20.6 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মে ১৫, ২০২৫

সারেঙ’র যাত্রা আরো মসৃণ হোক

সারেঙ’র যাত্রা আরো মসৃণ হোক - the Bengali Times

নিয়মিত ছোটকাগজ সারেঙ এর একুশতম সংখ্যাটি এবার হেলাল হাফিজকে স্মরণ করে প্রকাশিত হয়েছে। যা এককথায় বলা চলে বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী দলিল। দেশের জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজকে অন্যরা ভুললেও এ কাগজ ভুলেনি। ছোট কাগজের উজ্জ্বলতম সংকলন সারেঙ। এদেশে অসংখ্য সাহিত্য ম্যাগাজিন, ছোট কাগজ, পত্রপত্রিকা নিয়মিত কিংবা অনিয়মিতভাবে বের হচ্ছে নানাবিষয় নিয়ে লেখা ছাপা হচ্ছে অথচ ভাবতে কষ্ট হয় বাংলা সাহিত্যের একজন সেরা কবিকে নিয়ে আলাদাভাবে দূরের কথা তাকে নিয়ে দু/একটা প্রবন্ধও চোখে পড়েনি। বিষয়টি যেমন আক্ষেপের তেমনি দৃষ্টিকটুও বলা চলে। আমরা সবাই অতীত ভুলে যাই বর্তমান নিয়ে পড়ে থাকি আর তাই ভবিষ্যত অন্ধকার আমাদের। বার বার সেটাই মনে করিয়ে দেয় তবুও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না। নিভৃতচারী সমকালীন এই সেরা কবিকে স্মরণ করে সারেঙ সম্পাদক আবদুর রহমান মল্লিক সময়ের চাহিদা পূরণ করেছেন। তাকে নিয়ে একটা ঝকঝকে তথ্যসমৃদ্ধ সংখ্যা উপহার দেয়ায় ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সারেঙ এর প্রতিটি সংখ্যা দেদীপ্যমান বিখ্যাত সাহিত্যিক-গবেষকদের মননশীলতায় সিক্ত। বিষয় ও ভাবের বৈচিত্র্যে নতুন ভাবনার আকর, যেন চিন্তার প্রসারের বাতিঘর। কবিতা, প্রেম, আলস্য, নিভৃতবাস এ সময়ের অপচয়- এসব নিয়েই কবি হেলাল হাফিজ। মাত্র একটি কাব্যগ্রন্থ যে জলে আগুন জ্বলে দিয়ে হয়েছেন জীবন্ত কিংবদন্তি। যার কবিতা ছাড়া আজও অপূর্ণ থাকে এদেশের মুক্তির আন্দোলন, আবার যার ইন্দ্রিয়ঘন রোমান্টিকতা ছাড়া পূর্ণ হয় না নারী-পুরুষের প্রেমের অভিজ্ঞান, যার দুঃখের সংস্পর্শ ছাড়া কবি হতে পারে না বর্তমানের কোন তরুণ, দুঃখকে অবলম্বন করে তুমুল সন্ন্যাসী যিনি তিনি হেলাল হাফিজ। হেলাল হাফিজ একজন নির্জন প্রেমের কবি। নিঃসঙ্গতার সাথেই তার সংসার। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেও একাকী জীবন- এমন সাহস, এমন বোধ আছে বলেই হয়ত তিনি হেলাল হাফিজ। দুঃখের আরেক নাম তিনি। হেলাল হাফিজের কবিতায় হেলেন না¤œী এক নারীর বহুল উপস্থিতি আছে, এই নারীকে কেন্দ্র করে তিনি বেশ কয়েকটি মর্মস্পর্শী কবিতা লিখেছেন। হেলেন ছিলেন তার প্রথম প্রেমিকা এবং হেলেনের ব্যাপারে তিনি অতিমাত্রায় সংবেদনশীলও ছিলেন, হেলেন প্রসঙ্গ উঠলে তিনি আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে একসময়ে কান্নাকাটিও করতেন।

- Advertisement -

হেলাল হাফিজের স্কুলজীবনে হেলেনের সাথে প্রেম হয়, তারা ছিলেন প্রতিবেশী। দীর্ঘ প্রেমের পর দুই পরিবারে ঘটনাটি জানাজানি হয়। হেলেনের বাবা ছিলেন দারোগা আর হেলাল হাফিজের বাবা স্কুলশিক্ষক। হেলাল হাফিজের বাবা দারোগার মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে চাননি, এ নিয়ে দুই পরিবারে বিরোধ ঘটে এবং হেলাল হাফিজ হেলেনকে বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা বললে হেলেনও নির্বিকার থাকেন। পরে হেলেনের বিয়ে হয় ঢাকার একটি সিনেমা হলের (সম্ভবত মুন সিনেমা হল) ধনাঢ্য মালিকের সাথে।
হেলেনের বিয়ে হয়ে যাবার পর হেলাল হাফিজ দশ-পনেরো দিন কারো সাথে কোনো ধরনের কথা বলেননি। তার ভাবি তার বিয়ের জন্য তাকে কোনো মেয়ের ছবি দেখালেই তিনি বলতেন ‘ভাবি, এই মেয়েটা দেখতে ঠিক আমার মায়ের মতো।’ এর পর তার ভাবি তাকে আর কোনো মেয়ের ছবি দেখাতে সাহস করেননি।

তীব্র দুঃখ বুকে চেপে নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান হেলাল হাফিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়াও করেন। ব্যতিক্রমী ও সহজবোধ্য কবিতা লেখার ফলে তার খ্যাতি ক্যাম্পাস থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। তার কবিতার প্রায় প্রতিটিই মনে হয় এসবতো আমাদেরই ঘটনা। ফলে আপমর জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তার আলোড়ন-সৃষ্টিকারী কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’।

হেলেনের স্বামী বইমেলা থেকে অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ বইটিও কিনে বাসায় নিয়ে যান। হেলেন যখন দেখতে পেলেন বইটির পুরোটা জুড়ে বিধৃত আছে হেলেন-হেলাল প্রেমউপাখ্যান, আছে হেলালের কষ্টের ইতিবৃত্ত আর হেলেনের জন্য হেলালের শব্দে-শব্দে নিঃশব্দ হাহাকার; তখন ক্রমশ তার মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে, তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। হেলেনের স্বামী দেশে-বিদেশে হেলেনের উচ্চচিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও হেলেন আর ভারসাম্য ফিরে পাননি। একপর্যায়ে স্বামীর কাছ থেকে হেলেন তালাকপ্রাপ্ত হন। এখন তিনি বদ্ধ-উন্মাদ।

হেলাল হাফিজ, এক স্বল্পভাষী কবি, যার শব্দে ঝরে পড়ে এক নিঃসঙ্গ কবির কষ্টের আর্তি। তার কবিতায় প্রেম আছে, কিন্তু তা সুখের নয়, তা বরং অভিমানের, ব্যথার আর অপূর্ণতার। এই দু:খ শুধু ব্যক্তিগত নয়, এই দু:খের বিস্তার রয়েছে সমাজের প্রতি, ইতিহাসের প্রতি, সময়ের প্রতি। দেশের প্রতি, দেশের কর্তাব্যক্তিদের উপর।

‘কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/ আমি আর লিখব না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা’। এমন সহজ ও স্পষ্ট উচ্চারণ ছিলো দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের প্রতিটা কবিতায়। সব নিয়েই এক বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় জীবন ছিলো হেলাল হাফিজের। বলা চলে তার পুরো জীবন কবিতার ছন্দে দুলেছে। তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর ও আপাদমস্তক কবি। বিবাগী পথিক হেলাল হাফিজ এখন অনন্তলোকে। ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর চলে গেছেন অনন্ত কবিতালোকে। কিংবা বলা চলে এই পৃথিবীর প্রেম আর সব যুদ্ধ সাঙ্গ করে কবি হেলাল হাফিজ স্থায়ী হলেন কবিতার পৃথিবীতে।

‘আমাকে দুঃখের শ্লোক কে শোনাবে? কে দেখাবে আমাকে দুঃখের চিহ্ন কী এমন, দুঃখ তো আমার সেই জন্ম থেকে জীবনের, একমাত্র মৌলিক কাহিনি। আমার শৈশব বলে কিছু নেই, আমার কৈশোর বলে কিছু নেই, আছে শুধু বিষাদের গহিন বিস্তার।’ এমন বিরহ-সংলাপে সাজানো দুর্দান্ত একটা কাব্যময় জীবন কাটানো কবি হেলাল হাফিজ মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে প্রথম পরিচিতি পাইয়ে দেয়। এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে হেলাল হাফিজের এই লাইনগুলো, ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে তার এই কবিতাটি নিত্যসংগী। সমালোচকদের বিচারে অবস্থান যেখানেই হোক না কেন, জনপ্রিয়তার বিচারে বাংলাদেশের শীর্ষ কবিদের সারিতেই থাকবে তার নাম।

দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা একাত্তর’। তৃতীয় ও সর্বশেষ বই ‘ বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। খুব কম লিখেছেন হেলাল হাফিজ। তবে তার কবিতা যেমন হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান, তেমনই আবার হয়ে উঠেছিল প্রেমের চিঠির অনুষঙ্গ। কবিতা যে বই ছাড়াও কার্ড হয়ে বের হতে পারে, তাও দেখা যায় হেলাল হাফিজের ক্ষেত্রে। কবিতার জন্য জীবন কাটিয়ে দেওয়া হেলাল হাফিজ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা। ১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতা শুরু করেন হেলাল হাফিজ। পূর্বদেশ ও দৈনিক দেশ পত্রিকায় তিনি সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল দৈনিক যুগান্তর। বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক তিনিও কবিতা লিখতেন, আর মা কোকিলা বেগম ছিলেন গৃহিণী। মাত্র তিন বছর বয়সে মাকে হারান কবি। বাবাই তখন জীবনের অবলম্বন। স্ত্রী বিয়োগের পর আবার বিয়ে করেন খোরশেদ আলী তালুকদার। দুই ঘর মিলিয়ে চার ভাই তিন বোন হেলাল হাফিজরা। “আমি যেদিন মাতৃহীন হই, আমি বুঝতেই পারিনি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বেদনাটুকু অনুভব করতে পারিনি। কোনো স্মৃতি নেই। যে যাতনা আমাকে পোহাতে হল, তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো ক্ষমতা আমার নেই।

“যত দিন গিয়েছে, একটু একটু করে বড় হয়েছি। বয়স বেড়েছে। মাতৃহীনতার বেদনা আমাকে আমূল গ্রাস করেছে। সেই সব শৈশব-কৈশোর ও প্রথম যৌবনে আমি ছিলাম খেলাধুলার মানুষ। যতই বয়স বাড়তে লাগলো, মাতৃহীনতার এই বেদনা আমাকে গ্রাস করে ফেলল।” খেলাধুলা দিয়ে সেই বেদনাকে প্রশমিত করতে না পেরে লেখালেখিতে যুক্ত হয়েছেন জানিয়ে হেলাল হাফিজ বলেন, “সেই লেখালেখির জীবন নিতান্ত কম নয়। ৭৫ বছরের (তখনকার বয়স) একটি জীবন পেয়েছি। খুব কম মানুষ এতটা পায়। কিন্তু এই দীর্ঘ জীবন আমি পুরোটা কাজে লাগাতে পারিনি। কিছু জীবন অপচয় করে ফেলেছি। খুব কম লিখেছি জীবনে, কিন্তু জীবন খরচ করে লিখেছি।”
১৯৭৩ সালে বাবাও চিরবিদায় নিলে একা হয়ে যান হেলাল হাফিজ। এই জগৎসংসার তখন তার তুচ্ছ মনে হয়। বাবার মৃত্যুর মাসখানেক পর প্রেমিকা হেলেনের সঙ্গেও কবির বিচ্ছেদ হয়। পরপর দুটি ঘটনা ভেতরে-ভেতরে এলোমেলো করে দেয় হেলাল হাফিজকে। প্রস্থান কবিতায়

তিনি লেখেন,
আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?
এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!

আবার পৃথক পাহাড় কবিতায় হেলাল হাফিজ লিখেছেন,
কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়,
আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।
ওইটুকু নিয়ে তুমি বড় হও,
বড় হতে হতে কিছু নত হও
নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়,
মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ।
আমি আর কতোটুকু পারি?
এর বেশি পারেনি মানুষ।

কবিতার সেই বিশ্বাস যে নিজের জীবনেও ব্রত করে নিয়েছিলেন, সে কথা ২০২২ সালের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন কবি। হেলাল হাফিজ সেদিন বলেন, আপনাদের ভালোবাসা-আদর-সম্মান আমাকে ঘাস থেকে, তৃণ থেকে উদ্ভিদে রূপান্তরিত করেছে। আমি নত হই, আমি নত চিত্তে কেবলই নত হতে শিখেছি। নত হতে চাই, নত হতে চাই।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কবি বলেছিলেন, “আমি যাপিত জীবনের সিংহকাল কবিতার জন্য ব্যয় করেছি। কবিতাপ্রেমী মানুষের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি- সেটা অভূতপূর্ব, অতুলনীয়। “আমি চেয়েছিলাম আমার কবিতা দিয়ে অর্থ নয়, বিত্ত নয়, আমি মানুষ জমাতে চাই। সেই মানুষ জমাতে গিয়ে জীবনের যে দারুণ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি, তাও আমার জীবনের অপঠিত ইতিহাস হয়ে আছে। কবিতা আমাকে অনেক দিয়েছে। এই ঋণ জীবদ্দশায় পরিশোধ করার ক্ষমতা আমার নেই।”

এবার সারেঙ এর বর্তমান সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করা যাক। শুরুতেই রয়েছে হেলাল হাফিজকে নিয়ে আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ। সাদা-কালো প্রচ্ছদটি অন্যধরণের কথা বলে। কবির জীবনের সঙ্গে যেন মানানসই। যা পুরো সংখ্যাটিকে অন্যরকম করে তুলেছে। তারপর রয়েছে নাতিদীর্ঘ একটা তথ্যসমৃদ্ধ সম্পাদকীয়। এ সংখ্যায় রয়েছে হেলাল হাফিজ কে নিয়ে ১৭টি সুখপাঠ্য তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ। গদ্য বিভাগের শুরুতেই হেলাল হাফিজের নিজের লেখা একটি প্রবন্ধ সারেঙ কে সমৃদ্ধ করেছে। আমার স্বপ্নের স এর নিচে ব ফলা ছিল না। আত্মজৈবনিক প্রবন্ধটি পড়ে মনটা নাড়া দিতে বাধ্য। আজন্ম প্রেম ভালোবাসার কাঙাল ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, সৈয়দ তোশারফ আলী, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, তপন বাগচী, সৌমেন্দ্র গোস্বামী, জমির উদ্দিন মিলন, সিরাজুল ইসলাম আবেদ, গাজী গিয়াস উদ্দিন, শাহীন চৌধুরী, ইসমত শিল্পী, এমরান কবির, নূরননবী বাবুল, ওয়াহিদ জামান ও সফিকুল হাসান সোহেলসহ দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, গবেষকদের সমাহারে সারেঙ নবযৌবনে উদ্বেলিত। তাদের লেখনিতে দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ যেন জীবন্ত হয়ে আছেন। অসাধারণ হয়েও সাধারণে বসবাস করা মানুষটি সত্যিই সবার মাঝে বেঁচে আছেন। থাকবেন তিনি। থাকবেন সাহিত্যের পাতায়। জীবতকালে সবার মাঝে থেকেও তিনি হঠাৎ করে লুকিয়ে যেতেন, বছরের পর বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে পারতেন। তার মৃত্যু নেই দেহান্তর হয়েছেন কেবল।

এবারের সংখ্যায় সেরা আকর্ষণ বলা চলে হেলাল হাফিজের সেরা সৃষ্টি তার কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ¦লে’ বইয়ের সবগুলো কবিতা। যা অনেক কবিতাপ্রেমীর চাহিদা মিটিয়েছে। এরপর রয়েছে বিভিন্ন সময়ে তার দেয়া ৫টি সাক্ষাৎকার। এবারে কবিতা লিখেছেন আরিফ চৌধুরী, ফরিদুজ্জামান, শওকত এয়াকুব, নাসরীন গীতি, সৌহার্দ সিরাজ, নেহাল হাফিজ, ইয়াসিন ঠাকুর ও হামিম হাফিজুল্লাহ শেফা। সবশেষ রয়েছে হেলাল হাফিজকে নিয়ে রুশ্নি আরার গবেষণা প্রবন্ধ ‘কবি হেলাল হাফিজ এর কবিতায় সুরের ব্যবহার ও শিল্পরূপ বিচার’ যা চিন্তাকর্ষক। যা কবিকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।

তার ব্যক্তিগত জীবন বেশ সংগ্রামী। দীর্ঘদিন তিনি আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে গেছেন। তা সত্ত্বেও কবিতা থেকে দূরে সরে যাননি। তিনি চেষ্টা করে গেছেন তার কবিতা দিয়ে মানুষকে সাহস জোগানোর। চেষ্টা করেছেন তার কবিতা দিয়ে এই সমাজ, এই দেশকে পরিবর্তন করতে। বাংলা সাহিত্যে হেলাল হাফিজ এমন একজন কবি, যিনি খুব কম লেখার মধ্য দিয়েই চিরস্থায়ী স্থান অর্জন করেছেন। তার সাহিত্য স্বল্পসংখ্যক হলেও, তা যুগে যুগে পাঠকদের মনে দাগ কাটবে। প্রেম ও বিরহের এই স্বল্পপ্রজ আধুনিক কবি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তার কবিতায়,পঙ্ক্তিতে এবং নানা বাণীতে। কবির কলম থেমে গেলেও হেলাল হাফিজ বাংলা কবিতায় প্রাসঙ্গিক থাকবেন আরো অনেক বছর সে কথা সহজেই বলা চলে।

সারেঙ সাহিত্যজগতে এক ব্যতিক্রমী নাম। শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিয়মিত প্রকাশ এর চলার পথ রুদ্ধ করতে পারেনি। সারেঙ সত্যিকার অর্থেই সাহিত্যে সারেঙ হয়েছে। এ কাগজ ভবিষ্যতেও এরকম নতুন নতুন বিষয়ভাবনা নিয়ে প্রকাশিত হবে এ আশা আমরা করতেই পারি। সবার উপরে বলা চলে যারাই দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষনা করবেন তারা অবশ্যই এবারের ১৭৬ পৃষ্ঠার সারেঙ এর তথ্যকে রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগাতে পারবেন। এটা সারেঙ এর বিরাট অর্জন বলে আমি মনে করি। সবশেষে আশা এটাই, সারেঙ’র যাত্রা আরো মসৃণ হোক।।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

 

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles