10.5 C
Toronto
শনিবার, মে ৩, ২০২৫

ভূতের সাথে চলাফেরা

ভূতের সাথে চলাফেরা - the Bengali Times
কে যে বাস করে আমার অবেচেতন মনে বুঝি না তাকে চিনতে পারি না

অবেচেতন মন নামে একটি মন বসে থাকে সব মানুষের ভেতর। হঠাৎ করেই সে মনটি রংধনুর মতো নানা রঙ কিংবা অমাবস্যা রাতের জোনাকির আলোর মতো জ্বলে ওঠে।

কে যে বাস করে আমার অবেচেতন মনে বুঝি না। তাকে চিনতে পারি না। বারবার চেনার চেষ্টা করি। অতি পরিচিত একজন মনে হয় কিন্তু কে সে পরিচিত মানুষটা বুঝে উঠতে পারি না। হঠাৎ করে বিদ্যুতের মতো ঝলসে ওঠে, আমি কিছু ভেবে ওঠার আগেই মিলিয়ে যায়। কে ছিল, কে হতে পারে, ভাবতে ভাবতে সারাদিন কেটে যায়। বারবার তাকে খুঁজে বেড়াই, কিন্তু সে ধরা দেয় না। তার খেয়াল খুশি মতো সে আমাকে ক্ষণিকের জন্য বেদনার দোলনাতে দোল দিয়ে চলে যায়। এ যেন এক ভৌতিক খেলা চলছে আমার সাথে বহু বছর থেকে।

- Advertisement -

আমরা অনেক কিছুকেই ভৌতিক কাণ্ড মনে করি। তার মানে ভ‚তের কাণ্ড। ভ‚ত কি বাস করে আমাদের আশেপাশে? কিংবা আদৌ কি ভ‚তপ্রেতের কোনো অস্তিত্ব আছে এই পৃথিবীতে? এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, আড্ডা গল্পের শেষ নেই। গভীর রাতে বসে ভয় পেতে পেতে ভ‚তের গল্প শোনার আনন্দই আলাদা।

রাতের বেলা দরজা খোলার খুট খাট শব্দ। কে দরজা খুললো? কে রান্না ঘরে পানির কল খুলে প্লেট বাটি ধোয়াধুয়ি করছে? দুরু দুরু বুকে যতটা সম্ভব নিঃশব্দে রান্না ঘরে উঁকি মেরে দেখলাম। কই কেউ তো নেই। তাহলে কি এটা ভ‚ত ছিল? কী আশ্চর্য আলুগুলো কেটে কেবলি তো এই বাটিটাতে রাখলাম, এখন কী করে বাটিটা খালি পড়ে আছে। আমি আকুল হয়ে খুঁজছি এদিক-সেদিক-কোথায় গেলো আমার কাটা আলুগুলো। আমার কপাল ঘামতে লাগলো, কী হলো এটা? আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? ভয় পেয়ে কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলাম। আবার উঠে গেলাম ব্যাপারটা দেখার জন্য। গিয়ে দেখলাম যে বাটিতে আলুগুলো যেখানে কেটে রেখেছিলাম, সেগুলো সেখানেই আছে। তখন আমার আবার পাগল হবার উপক্রম। ভ‚ত সখা-সখীরা মাঝে মাঝে রসিকতা করে আমাকে এভাবে চমকে দেয়। আজকাল আমি ভয় পাই না, ধরে নিয়েছি ওরা আমার সাথে রসিকতা করতে ভালোবাসে। সাথে সাথে এটাও বুঝে গেছি, ওরা আমার কোনো ক্ষতি করবে না।

ছোটবেলাতে যখন একবার পানিতে ডুবে যাচ্ছিলাম তখন কে আমাকে চুলের মুঠি ধরে পাড়ে এনে ফেললো? কে ছিল সে? কেউ তো বলেনি তারা আমাকে টেনে তুলেছে? তবে এটা কার কাজ ছিল? ঈশ্বরের নাকি অন্য কারো?

