রমজানে রোজা অবস্থায় দাঁত ও মুখের যত্নের ব্যাপারে আমরা উদাসীন থাকি। নিয়মিত দাঁত পরিস্কার না করার কারণে রমজানে অনেকেরই মুখে দুর্গন্ধ হয়। দাঁতেরও নানা রকমের সমস্যাও দেখা দেয়।
তবে জেনে রাখা ভালো যে—রমজান মাসেও আমরা দাঁত ও মাড়ির যথাযথ যত্ন নিতে পারি তবে কিছু নিয়ম মেনে যেন রোজা মাকরুহ না হয় বা ভেঙে না যায়। এমনকি প্রয়োজনে দাঁতের চিকিৎসাও নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে ডায়েবেটিক ও কার্ডিয়াক রোগীদের সারা বছর তো বটেই রোজার মাসে দাঁতের ব্যাপারে বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে।
মুখের অভ্যন্তরের ন্যাচারাল ক্লিনজার হল স্যালাইভা বা লালা। রোজার মাসে যেহেতু একটা দীর্ঘ সময় পানি ও খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা হয় সেজন্য লালা নিসৃত হয় কম। যার কারণে ‘ড্রাই মাউথ’ বা মুখ গহবর তুলনামূলকভাবে শুষ্ক থাকে এবং ন্যাচারাল ক্লিনজিং কমে যায়। তাই রোজার মাসে এ ব্যাপারে যত্নবান না হলে দাঁতের ক্ষয়রোগসহ মাড়ির ইনফেকশন ও ক্যান্ডিডিয়াসিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ স. রোজা অবস্থায় মেসওয়াক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল রোজা অবস্থায়ই দাঁত পরিষ্কার ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এর ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়া যুগ যুগ ধরে দাঁতের সুরক্ষায় মেসওয়াক একটি বিজ্ঞানসম্মত ও অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে।
রোজার মাসে ভাজা পোড়া ও তৈলাক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। সারাদিন রোজা রাখার পর এসব ভাজাপোড়া খাবার বা জাংকফুড এসিডিটির কারণ হতে পারে। এতে যেমন আপনার পাকস্থলী ও খাদ্য পরিপাকে গোলযোগ দেখা হয়, তেমন দাঁত ও মাড়িরও সমস্যা হতে পারে। জেনে নিন মুখের দুর্গন্ধ দূর করা ও দাঁত সুস্থ রাখার আরেও কিছু উপায়।
সাহরির পর দাঁত ব্রাশ করুন
রমজান মাসে সাহেরির পর থেকে রোজদাররা ইফতার পর্যন্ত, অর্থাৎ ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু খান না। ফলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা পচে যাতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি না করে সেজন্য সাহেরির পরে দাঁত ব্রাশ করেই ঘুমানো উচিত। আবার ইফতারের পরও একবার দাঁত ব্রাশ করে নেওয়া ভালো। ইফতারিতে সচারচর জিলাপী বা মিস্টি জাতীয় খাবার খাওয়া হয়। যা দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে।
পেটের সমস্যা থাকলে
রোজার সময় অ্যাসিডিটি বা গ্যাসট্রিকের সমস্যা থাকলেও অনেক সময় মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। এমন হলে পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। পেটের সমস্যা ছাড়া, নাক, কান বা গলায় প্রদাহের কারণেও দুর্গন্ধ হতে পারে, সেক্ষেত্রে নাক-কান-গলা অর্থাৎ ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
জিহ্বায় প্রদাহ হলে
অনেক সময় কারো কারো জিহ্বার উপরে খাদ্যের প্রলেপ জমে যায়। একসময় সেখানে জীবাণু হয়। এর ফলে প্রদাহ থেকে ভলাটাইল সালফার কম্পাউন্ড তৈরি হয় এবং মুখে দুর্গন্ধ হয়। এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন দু’বেলা দাঁত ব্রাশ করার আগে টাং স্ক্র্যাপার বা জিবছোলা দিয়ে জিব পরিষ্কার করুন।
পেঁয়াজ-রসুন কমই ভালো
ইফতারে ভাজাপোড়া খেলে সঙ্গে পিঁয়াজ, রসুনও বেশি খাওয়া হয়৷ ভাজাপোড়া বা পেঁয়াজ-রসুন কম খেয়ে টাটকা ফল বা সালাদ বেশি খেলে ভালো হবে। বিশেষ করে পিঁয়াজ-রসুনের কারণে মুখে যে বাড়তি দুর্গন্ধ হয় তা থেকে বাঁচতে পারবেন। পিঁয়াজ-রসুন খেলে সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ করে নিন।