
গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার পর তাকে উদ্দেশ্য করে নিষিদ্ধ সংগঠন গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়ল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মবমারানীর থ্রেট দিছিলা মনে আছে। এখন কি হইলো। থ্রেট লাইক করি না মাইন্ড ইট। this is gazipur bro., only sheikh hasina।
আওয়ামী লীগের নেত্রী রুহুন নেছা তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘গাজীপুরে আসবেন অথচ নাস্তা খেয়ে যাবেন্না সে কি হয়। গাজীপুরের ইজ্জত থাকবে? আপনারাই বলুন। আবার গেলে জমি লিখে দিবে। আর নাটক করার সুযোগ পাবে না পিও।’
গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়রের ছবি সম্বলিত এমডি জাহাঙ্গীর আলম নামক ফেসবুক আইডিধারী লেখেন, ‘করিডোর ইস্যু চাপা দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ ছেলেটি নিজেই গণধোলাই খাওয়ার নাটক সাজিয়েছে। গুজবে কান দিবেন না।’
হাসনাতের ওপর হামলার খবর প্রথমে জানা যায় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্টে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘হাসনাতের গাড়িতে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী গাজীপুর এলাকায় হামলা করেছে। গাড়ির কাচ ভেঙে গেছে, হাত রক্তাক্ত হয়েছে। আশপাশে যারা আছেন হাসনাতকে প্রটেক্ট করুন।’
হামলার ঘটনার পর হাসনাত তার ব্যবহৃত গাড়িটি নিয়ে বোর্ডবাজার এলাকার আইইউটির মূল ফটকের সামনে চলে আসনে। পরে সেখানে গাজীপুর জেলা ও মহানগরীর ছাত্র সমন্বয়ক ও এনসিপির নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন। পরে বোর্ডবাজারে ছাত্র সমন্বয়ক ও এনসিপির নেতা কর্মীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি আইইউ টির সামনে থেকে শুরু হয়ে সাইবোর্ড এলাকায় ঘুরে আবার বোর্ডবাজারে এসে শেষ হয়।
এদিকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় এনসিপির নেতারা একটি মশাল মিছিল বের করে। মিছিলটি জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তা সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ওই বিক্ষোভ মিছিলে এনসিপির নেতা, ছাত্র সমন্বয়ক এবং ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
জাতীয় নাগরীক পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মুহিম বলেন, গাজীপুরে হাসনাত আবদুল্লাহ তার ব্যক্তিগত একটি কাজে এসেছিলন। কয়েকজন সংগঠন ছাড়া অন্য কাউকে জানানো হয়নি। গাজীপুর থেকে যখন তিনি ঢাকা দিকে রওনা দিয়েছেন চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকজন সন্ত্রাসী মোটরসাইকেল করে এসে গাড়ির পেছন থেকে হামলা করে। এতে ওই গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। এতে হাসনাত আবদুল্লাহর হাতসহ বেশ কয়েক জায়গায় কেটে গেছে। হামলাকারীদের সবার মুখোশ পড়া ছিল। যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর জেলার সদস্য সচিব মহসিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বার বার বলছে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেই সবাই পলাতক। তাহলে কেন বার এই হামলার ঘটনা ঘটছে। এর দায়ভার আইনশৃংখলা বাহিনীকে নিতে হবে।
এ বিষয়ে এনসিপির গাজীপুরের যুগ্ম আহ্বায়ক আকাশ ঘোষ বলেন, হাসনাত আবদুল্লাহ কোথায় গিয়েছেন কিংবা কখন গাজীপুরে এসেছেন, এ রকম কোনও তথ্য আমার কাছে ছিল না। হামলার পর আমাদের কাছে একটা কল আসছে, তিনি হামলার শিকার হয়েছেন, তখন আমরা শুনেছি। এর আগে কিছুই জানতাম না। জানার পর আমাদের ছাত্রদের একটি টিম ঘটনাস্থলে যাই।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার (ওসি) মো. শাহিন খান জানান, সন্ধ্যায় চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে এসে সন্ত্রাসীরা হাসনাত আবদুল্লাহ ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় আমরা কাজ করছি।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, গাজীপুরের সালনার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি অনুষ্ঠান শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ ঢাকায় ফিরছিলেন। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তার গাড়ি বহর জ্যামে আটকে থাকাবস্থায় ৪/৫টি মোটরসাইকেলে লোকজন এসে তার গাড়িতে হামলা করে। হামলায় তিনি হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেছে। হাসনাতের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে তাকে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে এর মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র : সময়ের আলো