নির্জন ভরদুপুর। কোথাও কোনো শব্দ নেই। সবাই দিবা-নিদ্রাতে মগ্ন। আমি সে সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। চুপচাপ পেয়ারা গাছের ডালে চড়ে বসলাম। বসার সাথে সাথে কে যেন প্রচণ্ড একটা ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। সে ধাক্কার স্পর্শটা আমি আজও অনুভব করি। পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে দুই মাস গলাতে হাত ঝুলিয়ে চললাম। কিন্তু কে আমাকে ধাক্কা দিয়েছিল সে প্রশ্নের জবাব আজও খুঁজে পাইনি।

সন্ধ্যা নেমে গেছে, পাখিরাও নীড়ে ফিরে গেছে। কিন্তু আমাকে যেতেই হবে পাশের বাড়িতে, বন্ধুর কাছ থেকে একটা নোট আনতেই হবে। মার নিষেধভরা সন্ধ্যাতে ছাদের উপর কিংবা গাছের নিচ দিয়ে হাঁটা যাবে না। মায়ের অবাধ্য হলাম। পেছনের নিরব রাস্তা, ঘন বড়বড় গাছ, আমি হেঁটে যাচ্ছি সেখান দিয়ে। হঠাৎ করে গালে একটা প্রচণ্ড চড় খেলাম আর সে এক চড়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। কে যে আমাকে চড় দিয়েছিল, সেটা আজও জানতে পারিনি। হয়তো মায়ের অবাধ্যতার ফল ছিল সেটা।

তখন আমরা কুয়েতে থাকি। আমার মেয়ের বয়েস তিন বছর। অফিসের বাড়িতে থাকি। বাড়ির বিল্ডিংয়ের নিচে বাচ্চাদের বিশাল খেলার জায়গা। রোজ বিকেলে আমার মেয়ের নেনি (যে মহিলাটি আমার মেয়েকে দেখাশুনা করতো) মেয়েকে নিয়ে নিচে নামতো খেলানোর জন্য। বিল্ডিংয়ের সব বাচ্চারা সেখানে বিকালে খেলতে আসতো। সব বাচ্চাদের সাথেই প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ থাকতো। আমি কিছুক্ষণ পরপরই নিচে নেমে দেখতাম সবকিছু ঠিক আছে কি-না। একদিন নিচে নেমে দেখলাম একজন সুদর্শন যুবক বাচ্চাদের সাথে বল ছোড়াছুড়ি খেলছে। দৃশ্যটা দেখে বেশ মজা পেলাম। বুঝে নিলাম কোনো বাড়িতে হয়তো বেড়াতে এসেছে যুবকটি। সেদিন আমি ক্যামেরা নিয়ে নেমেছিলাম আমার মেয়ের কিছু ছবি তুলবো বলে। আমার মেয়ের সাথে সাথে সব বাচ্চাদের এবং সে যুবকের বাচ্চাদের সাথে খেলার কিছু দৃশ্য তুললাম। খুব আগ্রহ নিয়ে পরদিনই ছবি প্রিন্ট করালাম। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম সবার ছবি সুন্দর হয়েছে কিন্তু সে যুবকের ছবিটা একটা কালো শেড ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। মনটা অনেক খারাপ হলো, কেন এমন হলো ভেবে। পরদিন নিচে নেমে যুবকটিকে আর দেখতে পেলাম না। দুদিন পর আবার এলো সে বাচ্চাদের সাথে খেলার জন্য। আমি আমার সন্দেহ দূর করার জন্য আরো কিছু ছবি তুললাম। যুবকটি একটি ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করছিল সে ছবিটাও তুললাম। দারুন  উত্তেজনা নিয়ে আবার ছবি প্রিন্ট করতে দিলাম। আবারো একি ঘটনা। সব ছবি ঠিকঠাক আছে কিন্তু যুবকটি কালো শেডে ঢাকা। বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে যে ছবিটা তোলা হয়েছিল সেখানেও বাচ্চাটির ছবি এসেছে কিন্তু সে যুবকের ছবি নেই।

মুখে মুখে কথা ছড়িয়ে পড়লো। এই ঘটনাতে সারা বিল্ডিঙে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। কেউ তাকে ব্যাখ্যা করলো বাচ্চাদের ভালোবাসার জীন বলে, কেউ বললো ভ‚ত, কেউ বললো ফেরেশতা। এসব আলোচনা বহুদিন চললো। ‘ক’ থেকে কলকাতা হলো। ভাগ্য ভালো সে বিল্ডিংয়ে আমি ছাড়া আর কোনো বাঙালি ছিল না। থাকলে হয়তো ওঝা আনা হতো ভূত দূর করার জন্য। তবে সে যুবকটিকে আর কখনো দেখা যায়নি। কিন্তু আজো আমার মনে একটা বিরাট ধাঁধাঁ হয়ে আছে কে ছিল এই যুবকটি? যার ছবি ক্যামেরাতে আসলো না? আমি ভয় পেয়ে সেদিন সব ছবিগুলো কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। যদি ছবির জন্য সে যুবক ভূতটি আমার বাড়িতে এসে হানা দেয়। নাহ সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরে বেশ কয়েকদিন আমার মেয়েকে আর নিচে নামতে দেইনি।

আমি এই পথটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি। দুপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে প্রতিদিনই মুগ্ধ হই এবং প্রতিদিনই বিধাতাকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে এই সুন্দর পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন বলে। গ্রীষ্মে এই দেশটি অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। শীতে তার আরেক রূপ, সে রূপ দেখেও মানুষ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। ঘর থেকে বের হতে না হলে তুষারপাতের দৃশ্য অসাধারণ। তুষার জমে যখন গাছের ডালে ডালে ঝুলে থাকে তখন মনে হয় পুরো শহরটি ক্রিস্টাল দিয়ে সাজানো একটি শহর। ছয় মাস শীত, দুমাস বসন্ত আর বাকি চার মাস মৃদু গরম কখনো আমাদের ভাষাতে প্রচণ্ড গরম থাকে। আমাদের ভাষাতে প্রচণ্ড গরম বললাম কারণ কোনো গরমের দেশ থেকে কেউ আসলে তাদের আমাদের প্রচণ্ড গরমকে মনে হবে মৃদু গরম বা কখনো হাল্কা শীত। যাই হোক শীত, গ্রীষ্ম, বসন্ত, তুষারপাত যাই থাকুক না কেন এটাই আমার নিয়মিত চলার পথ।

গ্রীষ্মের শেষে শীত বেশ জোরেসোরে আসতে শুরু করেছে। সূর্য বেশ তাড়াতাড়ি বিদায় নিতে শুরু করেছে, দিনের আলোর দীর্ঘতা কমে এসেছে। আমি যে পথে আসা যাওয়া করি, সে পথের পাশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কবরস্থান। সুন্দর পরিষ্কার-পরিছন্ন করে সাজানো কবরস্থানটি। চারদিকে নিচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা স্থানটি। ভিতরে ফিউনারাল হাউস, সেখানে মৃত মানুষটির শেষ কার্যক্রম শেষ করা হয়। আমি যখন সে পথ দিয়ে যাই তখন কেন যেন নিজের অজান্তেই গাড়ির গতি কিছুটা কমিয়ে সে দিকে তাকাই। আর ভাবী মানুষের শেষ ঠিকানা এটাই। যার যার ধর্ম অনুযায়ী সে সে তার ঠিকানাতে যাবে।

সেদিন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। সূর্যের আলো নিভু নিভু। আমি আমার একই পথে গাড়ি চালিয়ে আসছি। সে একই জায়গাতে এসে অভ্যাসবশত গাড়ির গতি কমালাম। অবাক হয়ে দেখালাম কবরস্থানের পাশে যে বড় গাছটি তার ডালে একটা দোলনা ঝুলিয়ে একটা ছেলে মনের আনন্দে দোল খাচ্ছে। আমার গাড়ির গতি আর কম থাকলো না। আমি গাড়ি পুরপুরি থামিয়ে দিলাম, ভাবলাম বাচ্চা ছেলেটা কী করছে এখানে, ওর বাবা-মা কি জানে তাদের ছেলে কবরস্থানে দোলনা চড়ছে? চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম কই আশেপাশে তো কোনো বাড়ি ঘর নেই। আমার বুকের ভেতরটা ভয়ে ধক করে উঠলো। আমি দ্রæত গাড়ি চালিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। পরদিন সূর্যের আলো আকাশে থাকতে থাকতে আমি আবার সে পথ দিয়ে রওয়ানা হলাম। ব্যাপারটা যাচাই করার জন্য। আমি গাড়ি থামালাম একই জায়গাতে এসে। নাহ গাছটিতে তো কোনো দোলনা নেই। ছেলেটিই বা কে ছিল? যেখানে কোনো ঘর বাড়ি নেই সেখানে কোথা থেকে আসলো ছেলেটি? হাজারো চিন্তা মাথায় আসলেও তার কোনো সমাধান খুঁজে পাইনি। তবে আমি আর কখনো সে পথে গাড়ির গতি কমাইনি। অন্য গাড়ির সাথে গতি মিলিয়ে দ্রæত পেরিয়ে গেছি রাস্তাটা। বাস্তব অবাস্তব নানা ভাবনা কল্পনা, বিশ্বাস অবিশ্বাস সবকিছু মিলিয়ে আমাদের জীবন।

আমি তখন সিঙ্গাপুর স্বামীর সাথে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। কর্মক্ষেত্রে খবর এলো আমার বাবা পনের মিনিটের ম্যাসিভ হার্ট এটাকে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ছেলে আমার স্কুলেই পড়তো, মেয়েকে উঠালাম স্কুল থেকে। স্বামীকে জানালাম। আমার ছোটভাইও তখন সিঙ্গাপুর পড়াশুনা করে। সবাই মিলে কান্নাকাটি, বিষাদময় পরিবেশ বাড়িতে। কিন্তু আমরা সেদিন ঢাকা যাবার ফ্লাইট মিস করলাম। পরের দিনের ফ্লাইট ছিল অনেক রাতে। বাধ্য হয়ে পরদিনের টিকেট করলাম। গভীর রাত্রিতে ঢাকা পৌঁছলাম। পরদিন যেতে হবে কুমিল্লা। কারণ আব্বা সেখানে। আব্বা চলে গেছিলেন বৃহস্পতিবার। পরদিন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর জানাজা করে দিতে বললাম। এতদিন আব্বাকে রেখে দেবার দরকার নেই। আমি কুমিল্লা পৌঁছাবো রোববারে। আমি আমার বাবার মৃত মুখ দেখিনি। আসলে দেখতে চাইওনি। আমি চেয়েছি আমার বাবা আমার চোখে চিরদিন জীবিত হয়েই থাকুক। সেদিন ছিল আব্বার কুলখানি। আমরা সবাই কেউ কোরআন পড়ছি, কেউ দোয়া দুরুদ পড়ছি পাশাপাশি দুটো রুমে। হঠাৎ করে সারা ঘরময় আতর-লোবানের মৌ মৌ গন্ধে ঘরটা ভরে গেলো। আম্মা বললেন, তোরা বুঝতে পারছিস তোদের আব্বা এসেছেন। আমার সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। আব্বা তো চলে গেছেন, তিনি কী করে ফিরে আসবেন? তাহলে কি আমার বাবার আত্মা আমাদের দেখতে এসেছেন? তার মানে আত্মা আছে, সে আসতে পারে? অনেকে বলে মানুষ চলে যাবার পর কিছুদিন নাকি নিজের লোকদের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। কী ভয়ঙ্কর কথা! জীবিত অবস্থাতে যে মানুষটি থাকে সব চাইতে আপন। মৃত্যুর পর সে হয়ে যায় আত্মা। আত্মা শব্দ তার মাঝে কেমন একটা ভয় কাজ করে।

আব্বার কুলখানির দু-একদিন পর রাতে সব ভাই-বোনেরা আত্মীয়-স্বজনরা মিলে আব্বাকে নিয়ে নানারকম স্মৃতি রোমন্থন করছি বারান্দাতে বসে। হঠাৎ একটা গরম কুণ্ডর মতো হাওয়া একশত মাইল বেগে আমাদের সবার সামনে দিয়ে চলে গেলো। সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। কী হলো? কী ছিল এটা? আমরা সবাই উঠে ঘরের ভেতর চলে গেলাম।

আব্বার সবশেষ কর্ম শেষ করে ফিরে যাচ্ছি সিঙ্গাপুর। দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে অনবরত। সব সময় আব্বা আসতেন বিমানবন্দরে আমাকে বিদায় জানাতে। আজ আমার বাবা নেই আমার সাথে। আমি বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে এগুতে থাকলাম প্লেনের গেটের দিকে। আমি অনুভব করতে লাগলাম মিষ্টি একটা আতরের গন্ধ আমার পেছনে আসছে। আমি পিছন ফিরে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। চারপাশের লোকজন খুব দ্রæত হেঁটে চলে যাচ্ছে। আমি আবার হাঁটতে শুরু করলাম, আমি আবারো অনুভব করলাম কেউ আমাকে বিদায় জানাতে এসেছেন। আমি সেদিন ভয় পাইনি। শুধু কেঁদে যাচ্ছিলাম অনবরত। আমি প্লেনে উঠা পর্যন্ত আমার বাবা আমার সাথে ছিলেন। ভেতরে ঢুকার আগে আমি পেছন ফিরে হাত নেড়ে আমি আমার অদৃশ্য বাবাকে বিদায় জানালাম।

এটাও সিঙ্গাপুরের গল্প। আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু। রোজ কিছুক্ষণ সাইকেল চালায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য। সেদিনও সে সাইকেল চালাতে চালাতে বেশ অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিল। বেলা প্রায় শেষের দিকে। আবছা অন্ধকার নেমে এসেছে। হঠাৎ করে ও দেখতে পেলো পাশের জঙ্গল থেকে কালো স্যুট পরা একজন লোক বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, এক্সকিয়ুজ মি, আপনি কি একটা কালো ড্রেস পরা মেয়েকে এখান দিয়ে যেতে দেখেছেন? মেয়েটি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আমার বন্ধুটি ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। এক সেকেন্ডের জন্য ও পেছন ফিরে তাকালো আবার, কী জানি, ও কি খেয়াল করেনি মেয়েটিকে? নাহ, কই কেউ তো নেই। সে আবারো মুখ ঘুরিয়ে লোকটিকে বলতে যাচ্ছিলো, না সে কাউকে দেখতে পায়নি। কিন্তু কোথায় লোকটা? আধা মিনিটের মাঝে কোথায় হারিয়ে গেলো এই স্যুট পরা লোকটা? নাহ আশেপাশে কোথাও দেখা গেলো না লোকটাকে। আমার বন্ধুটি ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা অবস্থাতে দ্রæত সাইকেল চালিয়ে ঘরে ফিরে এলো। কিন্তু কে ছিল লোকটি? যে কি-না একটি মেয়ের আত্মহত্যার খবর দিয়ে নিমিষে হারিয়ে গেলো?

কথাগুলো শুনতে যদিও অবিশ্বাস্য মনে হয়। তারপরও এমন ঘটনা কিছু ঘটে যা কি-না বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। যার কোনো ব্যাখ্যা হয় না।

ঝলমলে রোদ, মিষ্টি হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। গাছের ছায়াতে বসে গল্পে মশগুল আমরা। বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো। হঠাৎ করে কালো মেঘে ছেয়ে গেলো পুরো আকাশ। দমকা হাওয়াতে দুজন ছিটকে গেলাম দুপাশে। এটা হয়তো ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছা।

ঈশ্বরের কৃপা, ঈশ্বরের ইচ্ছা, ভ‚ত-প্রেতের কাণ্ড, প্রেত-আত্মার আবির্ভাব সব ভাবনা নিয়ে জীবন কাটাচ্ছি। আসলে সবকিছুর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। ব্যাখ্যা হয় না।

 

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles