5.8 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

কানাডীয় সাহিত্যে বিশ্বসাহিত্যের স্বাদ

কানাডীয় সাহিত্যে বিশ্বসাহিত্যের স্বাদ - the Bengali Times
<br >এ্যান মাইকেল

অন্যদিকে ত্রিনিদাদীয় লেখকদের মধ্যে অন্য যে আরেকজন বিপুল পরিচিতির অধিকারী, তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ মহারাজ (জন্ম. ১৯৫৫)। রবীন্দ্রনাথের বই ‘দ্য অ্যামেজিং অ্যাবজর্ভিং বয়’ ২০১০ সালে ট্রিলিয়াম বই পুরস্কার পেয়েছিল। ত্রিনিদাদের বংশোদ্ভ‚ত আরেক লেখক হলেন শানি মাতো (জন্ম. ১৯৫৭)। আয়ারল্যান্ডে জন্ম শানির শৈশব-কৈশোর কেটেছে ত্রিনিদাদে। উনিশ বছর বয়সে শানি ভ্যাঙ্কুভারে চলে আসেন। শিল্পকলার অনেক মাধ্যমে কাজ করা নারী শানির প্রথম বই, ছোটোগল্পের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। এ পর্যন্ত মোট ছয়টি কাথাসাহিত্যের বই প্রকাশিত হয়েছে শানুর। সেগুলোর মধ্যে তিনটি একলক্ষ ডলারের গিলার পুরস্কারের শর্টলিস্টেও উঠেছিল। ২০০৯ সালে প্রকাশিত শানুর উপন্যাস ‘বাল্মিকীর মেয়ে’র প্রেক্ষাপট ত্রিনিদাদের জীবন। এ প্রসঙ্গে রনজ ধালিওয়ালের (জন্ম. ১৯৭৬) কথাও বলে রাখা যেতে পারে। পাঞ্জাবি বংশোদ্ভ‚ত রনজিৎ সিং ধালিওয়াল এ পর্যন্ত দুটি উপন্যাস লিখেছেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাসটির নাম ‘ডাকু’ রাখতে তিনি একটুও দ্বিধা করেননি।

উইনিপেগের লেখিকা ক্যাথি অসলিয়ারও কিন্তু ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে উপন্যাস লিখতে সামান্য দ্বিধা করেননি। ২০১১ সালে প্রকাশিত তাঁর কাব্য-উপন্যাসটির নামই তিনি দিয়েছেন ‘কর্ম’। অ-ভারতীয় লেখকের এই যে প্রয়াস অর্থাৎ ভারতীয় বোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাব ‘কর্ম’কে তাঁর উপন্যাসের বিষয় করা সেটি কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এশীয় আরেক দেশ মায়ানমারকে (পূর্ব নাম বার্মা) প্রেক্ষাপট করে দুটি উপন্যাস লিখেছেন কারেন কনেলি (জন্ম. ১৯৬৯)। কারেনের প্রথম উপন্যাসের নাম হলো ‘দ্য লিজার্ড কেইজ’। ১৯৯৬ সালে মায়ানমার ভ্রমণকালে এক রাজবন্দীর সাথে তার যে সংযোগ সেটিকে আশ্রয় করে রচিত এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৫ সালে। ২০০৯ সালে মায়ানমারের প্রেক্ষাপটেই তিনি রচনা করেন নন্দিত গ্রন্থ ‘বার্মিজ লেসনস’। কানাডীয় লেখক কর্তৃক কানাডার বাইরের জীবন নিয়ে এই যে সাহিত্য রচনা সেটি কিন্তু শুধু পঠিতই হচ্ছে না, পুরস্কৃতও হচ্ছে। কানাডার সাহিত্যের বিশ্বজনীনতার সূত্র এখানেই।

- Advertisement -

এশীয় আরেক দেশ শ্রীলঙ্কার বংশোদ্ভূত কানাডীয় লেখক ধারার প্রথম সারির একজন হলেন মাইকেল ওনডাডজী (জন্ম. ১৯৪৩)। কানাডার সাহিত্যাঙ্গনে হেন কোনো পুরস্কার নেই যা মাইকেল পাননি। তাঁর বহুল পরিচিত উপন্যাস হলো ‘ইন দ্য স্কিন অব অ্যা লায়ন’। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত সে উপন্যাসটিতে টরন্টো শহরের বিনির্মাণে অভিবাসীদের অবদানকে চিহ্নিত করেছেন মাইকেল। ২০০০ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘অনিল’স ঘোস্ট’ রচিত হয়েছে অনিল টিসেরা নামের এক শ্রীলঙ্কানকে কেন্দ্র করে, যে প্রথমে যুক্তরাজ্য এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসে এবং ফিরে যায় মাতৃভূমি শ্রীলঙ্কাতেই। উপন্যাসটি গিলার এবং গভর্নর জেনারেল দুটো পুরস্কারই পেয়েছিল।

আবার ধরা যাক, ‘বারবারিয়ান লস্ট: ট্রাভেলস ইন দ্য নিউ চায়না’ বইয়ের কথা। কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ছোটভাই আলেক্সান্ডার ট্রুডোর লেখা এই বই কিন্তু চিন দেশ নিয়ে। চিনের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে লেখক-সাংবাদিক আলেক্সান্ডারের এই বই কিন্তু বেস্ট সেলারও হয়েছে। বইটির ফরাসি অনুবাদ গভর্নর জেনারেল পুরস্কারও লাভ করেছে। কোনো অসুবিধা হয়নি। আবার ধরা যাক ডেভিড রোটেনবার্গের কথা। পেঙ্গুইন, কানাডা থেকে ২০০৯ সালে প্রকাশিত তাঁর আট শ পৃষ্ঠার উপন্যাস ‘সাংহাই’ রচিত হয়েছে চিনদেশের ওই শহরটিকে কেন্দ্র করে। চিনদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি কিন্তু রহস্য উপন্যাসের দুটি সিরিজ রচনাও করছেন।
এবার আসি বিপুলভাবে প্রশংসিত কানাডীয় কবি ও ঔপন্যাসিক অ্যান মাইকেলসের কথাতে। অ্যানের উপন্যাস দুটির একটি হলো ‘ফিউজিটিভ পিসেস’। বর্তমানে টরন্টো শহরের শিল্প-সাহিত্যের বিকাশে নিয়োগপ্রাপ্ত এই প্রতিভাধর লেখকের উপন্যাসটি সিনেমা হিসেবেও অর্জন করেছে বহুল প্রশংসা। অথচ উপন্যাসের বিষয় হিসেবে নিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে স্পেনের প্রেক্ষাপটকে। কোনো একটি একক গ্রন্থ কানাডায় এত বেশি পুরস্কার অতীতে কখনো পেয়েছে বলে মনে হয় না। অথচ বইটির বিষয় কিন্তু অ-কানাডীয়।

জাপানি বংশোদ্ভূত জয় কগোয়ার জন্ম কিন্তু ভাঙ্কুভারেরই। প্রবীণ এই লেখকের (জন্ম. ১৯৩৫) সবচেয়ে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত গ্রন্থ হলো ‘ওবাসান’ (১৯৮১)। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রদেরকে ‘ওবাসান’ বা ঠাকুমার কথা পড়তে হয় পাঠ্যতালিকায়। জয় কিন্তু তাঁর উপন্যাসের বিষয় করেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে কানাডীয় জাপানিদের গল্পকেই। ভাবলে আনন্দ লাগে ১৯৯৩ সালে আর্নল্ড ই ডেভিডসন ‘ওবাসান’-এর ভূমিকা নিয়ে এক শ পৃষ্ঠার একটি বই লিখে ফেলেছিলেন। ১৯৯৭ সালে ম্যাসন হ্যারিস লেখেন জয়ের সাহিত্যকর্মের ওপর একটি সমালোচনা গ্রন্থ। ২০১১ সালে জয় কগোয়ার সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম নিয়ে ৩৬৩ পৃষ্ঠার বহু লেখকের বিপুল এক গ্রন্থ প্রমাণ করে জয় কানাডীয় সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য এক শব্দশিল্পী। জাপানি বাবা-মার সন্তান কেরি সাকামতো (জন্ম. ১৯৬০) রচিত দুটি উপন্যাস ‘দ্য ইলেকট্রিক্যাল ফিলডস’ (১৯৯৮) এবং ‘ওয়ান হানড্রেড মিলিয়ন হার্টস’ (২০০৩) উভয়েই কানাডীয় জাপানিদের অভিজ্ঞতার কথা। এবছর কেরির তৃতীয় যে উপন্যাস ‘ফ্লোটিং সিটি’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, সেটির বিষয়ও জাপানি কমিউনিটি, চরিত্রগুলো আদিতে জাপানি। উল্লেখ করা উচিত হবে যে, ‘দ্য ইলেকট্রিক্যাল ফিলডস’ শ্রেষ্ঠ প্রথম উপন্যাস হিসেবে কমনওয়েলথ লেখক পুরস্কার লাভ করেছিল।

আবার ধরা যাক, চাইনিজ বংশোদ্ভূত ওয়েসন চয়ের (জন্ম. ১৯৩৯) কথা। ২০০৯ সালে ওয়েসনের স্মৃতিকথা ‘নট ইয়েট: অ্যা মেময়র অব লিভিং অ্যান্ড অলমোস্ট ডাইং’ একটি নন্দিত গ্রন্থ হিসেবে সাহিত্যামোদীদের কাছে পরিচিত। এই গ্রন্থের দশ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর আরেকটি স্মৃতিকথা ‘পেপার শ্যাডোস: অ্যা চাইনাটাউন চাইল্ডহুড’ (১৯৯৯)। ভ্যাঙ্কুভারের বাসিন্দা ওয়েসনের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জেড পিওনি’ প্রকাশ পায় ১৯৯৫ সালে। উপন্যাসটির প্রধান চরিত্রগুলোর সবাই কিন্তু চিনা। উপন্যাসের সময়কাল হলো ১৯৩০ এর দশক পেরিয়ে ১৯৪০ এর দশকে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান দখল করে চিনকে। কানাডীয়রা, কানাডায় চিনা মানুষেরা সে বিষয়টিকে কীভাবে দেখেছেন, ওয়েসন সেটিকেই তাঁর উপন্যাসের উপাত্ত করেছেন।
২০০৬ সালে গিলার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ভিনসেন্ট ল্যামের (জন্ম. ১৯৭৪) পূর্বপুরুষও চিনা বংশোদ্ভূত। যদিও তাঁরা চিন থেকে প্রথমে ভিয়েতনামে অভিবাসী হন। পরে আসেন কানাডাতে। কানাডার অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরেই ভিনসেন্টের জন্ম। ২০১২ সালে ভিনসেন্টের উপন্যাস ‘দ্য হেডমাস্টার’স ওয়েজার’ গভর্নর জেনারেল পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও স্থান পেয়েছিল। যদিও উল্লেখ করার প্রয়োজন পেশায় ডাক্তার ভিনসেন্টের যে বইটি ২০০৬ সালে গিলার পুরস্কার পেয়েছিল সেটি ছিল একটি নন-ফিকশান। ডাক্তারী অভিজ্ঞতাতেই রচিত হয়েছিল সেটি। নাম ছিল ‘বøাডলেটিং অ্যান্ড মিরাকুলাস কিওরস’।

ভিয়েতনামী বংশোদ্ভ‚ত পুরস্কারপ্রাপ্ত আরেক কানাডীয় লেখকের নাম কিম টুই (জন্ম. ১৯৬৮)। কমিউনিস্ট শাসন থেকে ১৯৭৮ সালে যে দশ লক্ষাধিক মানুষ ভিয়েতনাম ছেড়ে নৌকো করে দেশ ত্যাগ করেন, দশ বছরের কিম তাঁদের একজন। তাঁদের পরিবার কুইবেকে আবাস গাড়েন। কিমের প্রধান ভাষা হয়ে ওঠে ফরাসি। ২০০৯ সালে ফরাসি ভাষায় কিম প্রথম উপন্যাস লেখেন ‘রু’ নামে। উপন্যাসের বিষয় হলো ভিয়েতনাম থেকে কুইবেক পর্যন্ত দশ বছরের এক শিশুর যাত্রা। উপন্যাসটি ২০১০ সালে ফরাসি ভাষার কথাসাহিত্যের জন্যে গভর্নর জেনারেল পুরস্কার লাভ করে। উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ গিলার পুরস্কারের জন্যে শর্টলিস্টেডও হয়েছিল। উপন্যাসটি এ পর্যন্ত পনোরোটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং কিম হয়েছেন বর্তমান কানাডার ফরাসি-ভাষী সাহিত্যের এক উজ্জ¦ল নক্ষত্র। কিমের পরের উপন্যাস ‘মান’ এবং ‘ভি’ এর বিষয়ও কিন্তু ভিয়েনামী উদ্বাস্তু মানুষ। ভিয়েতনামকে প্রেক্ষাপট করে টরন্টোর অন্য যে লেখক উপন্যাস লিখেছেন তিনি হলেন ক্যামিলা গিব (জন্ম. ১৯৬৮)। ২০১০ সালে প্রকাশিত তাঁর সে উপন্যাসটির নাম ‘দ্য বিউটি অব হিউম্যানিটি মুভমেন্ট’। এর আগে ২০০৫ সালে প্রকাশিত ক্যামিলার উপন্যাস ‘সুইটনেস ইন দ্য বেলি’ রচিত হয়েছিল ইথিওপিয়ার প্রেক্ষাপটে।
১৯৯০ সালে প্রথম উপন্যাস ‘লাইভস অব দ্য সেইন্টস’ দিয়ে কিন্তু ইতালীয় পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকার নিনো রিচির (জন্ম. ১৯৫৯) গভর্নর জেনারেল পুরস্কার লাভ। ২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘দ্য অরিজিন অব স্পেসিস’ উপন্যাস দিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য পুরস্কারটি ছিনিয়ে নিয়েছেন। তাঁর পুরো রচনাবলীতেই ইতালির প্রেক্ষাপট কিন্তু বারবার উঠে আসে।

কানাডীয় সাহিত্যধারায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত লেখকদের অবদানও বিশাল। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সারা কানাডার পোয়েট লরিয়েট হিসেবে যিনি কিছুদিন আগেই প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি হলেন জর্জ ইলিয়ট ক্লার্ক (জন্ম. ১৯৬০)। ২০০১ সালে জর্জ তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘এক্সিকিউশন পোয়েমস’-এর জন্য গভর্নর জেনারেল পুরস্কার লাভ করেন। জর্জের সাহিত্যের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে নোভা স্কোশিয়া প্রদেশের কালো মানুষদের অভিবাসী হওয়ার ইতিহাস। জর্জের উপন্যাস ‘জর্জ অ্যান্ড রু’ (২০০৫) দুই কালো কানাডীয় ভাইয়ের কথা, যাঁরা ১৯৪৯ সালে নিউ ব্রান্সউইকে এক ট্যাক্সিচালককে খুন করে।

টরন্টোবাসী নন্দিত লেখক এলিসন পিকের কথাও এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন। ২০১০ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস
‘ফার টু গো’ দিয়ে এই লেখক কিন্তু ২০১১ সালে ম্যান বুকার প্রাইজের শর্টলিস্টে উঠে এসেছিলেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর স্মৃতিকথা ‘বিটুইন গডস’। এবং যে কারণে এই লেখককে বর্তমান রচনায় আমি উল্লেখ করছি সেটি হলো তাঁর পূর্বপুরুষ চেকো¯েøাভাকিয়ার বাসিন্দা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের আক্রমণে তাঁর ঠাকুরদা চলে আসেন কানাডাতে। আর সেই সময়ের সেইসব কথাকে লিপিবদ্ধ করেছেন এলিসন তাঁর উপর্যুক্ত দুটি গ্রন্থে। ব্যাপকভাবে নন্দিতও হয়েছেন তিনি।

এই যে ভিন্ন দেশের মানুষ ও তার সংস্কৃতিকে কানাডীয় সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সেটা দিয়েই আসলে তিন শ নব্বই বছর আগে কানাডীয় কবিতার যাত্রা। ১৬২৮ সালে রবার্ট হেইম্যান (১৫৭৫Ñ১৬২৯) লন্ডন থেকে ‘কুয়োডলিবেটস’ নামের যে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করলেন সেটিই তো প্রথম কানাডীয় কাব্যপ্রয়াশ! অথবা ধরা যাক ১৭৬৯ সালে প্রকাশিত ফ্রান্সেস মূর ব্রæকের (১৭২৪Ñ১৭৮৯) ‘দ্য হিস্ট্রি অব এমিলি মন্টেগু’ সেটিই তো প্রথম কানাডীয় উপন্যাসের উদাহরণ যেটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল! বিংশ শতাব্দীর শক্তিমান কবি রবার্ট সার্ভিসও (১৮৭৪Ñ১৯৫৮) কিন্তু ভিন্নদেশে জন্ম নেওয়া এক লেখক। যেমনটি আমরা দেখলাম আধুনিক কানাডীয় কবিতার শক্তিমান কণ্ঠ আর্ভিং লেইটনের (১৯১২Ñ২০০৬) ক্ষেত্রেও Ñ তিনি এসেছিলেন রুমানিয়া থেকে। গত শতাব্দীর শুরুর বছরগুলোতে যে কথাসাহিত্যিকের কথা ক্যানলিটের প্রবক্তারা এখনও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সেই হ্যারল্ড ল্যাডো (১৯৪৫Ñ১৯৭৩) তো এসেছিলেন ক্যারিবিয়া থেকে এবং সবই লিখেছিলেন ক্যারিবীয় জীবন নিয়ে। কানাডায় জীবনীমূলক উপন্যাসের অগ্রগণ্য যে লেখক সেই ক্যারল শীল্ড (১৯৩৫Ñ২০০৩) নিজেও এসেছিলেন অন্য দেশ থেকে।

বর্তমান প্রবন্ধ শেষ করার আগে আবারও ‘কানাডীয় লেখকের সাথে আড্ডা’ অনুষ্ঠানের উল্লেখ করতে চাই। ২০১৮ সালরে ৩ ফেব্রæয়ারি উল্লিখিত বিএলআরসি আয়োজিত আড্ডার অতিথি লেখক ছিলেন কবি ও সম্পাদক জিম জনস্টোন। জিমের উদ্দেশে উপস্থিত এক বাঙালি লেখকের প্রশ্ন ছিল ‘কানাডায় আমাদের লেখার বিষয় কী হওয়া উচিত?’ জিম কালক্ষেপণ না করেই বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার কথা লিখবে। তোমার কথাই হবে কানাডীয় সাহিত্য।’ জিমের কথার প্রতিফলন সারা কানাডীয় সাহিত্যে। প্রত্যেকে তাঁদের নিজেদের কথা লিখেছেন – নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধের কথা। আর সেসব কিছুকে একত্রিত করে কানাডীয় ভূখন্ডে যে সাহিত্য নির্মিত হয়েছে সেটিই কানাডীয় সাহিত্য। আর তাই কানাডীয় সাহিত্যে পাওয়া সম্ভব পৃথিবীর সকল জনগোষ্ঠীর লেখকের চেতনার প্রতিফলন। হয়তো সে কারণেই ২০১৮ সালের মার্চে সিবিসি আয়োজিত ‘কানাডা রিডস’ এ বিজয় মুকুট ছিনিয়ে নিতে পেরেছে মার্ক সাকামাতোর লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘ফরগিভনেস’। লেখক সে বইতে তার পিতামহ ও মাতামহের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের এবং জাপানিদের কথাকে তুলে ধরলেও পুরস্কার পেতে কোনো কষ্ট হয়নি আলবার্টা নিবাসী জাপানি বংশোদ্ভুত এই লেখকের।

ইস্টইয়র্ক, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles