল এর পাশের গলিতে গাড়ি রেখে নেমে পড়তেই দখিনা বলল, আব্বু আমি যাই তোমার সাথে? ব্যাস, দেখাদেখি সবাই নেমে এলো। আমি বুদ্ধ মন্দিরটার সামনে ছবি তুলতে থাকি। আবাসিক এলাকার মধ্যে আধুনিক সুন্দর এই মন্দির। ২০১২ সালে তৈরী। আর তেমন কোনো ইনফরমেশন পেলাম না। ওয়েবসাইটেও না। কয়েকমিনিট ঘুরে দেখে বাচ্চাদের পীড়াপীড়িতে গাড়িতে ফিরে যেতে হলো।

ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করি, আব্বু তোর কয় সিটের গাড়ি পছন্দ?

– সেভেন

– আমি জানি কেন! তখন তুই আরামে পেছনে একা বসবি, গেম্স্ খেলবি

– হু

– আজকে সব দোকান বন্ধ তাই না?

– হু, ইস্টার ফ্রাইডে

– পিৎজা পিৎজা খোলা আছে?

– চল তো দেখি?

আমি লুকিয়ে মিররে তাকে দেখি। কী উচ্ছসিত! তাকে খুশি করানোর জন্য সামান্য একটা পিজাই যথেষ্ট।

আমিও বিত্ত’র বয়সে আব্বার মটরসাইকেলের পেছনে বসে ঘুরতাম। আব্বার সাথে বাইরে গেলেই কুষ্টিয়ার শফি হোটেলের মোগলাই কিংবা শাহীন/শিশির বেকারির প্যাটিস/সিঙ্গারা খাওয়াতো। তাঁর ঝাল ভাজাভু-জিতে খুব নেশা ছিল। বিশেষ করে ‘কচুরী’ জিনিসটা খেত খুব আনন্দ নিয়ে। মোগলাই অর্ডার করলেই স্পেশাল। যেখানে থাকবে দুইটা ডিম, এক্সট্রা কিমা। আমার প্লেটেরটা শেষ হলেই আব্বা নিজের প্লেট থেকে তুলে আমার প্লেটে ফেলতো।

আজকে বিত্ত নিশ্চয়ই আমার প্রতি খুব বিরক্ত? যেরকম আমরাও ছোটকালে, এমন কি অনেক বড় হয়েও হতাম? অনেক শাসন করতো। তখন কারণটা না দেখে কি বোকার মতোই না আব্বার উপর রাগ করতাম! আব্বা চট্টগ্রাম থাকতে আমাদের নিয়ে প্রতি মাসে চাইনিজে নিয়ে যেত। পতেঙ্গা সি বীচ, নিউমার্কেট, ফয়েজ লেক; কত জায়গায় যে ঘুরতো! কি সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা হতো! শুধু তাই না, আত্মীয় স্বজনদের সাথে নিয়ে পর্যন্ত ঘুরতো। এমন কি, আব্বার পোস্টিং যখন পটিয়া’তে ছিল, তখন চিটাগং এর বাকলিয়া চারতলা বিল্ডিং এর পরিচিত বেশ কয়েকটা পরিবার/প্রতিবেশী সাথে নিয়ে গিয়েছিল ফরেস্ট অফিসে পিকনিক করতে। অথচ আমরা মানুষটার শুধু রাগী চেহারাটাই দেখতাম, ভেতরের ভালোবাসাটা খুঁজে পেতাম না। আর যখন খুঁজে পেতে শুরু করলাম, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে!

অনেক অনেক!!

আমরা ‘পিৎজা পিৎজা’ দোকানের কাছে আসতেই ছেলে মেয়ে দুজন চেঁচিয়ে উঠলো, আব্বু খোলা!

আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে দরজা আটকানোর আগে ঝুকে তাদের জিজ্ঞেস করি, কেমন পিজা? কী টপিং?

– এক্সট্রা লার্জ, পেপেরোনি! (বিত্ত বলে)

– নো ড্যাডি! প্লেইন চিজ পিজা! নো টপিং প্লিজ? (দখিনা বলে)

আমি হতাশ হয়ে দুজনের দিকে চেয়ে থাকি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল…

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles