
৯০ দশকের শুরুর কথা। আরএমও পদবীতে একেবারে নতুন। ছোট সদর হাসপাতালের সব কিছুর দায়িত্ব আমার। কাজ বুঝে উঠছি এবং সাধ্যমত চেষ্টা করছি। সে সময় সব সরকারী হাসপাতালেই জনবল সংকট, ঔষধ পথ্যের সংকট সহ অনেক সমস্যাই ছিলো। একটি বড় সমস্যা ছিলো সবাইকে খুশী করা বা প্রয়োজনীয় চিকৎসা সেবা প্রদান করা।
ছোট্ট এই শহরের পাশ দিয়ে আন্ত: জেলা সড়ক চলে গেছে। প্রায়ই সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে প্রচুর জখমী রোগী আসে তখন হিমশিম খেতে হয় তাদের জীবন বাঁচাতে। সার্জন, মেডিকেল অফিসার সহ সব ষ্টাফই ঝাপিয়ে পড়ি এই জরুরী অবস্থা মোকাবেলায়। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কাজ করে এক সময় সবাই আশ্বস্থ হতাম যে বিপদ কেটেছে। এভাবেই মাসের পর মাস পার হতে লাগলো।
প্রায়ই ভাবি যে এই দূর্ঘটনার খবর যদি আগেই পেতাম তাহলে আরো সুষ্ঠুভাবে এই অবস্থা মোকাবেলা করা যেত। ভাবতে থাকি। মাঝে মাঝে দূর্ঘটনার খবর পেতাম টেলিফোনে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রোগী আসবার ৫/১০ মিনিট আগে। তখন ল্যান্ড টেলিফোনের যুগ। ঐ টুকু সময়ের মধ্যেই প্রস্ত্ততি নিতে পারতাম। কেউ রোগী রিসিভ করে বেডে নেয়া কেউ নাম ঠিকানা লেখা, এক সাথে ৫/৭ জন রোগী পরীক্ষা করা এবং গুরুতর বাছাই করা এবং ব্যবস্থা নেয়া।
কোন কোন মাস কোন দূঘটনা নেই। সবাই ঢিলাঢালা কিন্তু কেউ জানেনা কখন ঘটবে দূর্গটনা আসবে রোগী। আশ্চর্য মন ডেকে বললো-তৈরী হও। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে জরুরী বিভাগ ব্যস্ত হয়ে পড়বে। জরুরী বিভাগে গিয়ে একাই সব পরীক্ষা করে দেখি। অক্সিজেন সিলিন্ডার, গজ ব্যান্ডেজ, ট্রলি, ষ্টাফ সব রেডি। আমার আশংকা তাই এ সব করি।
মাঝ দুপুরেই শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি। গাড়ী ভরে রোগী আসছে সবই দূর্ঘটনার। একটু আগেইতো ভাবছিলাম-এটা কিভাবে সম্ভব? ব্যবস্থা একই রকম সতর্কতা অনেকটা সহায়তা করে সবাইকে এক সাথে কাজ করতে ।
আমি এখন বুঝতে পারি কোন মাসের প্রথম বা শেষ সপ্তাহে সড়ক দূর্ঘটনার রোগী আসবে। আমার মন ডেকে বলে-তৈরী হও। কি আশ্চর্য এটাও সম্ভব!
(আপনি যখন নিজের স্বার্থ ছেড়ে দিয়ে অন্যের জন্য কাজ করবেন তখন আপনার অন্তরে বার্তা আসতে থাকবে কার বিপদ এবং আপনার কি করণীয়। করেই দেখুন না প্রমাণ পাবেন।)
ইয়েলোনাইফ, কানাডা