13.4 C
Toronto
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

ছাত্র রাজনীতির কী প্রয়োজন আছে?

ছাত্র রাজনীতির কী প্রয়োজন আছে?

আশির দশকে চারবার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সাল থেকে ধরলে পাঁচবার। রাকসু, বাকসু, ইউকসু, চাকসু, জাকসু, ডামেকসু ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় সুমহে এবং দেশের প্রত্যন্ত অন্চলের কলেজ সংসদে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় অনেকবার। যে কারণে মান্না, আখতার, আব্দুল মান্নান, খন্দকার ফারুক, সুলতান, মুশতাক, বাদশা, মুন্না, আমান, খোকন, আজিম, নাজিম সহ অসংখ্য বৈধ ও প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র নেতার জন্ম হয় যাঁদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে এমপি হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমি নিজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করেছি দুবার, একবার কলেজে (১৯৭৯), একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৮২)। যদিও এইসব ছাত্র নেতারা সরকার বিরোধী আন্দোলন ছাড়া ছাত্রদের কল্যাণে ঠিক কী অর্জন করেছিলেন তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে। তবুও তারা ছিলেন স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈধ ছাত্র প্রতিনিধি।

- Advertisement -

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে ভিসি প্যানেল নির্বাচিত হতো। সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত তিনজনের নাম চ্যান্সেলরের কাছে পাঠানো হতো সেখান থেকে একজনকে ভিসি মনোনয়ন দিয়ে চ্যান্সেলর তাঁর অনুমোদন পাঠিয়ে দিতেন। এসব ক্ষেত্রে জেনারেল এরশাদের সময় যেটা দেখা গেছে তিনি তিনজনের প্যানেলের সর্বনিম্ন ভোট প্রাপ্ত ব্যক্তিকে অনুমোদন দিতেন। প্রফেসর আব্দুল মান্নান ছিলেন সেরকমই একজন ব্যক্তি যিনি তিনজনের প্যানেলে সর্ব নিম্ন ভোট পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েছিলেন। কারণ হয়তো তিনি (এরশাদ) ভেবেছিলেন তিনজনের মধ্যে মান্নান সাহেব তার বেশী অনুগত থাকবেন। তবুও সেই সময় সেইসব ভিসিরা দায়বদ্ধ থাকতেন সিনেটের কাছে, জবাবদিহি করতে হতো। তারপরও সেসব নিয়ে দেশের কথিত বুদ্ধিজীবী ও নানা শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছিল কঠোর সমালোচনা। অথচ তিনজনের প্যানেলের সকলেই ছিলেন সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী চ্যান্সেলরের ক্ষমতা ছিল তিন জনের যে কাউকে তিনি ফাইনাল নিয়োগ দিতে পারতেন।

আর এখন? ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪, দীর্ঘ ৩৪ বছরে আমরা ডাকসুতে ভিপি পেয়েছি একজন নুরুল হক নুর। অর্থাৎ মাত্র একটি বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন নির্বাচন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে মাঝে মধ্যে স্কুল ছাত্রদের মধ্যে ফানি নির্বাচনের খবর পাই। বিশ্ববিদ্যালয় সুমহের ভিসি নির্বাচন আর কখনো সিনেটরদের ভোটে হয়েছে বলে জানা নাই, সরাসরি নিজ দলের অনুগত কাউকে ভিসি নিয়োগ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়। ফলে ভিসিরা দায়বদ্ধ থাকেন শুধু একজনের কাছে। এসব নিয়ে কখনো কাউকে কোন প্রশ্ন করতে দেখি না। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, ছাত্রসমাজ সকলের মুখেই তালা মারা। বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অনেক ছাত্র সংগঠনের প্রবেশাধিকার নাই। ৯০ সালের পর থেকে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের পছন্দেই চলে সবকিছু। এখন প্রশ্ন উঠেছে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালু করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেবার।

অনেকেই বলছেন, বাকী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্বাচন কেন হয় না? এখন খোদ ঢাকাতেই অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলোতে যদি নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো, তার ঢেউ নিশ্চয়ই ইউকসু তথা বুয়েটে পড়তো। সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রদের বিরোধিতার মুখে শুধুমাত্র বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালু করে কার কী লাভ হবে জানি না। তবে বদ্ধ জলাশয় আর স্রোতস্বিনী নদীর মধ্যে কী তফাত তা হয়তো কারো বুঝিয়ে বলতে হবে না। দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি আসলেই কোন অবাধ ছাত্র রাজনীতি আছে?

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles