
অনেক দিন পর ব্যারি শহরে গেলাম। শহরটার সাথে মনে হয় আমার নাড়ির সম্পর্ক।কত শত স্মৃতি মনে করতে করতে শহর চক্কর দিয়ে, লেইক সিমকোর পাশে বসে থাকলাম কিছু সময়। বিশাল লেইক দেখা’র প্রথম স্মৃতি, মায়ের সাথে কাটানো সময়। পিছনে হাঁটালো মনের আঙ্গিনায়।
অনেক বদলে গেছে শহর। প্রচুর নতুন দালান, ব্যবসা, নতুন ঘর বাড়ি হয়েছে। কিছু এলাকা আগের মতনই নিরিবিলি।
দিনটা ছিল জাতীয় নির্বাচনের। অনেক গুলো কাউন্টির ভিতর দিয়ে পার হলাম ইচ্ছা করে।
কেন্দ্র গুলোতে মানুষের বেশ লম্বা লাইন। মানুষের সচেতনতা দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করার জন্য, এবার বেশ সাড়া জাগানো। যারা আলসেমি করে ভোট দেয় না। তারাও এবার হাজির হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে নিজের মতামত জানাতে।
আমার ভোট দিয়ে ফেলেছি এক সপ্তাহ আগে। তাই অপূর্ব সুন্দর দিনটি রোদের আলো গায়ে মেখে নানা জায়গায় ঘুরে দেখে কাটিয়ে দিলাম।
আর কদিন পর মানুষের তুমুল ভিড়ে জায়গা আর পানি কাড়াকাড়ি করতে হবে। পাওয়া যাবেনা গাড়ি পার্কিং এর জায়গা।
রেস্টুরেন্টে, কটেজগুলো শুনশান পরে আছে। আমি দু চারজন মানুষের সাথে নির্জন ওসাগা বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।
সমুদ্রের মতন বিশাল হ্রদের পাড় থেকে চলে গেলাম পাহাড়ের কাছে।
কলিংউডের পাহাড়, শীতকালে যেমন ব্যাস্তছিল পর্যটকদের পদচারণায়। এখন ততটা ব্যাস্ততা নেই।
মার্কেট,ভিলেজ, বিশাল রিসোর্টগুলো এখন যেন খানিক বিশ্রাম নিচ্ছে আবার সামারে ব্যাস্ততার আগে।
একপাশে পাহাড় একপাশে হ্রদের জলরাশি মাঝখানে রাস্তা দিয়ে চলেছি। সূর্য একদম আমার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে যেন রাস্তায় শুয়ে।
পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে পরতেই ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে গেল মনে হলো।
পাহাড়ের মৌনতা ঘুরে ফিরে খানিক দূরে মেফোর্ড এলাকায় পৌছে আবার জর্জিয়ান হ্রদের জলে পা৷ ভিজিয়ে বসলাম। এখানে কেউ নেই আমি আর ব্লুজেছ পাখি ছাড়া। পাখিরা মনের সুখে শিষ দিচ্ছে।
সূর্য সোনারঙ গুলে দিয়েছে জলে ডুবে যাওয়ার আয়োজনে। হাওয়ার মনোরম পরস আর জলের মূর্ছনা শুনতে খুব ভালো লাগছিল। বালুময় বিচ না, এখানে যেন শানবাঁধানো ঘাট। সূর্যকে পৃথিবীর অন্য দিকে চলে যেতে দেখলাম বিশাল একটা পাথরের উপর বসে।
সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও অনেকটা সময় ধরে আলো থাকে। সে আলোর সময়টুকুতে আবারো পৌঁছে গেলাম যেখানে শহর ঘিরে জল খেলা করছে, থর্নবেরি একদিকে মেরিন ডক ইয়ার্ড। একপাশে কামান, সাজানো। কোন এককালে যার ব্যবহার হয়েছিল।
আনেকেই শাম্ত সন্ধ্যা উপভোগ করছে। তাদের সাথে আমিও সামিল হলাম দূরে দাঁড়িয়ে আছে লাইট হাউস। নাবিককে পথের দিশা দেখানোর জন্য। এক সময় লাইট হাউজ দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। বাংলাদেশে একটাই লাইট হাউস ছিল। এখন যে কত লাইট হাউজ দেখলাম কত জায়গায় তার হিসাব নাই।
মোহনীয় এক সন্ধ্যার আলো ছেয়ে আছে পৃথিবী জুড়ে। সে আলোয় অবশেষে দক্ষিণের পথ ধরলাম। রেডিওতে চলছিল তখন নির্বাচনের হিসাব। পাঁচটি টাইম জোনের দেশে একদিকে যখন ভোট চলছে তখন অন্যদিকে গণনা শেষ হয়ে জয়ি বিজয়ীর ঘোষণার শুরু হয়ে গেছে। কয়েক ঘণ্টা ঘুরে ফিরে অনেক কিছুই দেখা হল আবারো। বারবার নতুন সৌন্দর্যে প্রকৃতি ফিরে ফিরে আসে। যাই তার কাছে। এক ঘন্টায় বাড়ি পৌঁছে গেলাম, ছোটখাটো ভ্রমণ সেরে।
টরন্টো, কানাডা