15.7 C
Toronto
শনিবার, মে ১৮, ২০২৪

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কর্মশালায়

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কর্মশালায়
২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসে আমরা ৪জন ব্যাংকক এলাম

২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসে আমরা ৪জন ব্যাংকক এলাম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আয়োজিত ‘International Health’ শীর্ষক কর্মশালায় স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিকল্পনা শাখার আমরা ৪ জন কর্মকর্তা অংশ নিয়েছি। একজন উপপরিচালক এবং আমরা ৩জন গবেষনা কর্মকর্তা।বয়সে সবার ছোট আমি।আমরা সবাই মিলে যথেষ্ট সমাদর পেলাম।আমাদের মধ্যে একজন খুব আমুদে। তিনি শুরুতেই বলা শুরু করলেন যে থাইল্যান্ড গিয়ে হারিয়ে যাবেন।ইতোপূর্বে তিনি আরো একবার ভ্রমন করেছেন কাজেই তার সব পরিচিত তাই রহস্য করে এই কথা বলেছিলেন। তার অনেক পরিকল্পনা অনেক কেনাকাটা করবেন হয়তো সময় মিলবে না আমাদেরকে সংগ দেবার তাই একা কেনাকাটার তাগিদেই বলেছিলেন যে তিনি হারিয়ে যাবেন।

মাইদল ইউনিভার্সিটি, থাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং চিয়াংমাই আমাদের সফরসূচীতে অন্তর্ভুক্ত।ইউনিভার্সিটির প্রশিক্ষণ শেষে আমরা চিয়াংমাই গেলাম। চিয়াংমাই অপেক্ষাকৃত শীতল স্থান থাইল্যান্ডের তাই এর আবেদন সবার কাছে একটু বেশী কারন কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর মতো আবহাওয়া থাইল্যান্ডে নেই।যাহোক চিয়াংমাইতে ত্রিষ্টার হোটেলের ৪ টা রুমে ৪ জন ঠাই পেলাম।আমরা ৩জন সব সময় গল্প আর ঠাট্টা নিয়ে মশগুল থাকতাম। আমাদের সফর ৪ দিনের। প্রতিদিন বিকালে আমরা মার্কেট ঘুরতে বেরুতাম। বড় বড় মার্কেট বঙ্গ বাজারের মতো।কাপড়ের দোকান প্রচুর।

- Advertisement -

৩য় দিন দুপুরে মার্কেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় একজন সহকর্মী আমার রুমে এলেন।তার সামনে পাসপোর্টটি ব্যাগের মধ্যে রেখে দিলাম। এবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন পাসপোর্ট কেন সাথে নিচ্ছি না। বললাম হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তিনি একটু অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।একটু লজ্জা পেয়ে বললাম এসব হোটেল থেকে কিছু হারানোর সম্ভাবনা কম আর তাছাড়া পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে আর একটা পাওয়া যাবে কিন্ত্ত টাকা হারিয়ে গেলে টাকা পাওয়া যাবে না তাই টাকা সাথে নিয়েছি।

জানতে চাইলেন কোথায় রেখেছি। সামনের পকেট দেখিয়ে বললাম –এখানে।তিনি তার হাতের ব্যাগ দেখিয়ে বললেন পাসপোর্ট ডলার সব তার মধ্যে। বললাম –পাসপোর্ট না হয় ব্যাগে থাকুক কিন্ত্ত ডলারগুলো পকেটে রাখুন অন্তত এই ভেবে নিরাপদ থাকবেন যে ওগুলো নিতে গেলে আপনাকে মেরে তারপর নিতে হবে।তার কোন পরিবর্তন দেখলাম না।আমরা বেরিয়ে এলাম হোটেল থেকে।হাঁটছি তার ওই একই কথা আজ কিন্ত্ত তিনি হারিয়ে যাবেন।গেলেনও তাই। দুজন আগে থেকেই দৃশ্যের আড়ালে আর তিনিও কোথাও উধাও হয়ে গেলেন ভীড়ের মধ্যে।একাএকা ঘুরছি।হঠাৎ তিনি অনেকটা দৌড়িয়ে এলেন খুব কাছের একটা ভীড়ের মধ্য থেকে।গলার স্বর অনেক উচুতে। হাউমাউ করে বলছেন- আযম আমার সব শেষ হয়ে গেছে।অবাক হলাম তার কথা শুনে। তিনি বলছেন তার ব্যাগ কোন দোকানে ফেলে এসেছেন কিন্ত্ত এখন আর কেউ স্বীকার করছেনা।সবাই একসাথে হলাম সাথে আমাদের গাইড স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অফিসারও।থানা পুলিশ হলো কিন্ত্ত ব্যাগ উদ্ধার হলো না।

তার ব্যাংকক ফেরার ফিরতি প্লেন টিকেটটিও ছিলো ঐ ব্যাগের মধ্যে।আমার পকেট থেকে ডলার বের করে দিলাম।তার ব্যাগের মথ্যে যে ট্রাভেলার্স চেক ছিলো তা ক্যানসেল করা হলো।ব্যাংককে নতুন ট্রাভেল চেক ইস্যু করিয়ে দেয়া হলো তাকে।নতুন পাসপোর্ট পেয়ে গেলেন হাতে হাতে সেই সাথে বাংলাদেশের ফিরতি টিকেটও।অল্প কিছু ক্যাশ ডলার তার খোয়া গেল। এ যাত্রায় তিনি অল্পের মধ্যেই রেহাই পেলেন।ভাবলাম ব্যাংকক যাওয়ার পূর্বে তিনি প্রায়ই হারানোর কথা বলতেন। আমাদের কাছ থেকে তিনি হারাননি ঠিকই তবে তার ব্যাগ, ডলার, পাসপোর্ট সবই হারিয়ে গিয়েছিলো।

ইনুভিক, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles