
বলিউডের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আশা ভোঁসলের ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বড় বোন লতা মঙ্গেশকরের ছায়ায় থাকলেও, আশা নিজের প্রতিভা দিয়ে বলিউডে আলাদা স্থান করে নেন। কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল সংগ্রামময়।
১৬ বছর বয়সে আশা মঙ্গেশকর তার থেকে প্রায় দ্বিগুণ বয়সী লতা মঙ্গেশকরের সেক্রেটারি গণপথরাও ভোঁসলের সাথে সম্পর্কে জড়ান। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর লতা মঙ্গেশকর ছোট বোনের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আশা গণপথরাওকে বিয়ে করে সংসার শুরু করলেও, এই বিয়ে মঙ্গেশকর পরিবারের সাথে তার দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।
কিছুদিন পর আশা পুত্র হেমন্তকে জন্ম দিলে মঙ্গেশকর পরিবার তাকে ফিরে পায়। লতা মঙ্গেশকর বোনের সাথে সম্পর্ক মেরামত করেন। কিন্তু আশার স্বামী গণপথরাও চাইতেন না যে আশা তার পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখুক। এই নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিদিনের কলহ চলত। এর মধ্যেই আশা আরও দুই সন্তানের মা হন।
লতা মঙ্গেশকরের জনপ্রিয়তা ও সাফল্য গণপথরাওয়ের হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আশার কাজের অফার কমে যাওয়ায় তিনি আরও চাপ তৈরি করেন। তিনি আশাকে বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য বাধ্য করতে থাকেন এবং লতার সাথে তার দেখা করতে দিতেন না। একপর্যায়ে তিনি আশাকে বিশ্বাসঘাতকতা ও অবিশ্বাস করতে শুরু করেন।
১৯৬০ সালে গণপথরাও আশা ও তাদের তিন সন্তানকে ঘর থেকে বের করে দেন। এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়া হওয়া আশাকে নতুন করে জীবন গড়তে হয়। তিনি আবারও গান গাওয়া শুরু করেন এবং একের পর এক হিট গান দিয়ে বলিউডে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। ‘গুমরাহ’, ‘ওয়াক্ত’, ‘আদমি অউর ইনসান’, ‘হামরাজ়’-এর মতো সিনেমায় তার গান শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে।
এই সময়েই সুরকার সচিন দেব বর্মনের পুত্র রাহুল দেব বর্মনের সাথে তার স্টুডিওতে পরিচয় হয়। এই সম্পর্ক থেকেই জন্ম নেয় এক নতুন অধ্যায়, যা আশার জীবনে রূপকথার মতো পরিবর্তন নিয়ে আসে। রাহুল দেব বর্মনের সাথে তার সৃষ্টিশীল জুটি বলিউডে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দেয়।
আশা ভোঁসলের এই সংগ্রামময় জীবনই তাকে ভারতীয় সঙ্গীত জগতের এক অনন্য আইকনে পরিণত করেছে। ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট ও প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে তিনি যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন, তা আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য অনুপ্রেরণা।