
খালু মানুষটা বড়োই বিস্ময়কর আর ইন্টারেস্টিং।
এজন্যই হুমায়ূন আহমেদ খালুদের নিয়ে লিখতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন, রসিকতা করতেন। আর মামা চাচাদের দেখাতেন ভয়ংকর নিষ্ঠুর। খালুরা কারও তেরোতেও না, এগারোতেও না। সাদাসিধা। জামাইদের মধ্যে খালুরা হলেন সবচাইতে লক্ষী। যা দিবেন তাই খাবে, অবজেকশন নেই। শুধু ভাতটা হতে হয় পারফেক্ট; মাড় গালা।
যার খালু আছে, সে হলো দুনিয়ার সবচাইতে ভাগ্যবান। মানুষকে চিনতে হলে সবার আগে বুঝতে হবে খালুকে। খালু নিয়ে গবেষণা আপনাকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে যত তথ্য দেবে, আর কেউ তা দিতে পারবে না। একেকটা খালু হলেন স্বতন্ত্র বিশ্বকোষ। জ্ঞান-গরিমায় তারা মামা-চাচা-ফুপাদের চাইতেও অনেক এগিয়ে।
খালুদের কিছু বিরল বৈশিষ্ট্য:
<> সব খালুরাই আপনার মায়ের বোনকে বিয়ে করে
<> খালুদের জীবনকাল হয় দীর্ঘ, রোগবালাই হয় কম
<> খালুরা খানদানী বংশের। ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তাঁদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন রাজবংশের; এদেশে এসেছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খালাদের খোঁজে
<> খালুরা হয় বিপদজনকহারে কিপ্টা আর ভীতুর ডিম। ভুত-পেত্নীতে অগাধ বিশ্বাস
<> কবিরাজি আর হোমিওপ্যাথিতে মারাত্মক আসক্ত
<> খালুরা অনেক সংগ্রাম করে কষ্টে মানুষ হয়
<> খালুরা বিয়ের আগ থেকেই খালাদের প্রতি দুর্বল থাকে, যা বিয়ের পরে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে
<> খালুরা এক মুহূর্তও খালাদের ছেড়ে থাকতে পারেন না
<> খালুরা খালাদের ভালবাসে পাগলের মতো।
নামের উৎপত্তি:
খালু নামের প্রকৃত উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক বিতর্ক আছে। এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চললেও কোনো কুলকিনারা আজও পাওয়া যায়নি। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, খালুর ‘খা’ অংশের উৎপত্তি খান বংশ থেকে। যদিও “লু” সম্পর্কে সঠিক ধারনা এখনও কোনো বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারেনি। অনেকে খালুর সন্ধি বিচ্ছেদ (খা+আলু) থেকে নামের উৎপত্তি নির্ণয় করতে গিয়ে স্হায়ী ঠিকানা বানিয়ে ফেলেছেন পাবনার এক বিশেষ হাসপাতালে।
আমার ধারনা, কোনোভাবে খালার সাথে খালুর নামটা পাল্টাপাল্টি হয়ে গেছে। কারন চাচা, মামা, ফুপা; সব পুরুষ উপাধির শেষে আকার আছে। শুধুমাত্র খালুর ক্ষেত্রে উ’কার। আসলে খালা হওয়া উচিৎ ছিল খালু, আর খালু হওয়া উচিৎ ছিল খালা। আমি ঠিক করেছি এখন থেকে খালাকে ডাকবো খালু, আর খালুকে ডাকবো খালা। ভেবে দেখেন, মামাকে মামি ডাকলে কেমন লাগবে? বাংলা একাডেমির ডিকশনারী সংশোধন করা উচিৎ।
খালুদের মতো ভালো মানুষ দ্বিতীয়টা নেই। কখনো শুনেছেন এক খালু আরেক খালুর বাড়ি ভেঙেছে, কলাগাছ কচুকাটা করেছে, মাথা ফাটিয়েছে? অন্যদিকে অমুকের চাচা, তমুকের মামা তার ভাস্তে-ভাগ্নার জমি দখল করেছে, না জানিয়ে জমি বিক্রি করে দিয়েছে। কখনো দেখবেন না অমুকের খালু তার ভাগ্নের জমি বিক্রি করে দিয়েছে। মুড়িওয়ালা, মাছওয়ালা, ফুঁচকাওয়ালা, ডাবওয়ালা, বাসের কন্ডাক্টরদের মানুষ মামা-চাচা ডাকলেও খালু বলে ডাকে না। কারণ খালু সস্তা না!
বাংলাদেশের সব জেলার খালুদেরই বিশেষ নাম-ডাক, সুনাম আছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের খালুদের।
মানুষের সাথে মামা-চাচা না পাতিয়ে বেশি করে খালু পাতাবেন। মেয়ে বিয়ে দেবার সময় খালুর মতামতের উপর ভরসা রাখবেন, ঠকবেন না। খালুরা যাদের ধরে, ময়নাতদন্ত করেই ছাড়ে! ব্যবসাপাতিও করবেন খালুর সাথে। খালা থাকতে কীসের ভয়? পরিবারের বিপদ-আপদেও দেখবেন খালার আঁচল ধরে খালু ঠিকই হাজির।
তবে মনে রাখবেন-“সব খালুই ভালো মানুষ, কিন্তু সব ভালো মানুষ খালু নয়!”
দুনিয়ার সব খালুদের মহান সৃষ্টিকর্তা সুস্থ্য রাখুন, হায়াৎ বহুগুণ বাড়িয়ে দিন।
অটোয়া, কানাডা