17.2 C
Toronto
শনিবার, মে ১৭, ২০২৫

শুরুর দিকের কথা

শুরুর দিকের কথা - the Bengali Times
আমি তখন ৫০ বেডের সদর হাসপাতালের আরএমওকেউ না থাকলেও আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়

খুলনা হাসপাতালের শুরুর দিকের কথা।হাসপাতাল এলাকা জনবসতিহীন। শুরুর কয়েকমাস পর জরুরী বিভাগ চালু হয়েছে।আমরা চারজন মিলে পালা করে ডিউটি করি। আমরা সবাই নতুন ষ্টাফ এই নতুন হাসপাতালে।অর্থপেডিক, সার্জারী আর মেডিসিন ইউনিট চালু হয়েছে।আউট ডোর দিনের বেলা ব্যস্ত থাকে তারপর এই এলাকা একেবারে নিথর হয়ে পড়ে।সেদিন রাতের শিফটে জরুরী বিভাগে কাজ শুরু করেছি। ডাক্তার বলতে সারা হাসপাতালে আমিই একা।রাত ১০-১১ টার দিকে একটা রোগী এলো জরুরী বিভাগে।তার ডান পা আঘাত প্রাপ্ত।পায়ের পাতা নাড়াতে পারছেনা।ক্ষত। মনে হলো টেনডন বা রগ কাটা পড়েছে। এই টেনডন Achilles Tendon যা আমাদের হাঁটাচলায় অবদান রাখে।রগকাটার রাজনীতিতে এটাই কাটা পড়তো বেশী।সেটা সেল ফোনের যুগ ছিলো না কাজেই এ্যামবুলেন্সের ড্রাইভারের হাতে চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললাম হামিদ ভাইকে নিয়ে আসুন।২/৩টি সম্ভাব্য স্থানের নাম বলে দিলাম।হামিদ ভাই পরিশ্রমী ব্যক্তি, অর্থপেডিক ইউনিটে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন খুলনায়।১৫/২০ মিনিটের মধ্যে তাকে পেয়ে গেলাম।জানালাম যে ওটিতে রোগী প্রস্ত্তত আছে।দেড় ঘন্টা পর কাজ সেরে হামিদ ভাই জরুরী বিভাগে এলেন।আমাকে একটা বড় ধন্যবাদ দিলেন, বললেন-আযম আজ একটা রাইট টাইমে কল দিয়েছো।আমি রিপেয়ার করে দিয়েছি টেনডন। রোগী দ্রুত সেরে উঠবে আশা করি। নিজের ত্বরিত ভুমিকার জন্য ভালো লাগলো হামিদ ভাই চলে গেলেন।

প্রেক্ষাপট-২

- Advertisement -

আমি তখন ৫০ বেডের সদর হাসপাতালের আরএমও।কেউ না থাকলেও আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়। যখন কোন ডাক্তার জরুরী বিভাগের ডিউটিতে আসতে দেরী করে তখন সেখানে বসে থাকি অফিস সময় শেষ হওয়ার পরও। সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার তাই সকাল সকাল সবাই চলে গেছে।বেলা ২-৩০ হবে একটা ছোট ছেলেকে নিয়ে আসা হ’ল জরুরী বিভাগে। ছেলেটি স্কুল ছুটির শেষে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে বাসায় ফিরছিলো এমন সময় একটা গাড়ীর চাকা তার ডান পায়ের পাতার উপর দিয়ে চলে যায়। পায়ের পাতার হাড়  ভেঙ্গে চামড়া ফুটো করে বাইরে চলে এসেছে।ওর বাবা এবং অন্যান্য আত্বীয় স্বজনরা ওকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে।আমি ক্ষত স্থান ভালো করে দেখলাম।একটি নোট লিখলাম অর্থোপেডিক কনসালটেন্টকে জরুরীভাবে হাসপাতালে আসার জন্য।মাত্র কিছুক্ষণ হলো তিনি বাসায় গিয়েছেন।এ্যাম্বুলেন্স পাঠালাম। তিনি এলেন। মনে হ’লো একটু ক্ষেপে আছেন।রোগী দেখার সময় আমাকে বললেন-কল দেয়ার কি আছে? একটা ব্যান্ডেজ করে স্যালাইন দিয়ে রেখে দিলেইতো হতো। শনিবার এসে আমি দেখতাম। বিষয়টি যে আমি ভাবিনি তা নয় তবে আমার মন তাতে সায় দেয়নি।আমার এখানে অর্থোপেডিক সার্জন থাকতে আমি এ রোগী ফেলে রাখবো কেন? কোন সমস্যা হলে আমিই ফেসে যাবো যে কেন আমি কণসালটেন্টকে কল করিনি। কথাগুলি আমি তাকে বলাতে তিনি চুপ হলেন।রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলাম। কনসালটেন্ট সাহেব একটা তার এর সাহায্যে চমৎকার ভাবে বোন সেট করলেন এবং Wound close করলেন। তার কাজ দেখে আমি অভিভূত।আমার মনে প্রশান্তির হাওয়া বইলো, সকল উৎকন্ঠা কেটে গেল এই ভেবে যে নিরিহ,গরীব এই ছেলেটি আগের মতোই সুস্থ্য হয়ে উঠবে।

কাজ শেষে অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট চলে গেলেন।তিনি যেমন এসে ছিলেন তেমন ভাবেই চলে গেলেন। যাবার সময় একটিবারের জন্যও বলেননি যে আমি তাকে উপযুক্ত সময়ে কল দিয়েছি এমন কি একটি ধন্যবাদও নয়।

 

ইয়েলোনাইফ, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles